স্টাফ রিপোর্টার।।
যানজটের অক্টোপাস থেকে মুক্তি মিলছে না কুমিল্লাবাসীর।ব্যাটারিচালিত অনিয়ন্ত্রিত ইজিবাইক ও মিশুক এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা এই সমস্যার মূল কারণ।ব্যাটারিচালিত ৪০ হাজার বাহন কমিয়ে ৬ হাজারে এবং অনিবন্ধিত সিএনজি চলাচল বন্ধ ও অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে কুমিল্লা শহরকে যানজটমুক্ত রাখার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরুর পর এই উদ্যোগের বিরোধিতায় নামে একটি অদৃশ্য শক্তি। একই সঙ্গে সুবিধাভোগী মহলের মিথ্যাচার ও মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হন যানজট নিরসনের উদ্যোক্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়া। যিনি এর আগে ডিএসবির দায়িত্বে থেকে গোয়েন্দা তথ্যের জায়গাটি অনেক শক্তিশালী করে তুলেন।
দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা শহর, শহরতলী ও উপজেলাগুলোর যানজট চিত্র এতোতাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, এই ত্রাহি অবস্থা থেকে সাধারণ মানুষকে অন্তত কিছুটা স্বস্তি দিতে ট্রাফিক বিভাগে নতুন দায়িত্বে আসা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়ার পরিকল্পনায় উদ্যোগটি শুরুর দুই/আড়াই মাসেই বাধাগ্রস্ত হতে থাকে।কারণ হিসেবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, যারা অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের অনৈতিক সুবিধা নিতো তারাই উদ্যোগটি আলোর মুখ দেখতে দেয়নি। উপরুন্তু এই কর্মকর্তাকে মিডিয়া ট্রায়ালের শিকারে পরিণত করেছে।কুমিল্লার বিশিষ্টজন ও পরিবহন নেতারা বিষয়টিকে দু:খজনক বলে মন্তব্য করেছেন।
জানা গেছে, জেলা ট্রাফিক বিভাগের নতুন দায়িত্ব পেয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা যানজট নিরসনের কার্যক্রমে সফলতা আনতে বেশকিছু পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেন। এরমধ্যে ট্রাফিকের ডিউটি সুচারুভাবে হচ্ছে কিনা, এটির ওপর বেশ নজরদারি রাখেন। এছাড়াও শহরে প্রায় ৪০ হাজার অনিয়ন্ত্রিত ও অনিবন্ধিত ইজিবাইক, মিশুক চলাচল করায় এটি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে শহরকেন্দ্রিক ধারন ক্ষমতা অনুসারে ৬ হাজার ইজিবাইক ও মিশুক চলাচলের জন্য জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট সভাগুলোতে উত্থাপন করেন। বাকি বাহনগুলো শহরের বাইরে চলাচলের জন্য ৮টি সীমারেখা পোষ্ট স্থাপনের একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন।এছাড়াও কুমিল্লা শহরের ৪টি বাসস্ট্যান্ডের সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা নিয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং যেখানে সেখানে সিএনজি স্ট্যান্ড বসিয়ে যাত্রী পরিবহন করার পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি হিসেবে চ্যালেঞ্জ নিয়ে অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড উঠিয়ে দেন। ফলে অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা সহ স্বল্প পরিমাণ ইজিবাইক, মিশুক চলাচলের ওপর শক্ত অবস্থানে থাকায় সুবিধাভোগীদের স্বার্থে আঘাত লাগে। আর তখনই স্বার্থান্বেষী মহলটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়ার প্রতি বিরাগভাজন হয়ে তাকে মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমমুখি দাঁড় করায়। আর এর মধ্যদিয়েই যানজট নিরসনের একটি সুন্দর পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখার আগেই নিভিয়ে দেওয়া হয়।
এবিষয়ে বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও কুমিল্লা জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ কবির আহমেদ বলেন, কুমিল্লায় যানজট নিরসনে যে উদ্যোগগুলো অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়া নিয়েছিলেন, এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী ছিল।কিন্তু হঠাৎ করে ওনার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে একটি মহল। এটি দু:খজনক। তিনি অত্যন্ত সাহসীকতার সঙ্গে যানজট নিরসনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। যানজট নিরসনে আমরা যারা স্টেকহোল্ডার আছি সবাই ওনার উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানিয়েছি এবং আমাদের সহযোগিতাও ছিল। ভালো কাজে বাধা থাকেই, তবে আমি মনে করি সমাজে ভালো কাজ করার মানুষদের যেনো আমরা থামিয়ে না দেই।
কুমিল্লা বণিক সমিতির সভাপতি ও যানজট নিরসন কমিটির সদস্য বিএনপি নেতা মোজাহিদ চৌধুরী বলেন, সঠিক তথ্য, উপাত্ত ও প্রমাণ ছাড়া যেকোন সংবাদই সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। যানজট নিরসনের একটি সুন্দর উদ্যোগ মিথ্যাচার ও অনৈতিক সুবিধাভোগীদের কারণে থেমে যেতে দেওয়া যাবেনা। এসব মিথ্যা সংবাদের নেপথ্যের কারিগরদের মুখোশ উন্মোচন হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়া জানান,’কুমিল্লার ইতিহাস থেকে জেনেছি এটি একটি পরিচ্ছন্ন ও ছিমছাম শহর ছিল। এখানে চাকরি করতে এসে দেখলাম শহরের প্রধান সমস্যাটাই যানজট। যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল। বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, মিশুক, অটোরিকশার আধিক্যতায় শহরবাসী অতিষ্ঠ।অবৈধ সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যাও কম নয়। মাত্র আড়াই মাস আগে যানজট নিরসন নিয়ে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সেই মোতাবেক কাজও শুরু করি। এরপর থেকেই যানজট নিরসনের এই উদ্যোগ যাতে সফল না হয়, এজন্য উঠে পড়ে লাগে অবৈধ ওই সব যানবাহন থেকে সুবিধা নেওয়া মহল। এরপর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করে আমাকে মিডিয়া ট্রায়ালের শিকারে পরিণত করে। আমি চাই আমাকে নিয়ে যে মিথ্যাচার, এই বিষয়টি তদন্ত করে সত্যটা বেরিয়ে আসুক। আমার সম্মানহানীর সঙ্গে জড়িতদের পরিচয় বেরিয়ে আসুক। ‘











