
নিউজ ডেস্ক।।
ইতালির রোমে একটি গির্জার পেছন থেকে সুমন মিয়া (২৫) নামে এক বাংলাদেশি যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ওই যুবক আত্মহত্যা করেছেন বলে জানানো হয়।
জানা গেছে, সুমন মিয়ার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার হোমনার চম্পক নগরে। তার বাবার নাম বারিক।
রোমের তুসকোলানা জুলিও আগ্রিকোলা পার্কের একটি গির্জার পেছনে বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে এক পথচারী তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ও দূতাবাসের ধারণা গত মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে তিনি আত্মহত্যা করেন।
এ ঘটনায় কুমিল্লার মুরাদ মহিবুর নামে এক ইতালি প্রবাসী ফেসবুকে লিখেছেন, সুমন মিয়া সাত মাস আগে ইতালির রোম শহরে এসেছেন। মাত্র ২৫ বছরের ওই যুবক ইতালিতে সোনার হরিণ ধরতে এসেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সাত মাস বেকার থেকে কোনো কাজ না পেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছেন। এমন নির্মম মৃত্যু কারোই কাম্য নয়।
তিনি আরও লিখেছেন, ইতালিতে নতুন করে যারা আসবেন, তারা অবশ্যই বৈধপন্থায় স্পন্সর ভিসায় আসবেন। কৃষি ভিসায় এসে এখানে তেমন কোনো কাজ নেই। তাই আপনজন না থাকলে না আসাটাই ভালো।
রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের সচিব (শ্রম ও কল্যাণ) আসিফ আনাম সিদ্দিকী জানান, আত্মহত্যার ঘটনাটি তারা জেনেছেন। এ ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যার সত্যতা পেয়েছে। কিন্তু পুলিশের ক্লিয়ারেন্স না পাওয়া পর্যন্ত দূতাবাস কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তবে দূতাবাস ইতোমধ্যে ওই যুবকের পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী দেশে যোগাযোগ করেছে। পুলিশের তদন্ত শেষ হলে দূতাবাস পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এদিকে তার মৃত্যুতে ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। এ নিয়ে কুমিল্লার মুরাদ মহিবুর নামে ইতালি প্রবাসী একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তা হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘হায় রে ইউরোপ! স্বপ্নের ইউরোপ! স্বপ্নের ইতালি! এক বুক স্বপ্ন নিয়ে কুমিল্লার সুমন মিয়া সাত মাস আগে ইতালির রোম শহরে আসেন। টগবগে এই যুবক এসেছেন ইউরোপের উন্নত দেশ ইতালিতে সোনার হরিণ ধরতে। নিজকে এবং নিজ পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করতে। স্বপ্ন আর বাস্তব বড়ই কঠিন। দীর্ঘ সাত মাস বেকার থেকে কোনো কাজ না পেয়ে এক নিষ্ঠুর আত্মসমর্পণ। গলায় ফাঁস দিয়ে তরতাজা জীবনটাকে শেষ করে দিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। আমি তার এমন মৃত্যুতে মর্মাহত এবং শোকাহত। এমন নির্মম মৃত্যু কারোই কাম্য নয়। আশা করি নতুন যারা আসবেন কিংবা আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলি যদি কেউ আসতে চান অবশ্যই লিগ্যাল ওয়েতে স্পন্সর ভিসায় আসবেন। ’
তিনি আরও লেখেন, ‘কৃষি ভিসায় এসে এখানে তেমন কোনো কাজ নেই। তাই একান্ত কোনো নিজস্ব আপনজন না থাকলে আমি বলি না আসাটাই ভালো। কারণ এগ্রিকালচার ভিসায় এসে কোনো কাজ পাওয়া যায় না। অনেক কষ্ট করতে হয়। এর মাঝে বাসা ভাড়া এবং নিজের ব্যক্তিগত খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৪০০ ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। নতুন এসে এই টাকা ইনকাম করাটা কষ্টদায়ক। এটাই চিরন্তন সত্য। কাজ না পাওয়ার কারণ। প্রথমত ভাষাজনিত সমস্যা, দ্বিতীয়ত ডকুমেন্ট সমস্যা। তাই অবশ্যই এগ্রিকালচার ভিসায় না এসে চেষ্টা করবেন লিগ্যাল ওয়েতে স্পন্সর ভিসায় আসতে। লিগ্যাল ওয়েতে এলে অন্ততপক্ষে একটা কাজ এবং একটা ডকুমেন্টের আশা করা যায়। যা থাকলে অনেকটা হতাশামুক্ত হওয়া যায়। একটা কাজ পাওয়ার আশা করা যায়। ’