স্টাফ রিপোর্টার
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে চার ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনের জন্য মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়। এ ঘটনার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বক্সগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপি সম্মেলনের জন্য একই আঙিনায় থাকা তিনটি প্রতিষ্ঠান বক্সগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়, বক্সগঞ্জ আলিম মাদ্রাসা ও বক্সগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ছিল। আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নের সম্মেলনের জন্য ভোলাইন বাজার স্কুল অ্যান্ড কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এই সম্মেলনের মাইকের আওয়াজের কারণে পাশের ভোলাইন বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানও বন্ধ ছিল। বটতলী ইউনিয়নের সম্মেলনের জন্য বটতলী এম এ মতিন উচ্চবিদ্যালয় ও বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ছিল। আর জোড্ডা ইউনিয়নের সম্মেলনের জন্য জোড্ডা বাজার পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ছিল।
জানতে চাইলে ভোলাইন বাজার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়া। সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে বিএনপির সম্মেলনের জন্য আজকের এক দিন পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ, সম্মেলন হলে তো আর পাঠদান করা সম্ভব না। তাই প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে আমার হাতে থাকা তিন দিনের ছুটি থেকে এক দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।’
বক্সগঞ্জ আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একই আঙিনায়। দলীয় সম্মেলনের কারণে আজকে তিনটি প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ছিল। তবে আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ দিয়েছি। দলীয় সম্মেলনে অনেক মাইকের আওয়াজ থাকে, এমন পরিবেশে পাঠদান সম্ভব নয়।’
জোড্ডা বাজার পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেফায়েত উল্লাহ বলেন, দলীয় অনুষ্ঠানে মাইকিংয়ের আওয়াজ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আজকে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউনুসের দাবি, কোনো প্রতিষ্ঠানপ্রধানই তাঁর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেননি। তিনি বলেন, ‘আজই আমি জানতে পেরেছি বিএনপির সম্মেলনের কারণে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পরে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা সমস্যার কথা বলেছেন। এরপর তাঁদের বলেছি প্রতিষ্ঠানপ্রধানের হাতে থাকা তিন দিনের বিশেষ ছুটি থেকে এক দিনের ছুটি আজকে দেখানোর জন্য। এ ছাড়া এ বিষয়ে আর কিছু জানি না আমি।’
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, এভাবে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বিএনপির লোকজন চাইলে অন্য কোথাও তাঁদের সম্মেলন করতে পারত। এই সম্মেলনের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে বিএনপি দলীয় স্থানীয় সাবেক সাংসদ আব্দুল গফুর ভূঁইয়ার মুঠোফোনে কল করা হলে সজীব আহমদ নামে এক ছাত্রদল নেতা কল রিসিভ করেন। এ সময় তিনি বলেন, আব্দুল গফুর ভূঁইয়া সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনি এখন কথা বলতে পারবেন না।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দলীয় নির্দেশনা হচ্ছে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রেখে দলীয় সম্মেলন বা কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না। আমরা নাঙ্গলকোটে আছি। এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে কি না সম্মেলনের কারণে, এটা আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’