
মনোয়ার হোসেন।।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (মিশুক) চালক মো. তাফরুল ইসলাম সৈকত (১৯) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা মো. রিফাত (২৮) কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের তারাশাইল গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে চৌদ্দগ্রাম থানা প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ। আটক রিফাত একই ইউনিয়নের আতাকরা ভূঁইয়া বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে এবং পৌর এলাকার পূর্ব চাঁন্দিশকরা ওয়াপদা রোডের আবুল ড্রাইভারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। সে নিজেও একজন মিশুক চালক।
পুলিশ জানায়, গত ৩ জুলাই বিকেলে উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বাহেরগড়া এলাকার নাঙ্গলিয়া খালপাড়ের লক্ষীপুর ব্রিজের নিচ থেকে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয়দের সহায়তায় নিহতের পরিচয় শনাক্ত করেন তার বাবা মো. খাইরুল ইসলাম। নিহত সৈকত চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার ওয়াপদা রোডে পরিবারসহ বসবাস করতেন এবং মিশুক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত পুলিশকে জানায়, সৈকতের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিল। তারা মাঝেমধ্যে মাদক সেবন করত। রিফাতের ঋণের কিস্তি ও আর্থিক সংকট তাকে এই হত্যার পরিকল্পনায় বাধ্য করে। পরিকল্পনা ছিল—একজন মিশুক চালককে হত্যা করে তার গাড়ি ছিনতাই করে বিক্রি করা হবে। সেই অনুযায়ী, পূর্বপরিচিত সৈকতকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে ২ জুলাই রাত ১১টার দিকে চৌদ্দগ্রাম বাজার থেকে বাহেরগড়া এলাকার নির্জন স্থানে নিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে অপেক্ষারত রিফাতের অন্য দুই সহযোগী পৌঁছাতে দেরি করছিল। এদিকে রাত গভীর হয়ে যাওয়ায় একপর্যায়ে রিফাত একাই পূর্বপরিকল্পিতভাবে খালের পাশে লুকিয়ে রাখা ধারালো ধামা দিয়ে সৈকতের ঘাড়ে আঘাত করে। পরে আরও ৫-৬টি কোপ দিয়ে তাকে হত্যা করে সৈকতের মোবাইল, টাকা ও মিশুকের চাবি নিয়ে যায়। মরদেহটি নাঙ্গলিয়া খালের পানিতে ফেলে রেখে মিশুক নিয়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনার রহস্য উদঘাটনে থানার উপ-পরিদর্শক মো. মুরাদ হোসেন নেতৃত্ব দেন। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিমের মোবাইল ট্র্যাক করে হত্যাকারী রিফাতকে শনাক্ত ও আটক করা হয়। গ্রেপ্তারের পর রিফাত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী স্থানীয়দের সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধামাটি উদ্ধার করা হয়েছে।
ওসি হিলাল উদ্দিন আহমেদ জানান, হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উদঘাটনকে তিনি পুলিশি সাফল্য হিসেবে দেখছেন।
এ ঘটনায় এলাকায় চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হলেও দ্রুত রহস্য উদঘাটনে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।