প্রয়োজন বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা বৃদ্ধি

লেখকঃ আব্দুর রহিম
শিক্ষা অর্জন হলো এমন একটি বিষয়, যা মানুষকে জ্ঞান ও বুদ্ধির পাশাপাশি সামগ্রিক বিকাশের সহায়তা করে। আর কারিগরি জ্ঞান হলো মানুষকে জ্ঞান বুদ্ধির পাশাপাশি সামগ্রিক ভাবে সমৃদ্ধি করে।শিক্ষা এবং কারিগরি জ্ঞান জগতে জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থার ক্রমাগত বিকাশ এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজ, রাষ্ট্র এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি, সুখ এবং সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা করে।

টেকনিক্যাল বা কারিগরি শব্দটির অর্থ হল, ব্যবহারিক শিল্প প্রণালীর দক্ষতা সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা অর্জন। যে বিশেষ প্রশিক্ষণ বা শিক্ষার দ্বারা এই প্রণালীগত দক্ষতা বিকাশ ঘটানো হয়, তাকে বলে কারিগরি শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ। অর্থাৎ যে শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের দ্বারা শিক্ষার্থীকে ভাষা,শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি ও কলকারখানার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য সুশৃঙ্খল নিয়মমাফিক ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে যেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেই শিক্ষাকে বলে কারিগরি শিক্ষা।
এই শিক্ষাটা মুলত মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো আলাদা একটা পেশাদার প্রশিক্ষণ বা কোর্স।

কারিগরি শিক্ষার উদ্দেশ্যেঃ

কারিগরি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল বর্তমানের মানব সম্পদকে উৎপাদন মুখী দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তর করে ভবিষ্যতের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে অবদানের জন্য পরিপূর্ণ ভাবে প্রস্তুত করা। জাতীয় শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে “Education should be developed as to increase productivity”। অর্থাৎ উৎপাদনশীলতা বাড়ানাের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে।
যার জন্য একান্তই প্রয়োজন বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষা অর্জন।

বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা কেন প্রয়োজনঃ

বর্তমানের একবিংশ শতকের বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমুখী আর কারিগরি শিক্ষার আলোকে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার মূল প্রয়াস হওয়া উচিত। যাতে করে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে ব্যবহারিক কর্মযজ্ঞের মধ্যে দিয়ে উৎপাদনমুখী মানব সম্পদ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

কারিগরি শিক্ষা অর্জনের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন উপায়ে লাভবান হতে সক্ষম হবে যেমন –

উৎপাদনমুখীঃ বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের একটি উৎপাদনমুখী কাজের সাথে যুক্ত থেকে বর্তমান বিশ্বে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারবে।

আত্মনির্ভরশীলতাঃ কারিগরি শিক্ষা একজন মানুষকে আত্মনির্ভরশীলতা হতে সাহায্য করে। এই শিক্ষার ফলে শিক্ষার্থী হয় কোন চাকরির সুযোগ পায় নয়তো স্বনিযুক্ত কাজে যুক্ত হতে পারে।

জাতীয় আয় অবদানঃ বৃত্তিমুলক ও কারিগরি শিক্ষা যেহেতু উৎপাদনভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা, তাই এটি জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে অবদান ও দেশের সার্বিক উন্নয়নে সহায়তা করে।

বিশেষজ্ঞতা সৃষ্টিঃ এই শিক্ষার অপর একটি উদ্দেশ্য হল বিশেষজ্ঞ সৃষ্টি করা। এই শিক্ষার অর্জিত জ্ঞান বা দক্ষতা, শিক্ষার্থীকে তার ভবিষ্যৎ জীবনের নির্দিষ্ট বিশেষ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে সহায়তা করে।

অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদানঃ বৃত্তিমুখী ও কারিগরি জ্ঞান ভবিষ্যৎ জীবনে জীবিকা অর্জনে সহায়তা করে, যা তাকে তার ব্যক্তিগত জীবনের সার্বিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদানে নিশ্চয়তা প্রদান করে থাকে।

শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, প্রবণতা ও বিশেষ ক্ষমতা অগ্রাধিকার দেওয়াঃ এই শিক্ষার অপর উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর বিশেষ ক্ষমতা, আগ্রহ, চাহিদা বা প্রবণতাকে কাজে লাগানো। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বৃত্তির মধ্যে থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিশেষ শিক্ষার বিষয়টি নির্বাচন করতে পারে।

শ্রমের প্রতি মর্যাদাঃ এই শিক্ষা ব্যবস্থা যেহেতু কায়িক শ্রম ভিত্তিক, শিক্ষার্থীরা তা শ্রমের মাধ্যমে অর্জন করে থাকে, সেহেতু এর মাধ্যমে তাদের শ্রমের প্রতি এক মর্যাদাবোধ সৃষ্টি হয়।

জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভঃ কারিগরি শিক্ষার অর্জনের মাধ্যেমে ক্যারিয়ার জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের উপায় তৈরি হয়। ব্যতিক্রমী শিশুদের জন্য এই ধরনের বৃত্তিমূলক শিক্ষা খুবই প্রয়োজন যার ফলে তারা কিছু উৎপাদন মূলক কাজে নিজেদের নিয়োগ করতে পারে এবং অর্থ উপার্জনে সক্ষম ও স্বাবলম্বী হতে সাহায্যে করে।

শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিঃ পুথিগত নীরস শিক্ষার একঘেয়েমি থেকে দূর করে ব্যবহারিক ও হাতে কলমে শিক্ষা,এই শতকে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে ভুমিকা রাখে। এই শিক্ষায় তাদের উৎসাহ বৃদ্ধি একপ্রকার ইতিবাচক মনােভাব গড়ে তােলে।

নিজস্ব শ্রমের প্রতি উৎসাহঃ বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের শ্রমের মর্যাদা দিতে শেখায়।শ্রমে নৈতিকতা গঠনে সাহায্য করে।

নতুন নতুন কর্মের সুযোগ সৃষ্টিঃ বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কর্মের দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে চাকরি বা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।

সর্বোপরি বলা যায় যে,আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যেন ব্যবহারিক জীবনে কাজে লাগতে পারে, সেজন্য কারিগরি শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে। কারণ এর মাধ্যমে অর্জিত সকল জ্ঞানই ব্যবহারিক ভাবে কাজে লাগবে। শুধু প্রশিক্ষিত জনশক্তি রপ্তানির মধ্যমেই বেকারত্বের হার শুন্যের কোঠায় নামানো সম্ভব। আর দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগও বেড়ে যাবে।

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page