মনির হোসাইন।।
হাতে গাঁদা আর গোলাপ ফুল নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন শিক্ষার্থীরা। বিদায় সংবর্ধনা শেষে মঞ্চ থেকে অতিথিদের সঙ্গে বাইরে এলেন তাঁদের প্রিয় শিক্ষক। বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে তাকে অশ্রুশিক্ত নয়নে সুসজ্জিত বিদায় দিলেন শিক্ষার্থীরা। বিদায়বেলার এমন আয়োজনে আবেগ-আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন উপজেলার বাখর নগর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সবার প্রিয় বিদায়ী প্রধান শিক্ষক ময়নাল হোসেন।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) উপজেলার নবীপুড় পূর্ব ইউনিয়নের বাখর নগর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিদায়ের নানা আনুষ্ঠানিকতার শেষে প্রিয় এই শিক্ষককে বাড়ি পৌঁছিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
উক্ত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অত্র প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি মাসুদ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে থুল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিক মোঃ রাশেদ আহম্মদ সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ কামাল হোসেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্সট্রাক্টর ইউ আর সি মোঃ জিল্লুর রহমান,১৪ নং নবীপুড় পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের, প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির সভাপতি রেবেকা মেডাম, যাত্রাপুড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ কাউছার আহমেদ,শিক্ষক মোঃ বরকত উল্লাহ,বাখরনগর হাসিমিয়া ইসলামী ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ছামির হোসাইন,বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী,অত্র ওয়ার্ড মেম্বার জসিম উদ্দিন, এসময় বক্তারা বলেন, তিনি অনেক ভালো ও উদার মনের মানুষ। শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ প্রিয় ছিলেন। কখনো রাগ বা ক্ষোভ দেখিনি।
পিতার মতো শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন। আমার কর্ম জীবনে এমন শিক্ষক পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। তিনি এতো উদার মনের মানুষ, কোনো শিক্ষকের বিপদ হলে সঙ্গে সঙ্গে যেতেন এবং খোঁজ খবর নিতেন। স্যার অবসর জনিত কারণে বিদায় নিয়েছেন। এটি সবাইকে মানতেই হবে। আমরা স্যারের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছি।
আয়োজকরা জানান, স্কুল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রধান শিক্ষক ময়নাল হোসেন স্যার তার কর্মজীবনে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এ প্রথম কোনো বিদায়ী শিক্ষককে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তার এ বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
বিদায়ী সংবর্ধিত প্রধান শিক্ষক ময়নাল হোসেন বলেন,‘ সুদীর্ঘ ৩৭ বছর শিক্ষকতা শেষে আজ আমি নিজেকে সার্থক মনে করি। একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে আমার সকল শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী আমাকে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে। এ বিদ্যালয় থেকে এর-আগে আর কোনো শিক্ষক সংবর্ধিত হয়নি। তাদের প্রতি আমার ভালোবাসা কখনও শোধ করা সম্ভব নয়। আমি সবসময় চেয়েছি তাদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। আজ তারা আমাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজিত সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।’
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page