বি এম ফয়সাল, কুবি।।
‘বৃক্ষের পদতলে জীর্ণপত্রের অশেষ উৎসব, বাতাসে কীসের গন্ধ, কাদের সঙ্গীত/ একদিন ঘুম ভেঙে দেখি, এসে গেছে শীত।’ কবির পঙক্তির মতোই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) লাল মৃত্তিকা জানা দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীতের আবহে নির্মল হাওয়া বইতে শুরু করেছে চারদিকে। হেমন্তের সোনালি বিকেল পেরিয়ে ক্যাম্পাস এখন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে। সকালের আলো ফোঁটার আগেই হিমেল বাতাসে দোলে পত্রকুঞ্জ, শিশিরভেজা ঘাসে জমে থাকে মুক্তোর মতো জলবিন্দু। ক্লাসের পথে হাঁটা শিক্ষার্থীদের মুখে দেখা যায় গরম চায়ের কাপে ঠোঁট ছোঁয়ার উষ্ণতা, আর আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে ভেসে আসে নতুন ঋতুর ঘ্রাণ।
বাংলা বর্ষপঞ্জি বলছে, এখন কার্তিক মাসের শেষাংশ। পৌষ-মাঘ ছুই ছুই। তবুও প্রকৃতির ভেতর শুরু হয়েছে শীতের আনাগোনা। গাছের পাতা ঝড়ে পড়ছে নিঃশব্দে।শীতল নিস্তব্ধতা মিশছে বাতাসে। হেমন্তের প্রৌঢ়ত্ব পেরিয়ে শীতের আবির্ভাব যেন এক মায়াবী রূপান্তর। যেখানে রিক্ততার মধ্যেও রয়েছে ভিন্ন সৌন্দর্য। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঋতুবদলের দিনে প্রকৃতি জানান দিচ্ছে—শীত এসে গেছে।
ঋতুচক্রে বদলায় প্রকৃতির রূপ। কিন্তু লাল সবুজের এ ক্যাম্পাসে শীতের আগমন যেন সব ঋতুর থেকে ভিন্নতর। অন্য পাঁচ ঋতুর উচ্ছ্বাসের ভিড়ে শীত আসে নিঃশব্দে তবে তার উপস্থিতি গভীর, নিতান্ত অনুভবের। রুক্ষতা, তিক্ততা আর হালকা বিষাদের প্রতিমূর্তি হয়ে নেমে আসে শীতকাল।
ভোরের আলো ফু়ঁটতেই শীতের কনকনে ঠাণ্ডা আর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পুরো ক্যাম্পাস। কৃষ্ণচূড়া রোড, সেন্ট্রাল মাঠ কিংবা মুক্তমঞ্চে পাওয়া যায় এক অন্যরকম অনুভূতির ছোঁয়া। সকালে পাখির কিচিরমিচির শব্দে চারপাশ প্রাণবন্ত। শিশির ভেজা সবুজ ঘাস, নির্মলতায় ভরপুর। প্রকৃতির অনুপম প্রতিমা ক্যাম্পাস জুড়ে। পাখিদের গানে গানে চারপাশ মুখর।
সম্প্রতি এক সকালে ক্যাম্পাসের এই সৌন্দর্য উপভোগ করার স্বাদ জাগে। তখন আমার মতো আরও অনেকের দেখা মেলে। কথা হয় তাদের সাথে। তাদেরই একজন নৃবিজ্ঞান বিভাগের নূর আলম। কথার ছলে নূর বলেন, “যখন ক্যাম্পাসে ভোড়ে হাঁটতে আসি তখন মনে মনে ভাবি— ভোরের ক্যাম্পাস এত সুন্দর! কুয়াশাচ্ছান্ন শীতের সকালে ক্যাম্পাসের নীল বাস, মুক্তমঞ্চ, শহিদ মিনার,কেন্দ্রীয় মাঠ উপভোগ্যকর। সকালে যারা হাঁটতে বের হয় না, তারা কখনো তা উপলব্ধি করতে পারবে না।”
আরেক শিক্ষার্থী মেহরাব হাসান নাদেল বলেন, “ক্যাম্পাসে এসেছি ছয় মাসের মতো হয়েছে। কুমিল্লা আসার আগেই শুনতাম এখানের শীতের সকাল নাকি সুন্দর। আজকে ফজরের নামাজ পড়ে সকালে বের হলাম দেখতে। সুন্দর চারদিক এত সুন্দর, সবকিছু অবাক করার মতো।”
শীতের স্মৃতি রোমন্থন করে পরিসংখ্যান বিভাগের একজন ছাত্রী বলেন, “আমার পড়াশোনা প্রায় শেষের পথে। এই ক্যাম্পাসে এটাই হয়তো আমার শেষ শীতকাল। যেমন শীত ধীরে ধীরে বিদায় নেয়, তেমনি আমিও বিদায় নেব এই প্রিয় প্রাঙ্গণ থেকে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীত, সকালের কুয়াশা আর এই মায়ায় ভরপুর প্রকৃতি আমি সত্যিই মিস করবো।”











