কুমিল্লার নিখোঁজ স্থপতি ইমতিয়াজের লাশ ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে মুন্সিগঞ্জে দাফন

নিউজ ডেস্ক।।
মুন্সিগঞ্জে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা ওই লাশটিই নিখোঁজ স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার (৪৭)। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কবর থেকে লাশ উত্তোলনের পর তাঁকে শনাক্ত করেন তাঁর স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার ও তাঁর স্বজনেরা।

আজ বেলা একটার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে মুন্সিগঞ্জ পৌরসভা কবরস্থান থেকে লাশটি উত্তোলন করার কথা থাকলেও বৃষ্টি ও আইনগত প্রক্রিয়া শেষে বেলা তিনটার দিকে লাশ উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। পরে পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুস সামাদ উপস্থিতিতে ইমতিয়াজের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ঢাকার তেজগাঁও থানার ডমিসাইল এলাকায় স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়ে ও তাঁর মাকে নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে থাকতেন ইমতিয়াজ। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পরমতলা এলাকায়। তিনি ঢাকায় থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির নকশার কাজ করতেন। ৭ মার্চ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন ইমতিয়াজ। পরের দিন তাঁর স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার ঢাকার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

৮ মার্চ সন্ধ্যায় সিরাজদিখানের মরিচের সেতু এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর দিন আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশটি আঞ্জুমান মুফিদুলে হস্তান্তর করে পুলিশ। ৯ মার্চ বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি মুন্সিগঞ্জ পৌরসভা কবরস্থানে দাফন করা হয়। লাশের গায়ে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় সিরাজদিখান থানায় অজ্ঞাতব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়।

ইমতিয়াজের নিখোঁজের বিষয়ে গত শুক্রবার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সংবাদ প্রচার করা হয়। সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার হয়। সেখানে এক ব্যক্তি কমেন্ট করে জানান, সংবাদে প্রচার করা ব্যক্তির বর্ণনা ও চেহারার একটি লাশ সিরাজদিখানে পাওয়া গেছে। পরের দিন শনিবার সিরাজদিখান থানায় যান ইমতিয়াজের স্বজনেরা। সুরতহাল করার সময় তোলা সেই লাশের ছবি, পরনের জামার সঙ্গে নিখোঁজ ইমতিয়াজের মিল ছিল। তখন থেকে স্বজনেরা দাবি আসছিলেন, লাশটি ইমতিয়াজেরই।

ইমতিয়াজের স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার বলেন, ‘যেদিন আমরা লাশের ছবিটি দেখেছিলাম, সেদিনই বলেছিলাম এটি ইমতিয়াজের লাশ। আজকে লাশ উত্তোলনের পরেও দেখেছি এটি ইমতিয়াজের লাশ। আমরা লাশ নিয়ে মুরাদনগরের গ্রামের বাড়ি পরমতলায় যাব। সেখানে কবর খননের কাজ চলছে। ইমতিয়াজকে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর বাবার পাশে দাফন করা হবে।’

স্বামীর মৃত্যুতে তিন সন্তানকে নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়তে হলো জানিয়ে ফাহমিদা বলেন, ‘আমার জানামতে আমার স্বামীর কোনো শত্রু ছিল না। তার পরেও তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। এখন জানতে পেলাম আমাদের অগোচরে এত বড় শত্রু আছে। আমি বাচ্চাদেরকে নিয়ে বাড়িতে একা থাকব, বাচ্চারা স্কুলে যাবে। কে জানে কখন কী ঘটে যায়। আমাদের এত বড় শত্রু কে আমি দেখতে চাই। প্রশাসন, দেশের মানুষ, প্রধানমন্ত্রী সবার কাছে আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

লাশ হস্তান্তরে সময় উপস্থিত ছিলেন নিহত ইমতিয়াজের শ্যালক মনিরুল ইসলাম, চাচাতো বোন খালেদা মেজবা, চাচাতো বোনের স্বামী মেজবা উদ্দিনসহ কয়েকজন। ইমতিয়াজের ভাগনি মুনমুন হোসেন বলেন, তাঁর মামাকে জীবিত ফিরে পেতে তাঁরা প্রায় ১১ দিন কলাবাগান থানা, তেজগাঁও থানা, ডিবি পুলিশ, র‍্যাব—সব জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেছেন। এর মধ্যে তিন দিন আগে লাশের সন্ধান পান। থানা, আদালত, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘুরে আদালতের মাধ্যমে আজ লাশ তোলার অনুমতি পাওয়া যায়।

এদিকে, এ ঘটনায় হত্যা মামলাটি মুন্সিগঞ্জ ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডিবি পুলিশও ইতিমধ্যে তদন্তের কাজ শুরু করেছে বলে জানান মুন্সিগঞ্জ ডিবির পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘পুলিশ সুপারের নির্দেশে গুরুত্বসহকারে আমরা মামলাটি দেখছি। সব বিষয় নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। আশা করি দ্রুতই এ মামলার জট খুলবে। দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  

You cannot copy content of this page