জহিরুল হক বাবু।।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার রসুলপুর ও বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে বাকশিমুল ইউনিয়নের মাধবপুর এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে একসাথে তিন কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে নিহত তিন কিশোরের মৃত্যু নিয়ে নানান রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। নির্জন এই স্থানে তিন জন কিশোর কেন গিয়েছিল, কিভাবে কাটা পড়ল ট্রেনে, এ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল মোল্লার ভাষ্যমতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী রেলপথের ডাউন লাইনের ১৬২/০১ এলাকায় চট্টগ্রামগামী রেলের নিচে কাটা পড়ে তিনজন কিশোর নিহত হয়েছে। সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের নীচে কাটা পড়ে তারা নিহত হন। তবে নির্জন এই স্থানে তারা কেনই বা এসেছিল তাও বলতে পারেননি।
এদিকে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, যে স্থানটিতে তিনটি কিশোর নিহত হয়েছে, এই স্থানটি মাদকসেবীদের একটি নিরাপদ আখড়া।
রেল লাইনের ঠিক ৫০ গজ পূর্ব পাশে একটি পরিত্যক্ত ঘর রয়েছে, ওই ঘরটিতে পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। তবে কোন কক্ষেরই দরজা জানালা নেই। পরিত্যক্ত ওই ঘরটি নির্জন স্থানে হওয়ায় মাদক সেবীরা দিনে ও রাতে দেদারে এখানে মাদক সেবন করে আসছিল। ধারণা করা হচ্ছে নিহত ৩ কিশোর মাদক সেবনের পর রেল লাইনে গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।
স্থানীয় সোহেল নামে এক যুবক জানান, ভোর ছয়টায় রেললাইন হয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এসময় দুটি লাইনের মাঝখানের জায়গায় প্রথমে একটি কিশোরকে দেখতে পায়। তার কোমরের নিচের অংশ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। মোবাইল ফোনের ভিডিও চালু করে কাছে গিয়েই তাকে দেখছিলেন এবং ওই কিশোর নড়াচড়া করছে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছেন। কিছুটা এগিয়ে কাছে গেলে আহত কিশোরটি বাঁচানোর জন্য আকুতি করছিল এবং খাবার পানি চাচ্ছিলেন।
এর কিছুদুরেই আরো একজন কিশোরকে দেখতে পান তিন। ওই কিশোরেরও কোমরের নিচের অংশও শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো। সেও বাঁচার জন্য আকুতি করছিল এবং পানি চাচ্ছিল।
সোহেল তাদের পরিচয় জানতে চায় এবং কোথায় থেকে এসেছে কিভাবে এ ঘটনা হয়েছে জানতে চাচ্ছিল। কথা বলার মধ্যেই ধীরে ধীরে একে একে দুই কিশোর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
তিনি একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে আরো একজনের মরদেহ দেখতে পান, যার মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। সোহেল আরো জানান, নিহত তিনজনের কাউকে আগে এই এলাকায় দেখা যায়নি।
এদিকে সকাল ৯ টায় ঘটনাস্থলে যান কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) সোহেল মোল্লা। কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে জানিয়ে সোহেল মোল্লা আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নিহতের ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে মোখলেসুর রহমান নামে এক ব্যক্তি মর্গে এসে এক কিশোরের পরিচয় নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, নিহত তিনজনের মধ্যে একজন তার ছেলে সাইফুল। তার বয়স ১৯ বছর। তাদের বাড়ি জেলার দেবিদ্বার উপজেলায় হলেও তারা কুমিল্লা রেল স্টেশন এলাকায় থাকতো। এছাড়া মোঃ তুহিন (১৭) নামে আরেকজনের নাম জানা গেছে। তবে অপরজনের পরিচয় মেলেনি। নিহত ৩ জনই কুমিল্লা থেকে লাকসাম রেলস্টেশন এলাকাগুলিতে ঘুরে বেড়াতো, তার ভাষ্যমতে ৩ কিশোরই ছন্নছাড়া ও মাদকসেবি ছিলো।