২০২১ শিক্ষাবর্ষে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি ও টিউশন ফি বাড়ানো হচ্ছে না। করোনাকালীন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেশন ও ভর্তি ফিতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে তাদের এমপিও বাতিল করা হবে। ২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য তৈরি করা ভর্তি নীতিমালায় তা যুক্ত করা হচ্ছে। আগামী ৭ ডিসেম্বর এ নীতিমালা জারি করা হতে পারে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, করোনার কারণে এবার স্কুলগুলোতে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির ভর্তি নীতিমালায় বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। লটারির স্বচ্ছতায় বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ভর্তিতে যে কোনো ধরনের অনিয়ম এড়াতে তিন স্তরের কমিটি কাজ করবে। এছাড়া স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধি আলাদাভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া দেখভাল করবেন।
প্রস্তাবিত ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে, বেসরকারি হাইস্কুলে ভর্তি ফরমের মূল্য চলতি শিক্ষাবর্ষের মতোই ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাড়ানো হয়নি। আগের মতোই রয়েছে। ঘোষিত শূন্য আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি ও নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত টিউশন ফির বেশি আদায় করা যাবে না। এবার বার্ষিক পরীক্ষা না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট শেষ হওয়ার পর শূন্য আসন ঘোষণা করে ভর্তি কমিটির কাছে তালিকা জমা দিতে হবে।
কোভিড-১৯ মহামারির সংক্রমণরোধে সিটি করপোরেশন ও জেলা সদরের পৌর শহর এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা সশরীরে দিতে হবে না। প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে জমা দিতে পারবেন। আবেদন ফরম বিতরণের পর অন্তত সাত কার্যদিবস সময় দিতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করে শিক্ষার্থীদের আবেদন গ্রহণ ও লটারির ফলাফল প্রকাশ করবে। ফলাফল এক বছর স্কুলে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রয়োজনে আবেদন ফরম জমা নেয়ার সময় ফরমের নিচের অংশ ক্রমিক নম্বর দিয়ে শিক্ষার্থীদের ফেরত দিতে হবে।
নীতিমালায় আবেদন ফরমের মূল্য ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ এমপিওভুক্ত, আংশিক এমপিওভুক্ত এবং এমপিওবহির্ভূত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ২০০ টাকা। সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে মফস্বল এলাকায় ৫০০ টাকা, পৌর (উপজেলা) এলাকায় ১ হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় ২ হাজার টাকা, ঢাকা ছাড়া অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি হবে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে পারবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং এমপিওবহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা নিতে পারবে।
উন্নয়ন খাতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক ক্লাস থেকে পরবর্তী ক্লাসে ভর্তির জন্য প্রতি বছর সেশন চার্জ নেয়া যাবে। তবে পুনঃভর্তির ফি নেয়া যাবে না। তবে দরিদ্র, মেধাবী বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীদের যতদূর সম্ভব মওকুফ করে দিতে হবে। নীতিমালা লঙ্ঘন করে ভর্তি ও অতিরিক্ত ফি আদায় করলে প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়।
জানা গেছে, লটারির ভর্তিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগরীতে মাউশির মহাপরিচালক আহ্বায়ক করে ভর্তি কমিটি গঠন করতে হবে। এ কমিটির সদস্য থাকবেন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান, মাউশির পরিচালক (বিদ্যালয়), ঢাকা জেলার ডিসির প্রতিনিধি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, মাউশির ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক। জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসির নেতৃত্বে জেলা পর্যায়ে ভর্তি কমিটি গঠন করতে হবে।
এছাড়া ভর্তি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক ও কয়েকজন অভিভাবক নিয়ে একটি ভর্তি কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।
নতুন ভর্তির নীতিমালায় আগামী শিক্ষাবর্ষে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে স্কুলের এন্ট্রি শ্রেণি ও আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি করা যাবে। আসনের চেয়ে আবেদন বেশি হলে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের বয়স জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী ছয় বছর হতে হবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, কোন শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি করা হবে। প্রত্যেক স্কুল নিজস্ব উদ্যোগে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এক্ষেত্রে স্কুল পরিচালনা কমিটি একাধিক উপ-কমিটি গঠন করতে পারবে। একই ক্যাচমেন্ট এলাকায় একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলে শিক্ষার্থীরা যে কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে। সরকারি হাইস্কুলে ক্যাচমেন্টভুক্ত এলাকার পাঁচটি স্কুলে আবেদন করা যাবে।
এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, প্রতি বছরই সেশন ফি বিভিন্ন খাতে বেশি নেয়ার অভিযোগ আমরা পেয়ে থাকি। এবারও করোনার কারণে মানুষ খুব ভালো অবস্থায় নেই। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এ ব্যাপারে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান। তারপরও যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তবে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page