কুমিল্লা ক্রিকেট জাগরণের পথিকৃত সাইফুল আলম রনি

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুমিল্লা ভাষা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম। গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ । চারদিকে দর্শকদের হর্ষধ্বনি। গেলো ২০২০ সালে মুজিব শত বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কাউন্সিলর কাপের আয়োজন করে কুমিল্লা ক্রিকেট কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা খেলোয়াড়রা টুর্নামেন্টে বিভিন্ন দলের হয়ে খেলেছেন। ওই এক আয়োজনের মধ্যে গোটা নগরী মজেছিলো উৎসবের আমেজে। গ্যালারিতে জায়গা না পেয়ে স্টেডিয়ামের বাইরে বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন করে উৎসুক দর্শক।

কাউন্সিলর কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজনে অতিথি হয়ে এসেছিলেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার আকরাম খান। বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী আয়োজন দেখে উচ্ছ্বসিত আকরাম খান সেদিন বলেছিলেন ঢাকার পরে যদি কোনো জেলা ক্রিকেটের এমন আয়োজন করতে পারে, তা হলো কুমিল্লা। কুমিল্লার মানুষের হৃদয় বড়। আর এই হৃদয়ের মধ্যমণি কুমিল্লা ক্রিকেট কমিটির সভাপতি বিসিবির কাউন্সিলর সাইফুল আলম রনি।

এই সাইফুল আলম রনির হাত ধরে কুমিল্লা স্টেডিয়ামে ক্রিকেটের পুনর্জাগরণ ঘটেছে। গ্যালারিগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। করোনার কারণে পরের বছর কাউন্সিলর কাপ টুর্নামেন্ট আয়োজন না হলেও ওই চাহিদার প্রেক্ষিতে স্বাধীনতা কাপ টি-টেন টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। সে টুনার্মেন্টের ভ্যানু ছিল কুমিল্লা জিলা স্কুল৷

স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। টুর্নামেন্টটি কুমিল্লা ছাড়িয়ে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম বিভাগের সবকটি জেলা থেকে অন্তত ৯২ টি দল এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে। সারাদেশে স্থানীয়ভাবে সবচেয়ে বেশি দল অংশগ্রহণ করা টুর্নামেন্টটি ছিল স্বাধীনতা কাপ টি-টেন।

তারপর আবার ২০২২ সালের শুরুতে আয়োজন করা হয়েছিল কাউন্সিলর কাপ টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসর। সে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান এবং বিসিবির ফাইন্যান্স কমিটির সভাপতি ইসমাইল হায়দার মল্লিক। কুমিল্লায় ক্রিকেটের এমন আয়োজনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বিসিবির এই দুই পরিচালক। সে সময় টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দলকে একটি নিউম মডেলের প্রাইভেট কার দেয়া হয়। রানারআপ দল পেয়েছিল মোটর সাইকেল। এছাড়া টুর্নামেন্টে সেরার হাতে তুলে দেয়া হয় মোটর বাইকের চাবি।

টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সাথে বিসিবির পরিচালক আকরাম খান ও ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলেন, এমন টুর্নামেন্ট প্রতিটি জেলায় অনুষ্ঠিত হোক। রনির মতো ক্রিকেট সংগঠক আমাদের আরো দরকার। আমরা চাই রনি বিসিবির সাথে কাজ করুক। পরে বিসিবির পরিচালক রনিকে দেয়া কথা রেখেছিলেন। কুমিল্লার কৃতী সন্তান সাইফুল আলম রনিকে বিসিবির ফ্যাসিলিটিজ কমিটির সদস্য সচিব করেন। এ খবরে সে সময় উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন কুমিল্লার ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা।

ক্রিকেট টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে কুমিল্লাার ক্রিকেটের পুনর্জাগরণ করেছিলেন কুমিল্লা ক্রিকেট কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম রনি। গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার ও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দেশ ও দেশের বাইরে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে কুমিল্লা ক্রিকেট কমিটির। কুমিল্লার অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে আসে স্টেডিয়ামে। অভিভাবকদের লক্ষ্য তাদের সন্তানরাও জাতীয় দলে ক্রিকেট খেলবে।

সাইফুল আলম রনির পারিবারিক বৃত্তান্তঃ
কুমিল্লা নগরীর তালপুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সৈয়দ আবদুল হালিম ও দেলোয়ারা বেগম দম্পতির ২ ছেলে, ৩ মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান সাইফুল আলম রনি ১৯৭৫ সালের ১৬ মে জন্মগ্রহণ করেন। ইবনে তাইমিয়া স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে। পরে সফলতার সাথে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে মার্কেটিং বিষয়ে এমবিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার ব্যবসা পরিচালনা করতেন।

২০১২ সালে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহারের জ্যেষ্ঠ কন্যা তাহসিন বাহার সূচনার সাথে পরিণয় সূত্রে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

বাবার ব্যবসায় দেখাশোনা করার পাশাপাশি কুমিল্লাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন সাইফুল আলম রনি।

২০১৮ সালে কুমিল্লা ক্রিকেট কমিটির সভাপতি হন। তারপর বিসিবির কাউন্সিলর ও ফ্যাসিলিটিজ কমিটির সদস্য সচিব হন।

কুমিল্লা সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত মানবিকতার উপদেষ্টা সাইফুল আলম রনি করোনাকালে নিজের অর্থায়নে আট হাজারের বেশি মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দেন। ৬০ টির বেশি অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌছে দেন করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে। মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়নে গোপনে দান করছেন। এতিমখানায় এতিম শিশুদের জন্য শীতবস্ত্র পাঠিয়ে দেন। গেলো বছর পাঁচেক ধরে শীতকালে গড়ে প্রতি বছর তিন হাজার মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে আসছেন। এমন সব মহতী কাজের মাধ্যমে কুমিল্লার অসহায় সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের ঠিকানা হয়ে উঠেছেন সাইফুল আলম রনি।

এছাড়াও সাইফুল আলম রনি গেলো বছর সিলেট সুনামগঞ্জে বন্যা আক্রান্ত ৫ হাজার পরিবারের জন্য খাবার ও জরুরি ওষুধ নিয়ে যান। নিজের হাতে বিতরণ করেন বন্যার্তদের মাঝে।

অসহায় মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতা করার শিক্ষাটা পরিবার থেকেই পেয়েছেন সাইফুল আলম রনি।

সাইফুল আলম রনির বাবা আবদুল হালিম একজন ওষুধ ব্যবসায়ী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বিনামূল্য ওষুধ সরবরাহের অপরাধে কুমিল্লা সেনানিবাসে নিয়ে তিনদিন হাত পা বেঁধে নির্য়াতন চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। পরে তার বাবা সৈয়দ আবদুল খালেকের অনুনয় বিনয় করে ছেলে আবদুল হালিমকে নিয়ে আসেন পাকিস্তানিদের কাছ থেকে। তবে এই তিন মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি আবদুল হালিম।

তারপর তিনি ব্যবসা পরিবর্তন করে ব্যাটারির ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলেন। ২০১৫ সালে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবদুল হালিম।

আবদুল হালিমের পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ফাহমিদা নাহিদ কানাডা প্রবাসী, বড় ছেলে সাইফুল আলম রনি কুমিল্লার তরুণ আইকন ব্যবসায়ী, বিসিবির কাউন্সিলর ও ফ্যাসিলিটিজ কমিটির সদস্য সচিব। মেয়ে ফারহানা নাহিদ, তিনিও কানাডা প্রবাসী ছিলেন। ২০১২ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ফারহানা মারা যান। তার স্বামী সন্তান এখন কানাডা থাকেন। ছোট মেয়ে ফারজানা নাহিদ সপরিবারে অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন। ছোট ছেলে মো. জাহিদুল আলম একটি প্রাইভেট কোম্পানির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন।

কুমিল্লা নিয়ে স্বপ্ন দেখা একজন স্বপ্নবাজ তরুণ ব্যবসায়ী সাইফুল আলম রনি বলেন, আমি সব সময় কুমিল্লাকে এগিয়ে রাখি। কুমিল্লা আমার প্রাণের ঠিকানা। এখানে অনেক সম্ভাবনাময়ী তরুণ ও কিশোর রয়েছেন। যাদের সামর্থ্য আছে জাতীয় ক্রিকেটে নেতৃত্ব দেয়ার। আমি সেই সব তরুণদের জন্য কাজ করছি। তাদের জন্য ক্রিকেটীয় পরিবেশ তৈরি করতেই এতসব করেছি। বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টের মধ্য অনূর্ধ্ব ১৪ এবং স্কুল ক্রিকেটে নিয়ে আমার বিশদ পরিকল্পনা ছিলো। তখন কুমিল্লা স্টেডিয়ামে এই ভ্যানুতে খেলা হয়েছে। এখনো আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি দ্বিতীয় বিভাগ টুর্নামেন্ট চালু করার জন্য। কারণ আমি বিশ্বাস করি, তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় বাছাই করার প্রথম ধাপই হচ্ছে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। যেখান থেকে তৃণমূলের খেলোয়াড়রা প্রথম বিভাগ খেলার আগে একটা সুযোগ পাবে। কারণ প্রথম বিভাগে সরাসরি খেলার সুযোগ অনেকেরই হয়ে ওঠে না।

এখন দর্শকরা কুমিল্লা স্টেডিয়ামে এসে খেলা দেখছে। এ বিষয়গুলো আমাকে উৎসাহিত করে। যদি সব ধরনের সুযোগ পাই তাহলে আমার ক্রিকেটার ভাইদের জন্য খেলার উন্নত পরিবেশ তৈরি করবো।

সামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে সাইফুল আলম রনি বলেন, এ সমাজের বিত্তবান মানুষের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। কে কি করলো সেটা আমি খুঁজি না, খুঁজতে চাইও না। আমি শুধু নিজের কাছে প্রশ্ন করি। আমি অসহায় মানুষের জন্য কি করতে পারছি। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নিজের যা কিছু আছে, তা নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। আমার ইচ্ছে আমৃত্যু আমি সমাজের অসহায় মানুষের পাশেই থাকবো।

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page