০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
শেখ হাসিনার ফাঁসির মিষ্টি বিতরণ নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে ছাত্রদল কর্মী নিহত রাজধানীর পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিবকে গুলি করে হত্যা কুমিল্লায় বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ কুমিল্লার দেবিদ্বারে যুবলীগ নেতা বিল্লাল গ্রেপ্তার শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে কুমিল্লায় জামায়াত কর্মীর গাড়িতে আগুন কুমিল্লায় বিএনপির দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে : খন্দকার মোশাররফ শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে “হাসনাত আবদুল্লার” এলাকায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই -ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্রসহ যুবক আটক

সৌদি আরবে কুমিল্লার যুবক খুন; ১৫ কোটি টাকা পাচ্ছেন স্ত্রী

  • তারিখ : ১০:১৪:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 50

নিউজ ডেস্ক।।
পরিবারের সচ্ছলতা আনতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন কুমিল্লার সাগর পাটোয়ারী। বিদেশ যাওয়ার এক বছরের মাথায় বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন। এরপর মামলা হলে আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তবে অর্থের বিনিময়ে এ রায় প্রত্যাহারের দাবিতে আপস করেন তাঁর ওয়ারিশরা। এ জন্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা পাচ্ছে পরিবারটি।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে পরিবারের সচ্ছলতার জন্য সৌদি আরব যান কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের নাগিরপাড় এলাকার বাসিন্দা সাগর পাটোয়ারী। পরের বছর জুন মাসে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের একটি পেট্রলপাম্পে বাগ্‌বিতণ্ডায় সাগর পাটোয়ারীকে গুলি হত্যা করেন এক সৌদি নাগরিক।

২০২১ সালের ২৪ মার্চ বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আদালত অভিযুক্ত উমর আল শাম্মেরির বিরুদ্ধে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। তবে, অভিযুক্তের বাবা রক্তপণ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদণ্ডের দাবি প্রত্যাহারের আপস প্রস্তাব করেন। দূতাবাসের মধ্যস্থতায় ৫১ লাখ রিয়ালের আপস প্রস্তাবে নিহত সাগর পাটোয়ারীর ওয়ারিশরা সম্মত হন। আদালত অভিযুক্তের পরিবারের কাছ থেকে রক্তপণের চেক গ্রহণ করে মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেন। ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর দূতাবাসের ব্যাংক হিসাবে ৫১ লাখ রিয়াল জমা হয়।

গত বুধবার (২০ ডিসেম্বর) রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএমের (বার) মধ্যস্থতায় সৌদি আরবে নিহত দুই বাংলাদেশির পরিবার প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন।

এ অর্থ নিহতের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবে, তবে জীবনের বিনিময়ের অর্থ পেয়ে আক্ষেপ থেকে গেছে নিহতের স্ত্রী আয়েশা আক্তারের।

আয়েশা আক্তার বলেন, ‘পরিবারের সচ্ছলতার জন্য তিনি বিদেশ গিয়েছেন। কিন্তু এক বছরের মাথায় ওই দেশে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। তখন আমার আট বছরের ছেলে রবিন পাটোয়ারী ও ছয় বছরের ছেলে রায়হান পাটোয়ারীকে অনেক কষ্টে দিন পার করেছি। কষ্ট করে সন্তানদের মানুষ করেছি। সৌদি থাকা আমার দেবরের সহযোগিতায় স্বামীর হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেছিলাম। অবশেষে ওই মামলায় আসামি শনাক্ত হয় এবং বিচার শেষে রায় পেয়েছি। ওই রায়ে মৃত্যুর বদলে মৃত্যু চেয়েছিলাম, পরে স্বজনদের পরামর্শে ক্ষতিপূরণ নিয়ে সমঝোতা করি।’

আয়েশা আক্তার আরও বলেন, ‘টাকার চেয়ে ওনি বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতাম। আমি সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী স্যারসহ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

নিহত সাগর পাটোয়ারীর স্বজন নোমান পাটোয়ারী বলেন, ‘হত্যা মামলায় সৌদি আরবে কোনো বাংলাদেশির অনুকূলে সর্বোচ্চ ব্লাডমানি আদায় হওয়ায় আমরা খুশি। তবে প্রাপ্ত অর্থ যাতে সহজে পরিবারের হাতে পৌঁছে সে ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’

এদিকে স্থানীয় ১৩ নম্বর আদ্রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান লিমন বলেন, ‘পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সাগর পাটোয়ারী নিহত হওয়ার পর পরিবারটি অনেক কষ্টে দিনযাপন করেছে। এখন সরকার ও সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতায় প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণে তাদের কষ্ট লাগব হবে। আমরা আমাদের ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যা যা করার প্রয়োজন সব সহযোগিতা করব।’

এ বিষয়ে কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় কুমিল্লার জনশক্তি কর্মকর্তা (জরিপ) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘নিহতের বিষয়ে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি শুনেছি। মন্ত্রণালয় থেকে কাগজপত্র হাতে পেলে অর্থ প্রাপ্তিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

error: Content is protected !!

সৌদি আরবে কুমিল্লার যুবক খুন; ১৫ কোটি টাকা পাচ্ছেন স্ত্রী

তারিখ : ১০:১৪:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

নিউজ ডেস্ক।।
পরিবারের সচ্ছলতা আনতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন কুমিল্লার সাগর পাটোয়ারী। বিদেশ যাওয়ার এক বছরের মাথায় বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন। এরপর মামলা হলে আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তবে অর্থের বিনিময়ে এ রায় প্রত্যাহারের দাবিতে আপস করেন তাঁর ওয়ারিশরা। এ জন্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা পাচ্ছে পরিবারটি।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে পরিবারের সচ্ছলতার জন্য সৌদি আরব যান কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের নাগিরপাড় এলাকার বাসিন্দা সাগর পাটোয়ারী। পরের বছর জুন মাসে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের একটি পেট্রলপাম্পে বাগ্‌বিতণ্ডায় সাগর পাটোয়ারীকে গুলি হত্যা করেন এক সৌদি নাগরিক।

২০২১ সালের ২৪ মার্চ বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আদালত অভিযুক্ত উমর আল শাম্মেরির বিরুদ্ধে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। তবে, অভিযুক্তের বাবা রক্তপণ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদণ্ডের দাবি প্রত্যাহারের আপস প্রস্তাব করেন। দূতাবাসের মধ্যস্থতায় ৫১ লাখ রিয়ালের আপস প্রস্তাবে নিহত সাগর পাটোয়ারীর ওয়ারিশরা সম্মত হন। আদালত অভিযুক্তের পরিবারের কাছ থেকে রক্তপণের চেক গ্রহণ করে মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেন। ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর দূতাবাসের ব্যাংক হিসাবে ৫১ লাখ রিয়াল জমা হয়।

গত বুধবার (২০ ডিসেম্বর) রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএমের (বার) মধ্যস্থতায় সৌদি আরবে নিহত দুই বাংলাদেশির পরিবার প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন।

এ অর্থ নিহতের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবে, তবে জীবনের বিনিময়ের অর্থ পেয়ে আক্ষেপ থেকে গেছে নিহতের স্ত্রী আয়েশা আক্তারের।

আয়েশা আক্তার বলেন, ‘পরিবারের সচ্ছলতার জন্য তিনি বিদেশ গিয়েছেন। কিন্তু এক বছরের মাথায় ওই দেশে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। তখন আমার আট বছরের ছেলে রবিন পাটোয়ারী ও ছয় বছরের ছেলে রায়হান পাটোয়ারীকে অনেক কষ্টে দিন পার করেছি। কষ্ট করে সন্তানদের মানুষ করেছি। সৌদি থাকা আমার দেবরের সহযোগিতায় স্বামীর হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেছিলাম। অবশেষে ওই মামলায় আসামি শনাক্ত হয় এবং বিচার শেষে রায় পেয়েছি। ওই রায়ে মৃত্যুর বদলে মৃত্যু চেয়েছিলাম, পরে স্বজনদের পরামর্শে ক্ষতিপূরণ নিয়ে সমঝোতা করি।’

আয়েশা আক্তার আরও বলেন, ‘টাকার চেয়ে ওনি বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতাম। আমি সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী স্যারসহ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

নিহত সাগর পাটোয়ারীর স্বজন নোমান পাটোয়ারী বলেন, ‘হত্যা মামলায় সৌদি আরবে কোনো বাংলাদেশির অনুকূলে সর্বোচ্চ ব্লাডমানি আদায় হওয়ায় আমরা খুশি। তবে প্রাপ্ত অর্থ যাতে সহজে পরিবারের হাতে পৌঁছে সে ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’

এদিকে স্থানীয় ১৩ নম্বর আদ্রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান লিমন বলেন, ‘পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সাগর পাটোয়ারী নিহত হওয়ার পর পরিবারটি অনেক কষ্টে দিনযাপন করেছে। এখন সরকার ও সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতায় প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণে তাদের কষ্ট লাগব হবে। আমরা আমাদের ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যা যা করার প্রয়োজন সব সহযোগিতা করব।’

এ বিষয়ে কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় কুমিল্লার জনশক্তি কর্মকর্তা (জরিপ) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘নিহতের বিষয়ে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি শুনেছি। মন্ত্রণালয় থেকে কাগজপত্র হাতে পেলে অর্থ প্রাপ্তিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’