নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুমিল্লায় তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন ঘিরে স্থানীয় দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এতে সংঘাত- সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসী। এরই মধ্যে মাহফিল বন্ধে মসজিদ কমিটি জেলা প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আগামী শুক্রবার (১১ এপ্রিল) জেলার আদর্শ সদর উপজেলার উত্তর দূর্গাপুর ইউনিয়নের গুণানন্দী মধ্যমপাড়া মদিনা মসজিদ প্রাঙ্গনে স্থানীয় যুব সমাজ ও প্রবাসীদের ব্যানারে এ মাহফিলের আয়োজনের প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে মঙ্গলবার পুলিশের পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে ওই স্থানে মাহফিলের অনুমতি না দিতে মতামত জানানো হয়েছে। সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুহিনুল ইসলাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি গুণানন্দী মধ্যমপাড়া মদিনা মসজিদ কমিটির উদ্যোগে ৪০তম বার্ষিক তাফসিরুল কোরআন মাহফিল ও কোরআন প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন। কিন্তু মাত্র দেড়মাসের ব্যবধানে একই স্থানে অপর একটি গ্রুপের তাফসিরুল মাহফিলের ঘোষণা দেয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ নিয়ে প্রতিপক্ষের গ্রুপের হাতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন মসজিদের ইমাম। তাই সংঘাত-সংঘর্ষ এড়াতে মাহফিল বন্ধ রাখার জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
গত সোমবার (৭ এপ্রিল ) মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন ও সাধারন সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন মাসুদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে এলাকার শান্তি শৃংখলা রক্ষায় মাহফিল বন্ধ করতে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন। এতে অভিযোগ করা হয় ‘ মসজিদের মুসুল্লী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিগত সময়ের ধারাবাহিকতায় মসজিদের ৪০তম বার্ষিক তাফসিরুল কোরআন মাহফিল ও কোরআন প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তুু স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ও ইউপি সদস্য নাজমুল হাসানের নির্দেশে আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল ইসলাম খোকন, আবদুল জব্বার, ইসমাঈল হোসেন, মুকুল,সাদেক মাষ্টারসহ ২০-২৫ জন লোক গত ২১ শে মার্চ মসজিদে গিয়ে ইমামকে পুনরায় মাহফিলের ঘোষণা দেওয়ার জন্য চাপ দেন।
মসজিদের ইমাম মাওলানা শরিফুল ইসলাম রেজা বলেন, আমি কমিটির অনুমতিবিহীন আবারো একই স্থানে মাহফিলের ঘোষণা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হেনস্তা করেন। পরবর্তীতে তারা গত ৪ এপ্রিল জুমার নামাজের পর আগামী ১১ এপ্রিল শুক্রবার মাহফিল করবেন বলে ঘোষনা দেন। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত লিফলেটে ইঞ্জিনিয়ার মো. রমিজ উদ্দিনকে মাহফিলের সভাপতি উল্লেখ করা হয়েছে এবং দক্ষিন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক রেজাউল কাইয়ুমকে প্রধান অতিথি ও হাফেজ মাওলানা সাইদুল ইসলাম আসাদকে প্রধান বক্তা উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে ইঞ্জিনিয়ার মো. রমিজ উদ্দিন মাহফিল নিয়ে বিভক্তি দেখা দেওয়ায় উক্ত মাহফিলের সভাপতিত্ব করতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন। ইউপি সদস্য নাজমুল হাসানের মোবাইল বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দক্ষিন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক রেজাউল কাইয়ুম বলেন, একই স্থানে কিছু দিন আগেও মাহফিল হয়েছে। এখন যারা আয়োজন করেছেন এদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগ করেন, কিছু বিএনপির সমর্থকও আছেন। তবে মাহফিল হওয়ার বিষয়টি এখন প্রশাসনের নির্দেশের অপেক্ষায় আছে।
আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা জানান, মাহফিল বন্ধ রাখা নিয়ে স্থানীয় মসজিদ কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে, প্রতিবেদন হাতে পেলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে। রাতে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুহিনুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়ভাবে তদন্তে জানা গেছে সেখানে মাহফিল নিয়ে দুটি গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে আছে। তাই মাহফিলের অনুমতি দেয়া হলে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন হওয়ার শংকা আছে। তাই মাহফিল অনুষ্ঠানের অনুমতি না দিতে মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page