১০:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কুমিল্লায় তেলে ওজন কম; পেট্রোল পাম্পে অভিযান জরিমানা আদায় মাংস, দুধ ও মিষ্টি একই ফ্রিজে! কুমিল্লায় মোবাইল কোর্টে ৩ লাখ টাকার জরিমানা বুড়িচংয়ে দখলকৃত খাল উদ্ধারে প্রশাসনের অভিযান ব্রাহ্মণপাড়ায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের মাঝে চেক বিতরণ বুড়িচংয়ে প্রয়াত আইনজীবী সোহাগের মৃত্যুবার্ষিকীকে গাছের চারা বিতরণ কুবিতে “লেবার মাইগ্রেশন ফ্রম বাংলাদেশ: ড্রিম ভার্সেস রিয়েলিটি” বিষয়ক ওয়ার্কশপ মুরাদনগরে জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠনের আহবায়ক কমিটি গঠন বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবসে কুমিল্লায় আলোচনা সভা কুমিল্লার মুরাদনগরে পানিতে ডুবে ৩ বছরের শিশুর মৃত্যু মাদক ও জুয়া সমাজ ধ্বংস করছে, প্রতিরোধে জনগণের সহযোগিতা চাই –অতিরিক্ত পুলিশ সুপার

চির নিদ্রায় শায়িত প্রফেসর জামাল উদ্দিন

  • তারিখ : ১০:৪০:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩
  • 15

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুমিল্লার খ্যাতনামা পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মো. জামাল উদ্দিন আর নেই। আপাদমস্তক একজন আদর্শবান শিক্ষক প্রফেসর মো জামাল উদ্দিন গত ১২ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যা ৬:৫৭ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা বারডেম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহির রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্রী তাহমিনা শবনম, এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান সহ অনেক আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লা সরকারি কলেজ মাঠে ও বাদ জোহরা শাসনগাছা মহাজন বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা শেষ শাসনগাছা পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। চিরনিদ্রায় শায়িত মহান শিক্ষক জামাল উদ্দিনের মৃত্যুতে কুমিল্লার শিক্ষা প্রশাসনে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান কুমিল্লার বিভিন্ন দফতর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগন।

কুমিল্লা সরকারি কলেজ ময়দানে দুপুর ১২ টায় অনুষ্ঠিত প্রথম জানাযায় উপস্হিত ছিলেন কুমিল্লা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ বাহাদুর হোসেন,কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জামাল নাসের, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খান, কুমিল্ল সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হাসনাত আনোয়ার উদ্দীন আহমদ, জেলা বিসিএস সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জোবায়ের সহ কুমিল্লার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ,সহকর্মীবৃন্দ ও স্নেহের শিক্ষার্থীবৃন্দ। এছাড়া কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর মো আবদুস ছালাম, প্রফেসর মো রুহুল আমীন ভূইয়া, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুল হোসেন সহ অনেকে শোক প্রকাশ করছেন।

কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক ফারুক আহমেদ এর ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া অধ্যাপক জামাল উদ্দিন এর সংক্ষিপ্ত জীবনী:

” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন মো জামাল উদ্দিন । এপ্লাইড ফিজিক্স এন্ড ইলেকট্রনিক্স থেকে পাস করে ১৬ তম বিসিএস-এর মাধ্যমে যোগদান করেন পদার্থবিজ্ঞানের লেকচারার হিসেবে। একজন মেধাবী শিক্ষক, শিক্ষার্থী অন্তঃপ্রাণ শিক্ষক ছিলেন। গতানুগতিক শিক্ষকদের মত ছিলেন না। ক্লাস-শিক্ষক ছিলেন। ক্লাসেই জ্ঞান বিলিয়ে দিতেন। কিছু বাকি রাখতেন না। ফলে আর্থিকভাবে এগোতে পারেননি। তবে উনার ঔদার্য, শিক্ষার্থীদের জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণের অদম্য আগ্রহের কারণে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন।

চাকরি হওয়ার পর আমি প্রথম যখন কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে যোগদান করি তখন জামাল উদ্দীন স্যারকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পাই। প্রথম দেখাতেই স্যারকে আমার ভালো লেগে গেল। স্যার আমাকে ছোট ভাইয়ের মত দেখতেন। স্যারকে আমার কেবল সহকর্মী মনে হত না, সর্বদা একজন অভিভাবক মনে হত। কয়েকদিন আগে বারডেম হাসপাতালে স্যারকে যখন দেখতে গিয়েছিলাম আমার চােখে জল চলে এলো। বিদায় নেয়ার প্রাক্কালে ছলছল চোখে স্যারকে আমি পা ছুঁয়ে সালাম করে এলাম। কেন জানি, আমার কাছে তখনই মনে হল এ বড় ভাইকে বোধ হয় আর বেশিদিন হাতের নাগালে পাব না। তিনি দেবিদ্বার সরকারি কলেজ ও কুমিল্লা সরকারি কলেজে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক ছিলেন। সর্বশেষ প্রফেসর পদে পদোন্নতি পেয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের বিভাগীয় প্রধান হন।

সহজ-সরল, উন্নত মননশীলতার জন্য স্যার সহকর্মী থেকে শুরু করে সকল শ্রেণির মানুষের কাছে বরণীয় হয়ে উঠেছেন। সহকর্মীদের দোষ-ত্রুটি কখনো খুঁজতেন না। যার যেটা ভালো দিক আছে সেটি বের করে জনসম্মুখে প্রশংসা করতেন। এমন জ্ঞানী, নিরহংকার শিক্ষক আমি খুব কমই দেখেছি।

২০১৪ সালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সততা ও নিষ্ঠার সহিত নির্বাচনী দায়িত্ব (প্রিসাইডিং অফিসার) পালন করতে গিয়ে তিনি ছুরিকাহত হন। যতদূর জানি, একদল দুর্বৃত্ত কেন্দ্র দখল করে ব্যালটবাক্স ছিনতাই করতে গেলে তিনি চরমভাবে বাধা দেন। চরম সাহসিকতার সাথে এ অন্যায় কাজে প্রতিরোধ গড়ে তুললে দুর্বৃত্তরা না পেরে শেষে উপর্যুপরি ছুরি দিয়ে আঘাত করে তাঁকে রক্তাক্ত করেন। সেই যাত্রায় কোনোভাবে স্যারের জীবনরক্ষা পেলেও অসুস্থতা স্যারকে আর ছাড়েননি।

জাতীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্যারের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হলো এবং স্যার দীর্ঘবছর অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে শেষে মুত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। ” অনেকের মতে মো. জামাল উদ্দিন ছিলেন এদেশের একজন বীরসন্তান, বীরশিক্ষক ।

চির নিদ্রায় শায়িত প্রফেসর জামাল উদ্দিন

তারিখ : ১০:৪০:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুমিল্লার খ্যাতনামা পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মো. জামাল উদ্দিন আর নেই। আপাদমস্তক একজন আদর্শবান শিক্ষক প্রফেসর মো জামাল উদ্দিন গত ১২ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যা ৬:৫৭ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা বারডেম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহির রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্রী তাহমিনা শবনম, এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান সহ অনেক আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লা সরকারি কলেজ মাঠে ও বাদ জোহরা শাসনগাছা মহাজন বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা শেষ শাসনগাছা পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। চিরনিদ্রায় শায়িত মহান শিক্ষক জামাল উদ্দিনের মৃত্যুতে কুমিল্লার শিক্ষা প্রশাসনে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান কুমিল্লার বিভিন্ন দফতর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগন।

কুমিল্লা সরকারি কলেজ ময়দানে দুপুর ১২ টায় অনুষ্ঠিত প্রথম জানাযায় উপস্হিত ছিলেন কুমিল্লা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ বাহাদুর হোসেন,কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জামাল নাসের, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খান, কুমিল্ল সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হাসনাত আনোয়ার উদ্দীন আহমদ, জেলা বিসিএস সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জোবায়ের সহ কুমিল্লার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ,সহকর্মীবৃন্দ ও স্নেহের শিক্ষার্থীবৃন্দ। এছাড়া কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর মো আবদুস ছালাম, প্রফেসর মো রুহুল আমীন ভূইয়া, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুল হোসেন সহ অনেকে শোক প্রকাশ করছেন।

কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক ফারুক আহমেদ এর ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া অধ্যাপক জামাল উদ্দিন এর সংক্ষিপ্ত জীবনী:

” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন মো জামাল উদ্দিন । এপ্লাইড ফিজিক্স এন্ড ইলেকট্রনিক্স থেকে পাস করে ১৬ তম বিসিএস-এর মাধ্যমে যোগদান করেন পদার্থবিজ্ঞানের লেকচারার হিসেবে। একজন মেধাবী শিক্ষক, শিক্ষার্থী অন্তঃপ্রাণ শিক্ষক ছিলেন। গতানুগতিক শিক্ষকদের মত ছিলেন না। ক্লাস-শিক্ষক ছিলেন। ক্লাসেই জ্ঞান বিলিয়ে দিতেন। কিছু বাকি রাখতেন না। ফলে আর্থিকভাবে এগোতে পারেননি। তবে উনার ঔদার্য, শিক্ষার্থীদের জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণের অদম্য আগ্রহের কারণে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন।

চাকরি হওয়ার পর আমি প্রথম যখন কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে যোগদান করি তখন জামাল উদ্দীন স্যারকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পাই। প্রথম দেখাতেই স্যারকে আমার ভালো লেগে গেল। স্যার আমাকে ছোট ভাইয়ের মত দেখতেন। স্যারকে আমার কেবল সহকর্মী মনে হত না, সর্বদা একজন অভিভাবক মনে হত। কয়েকদিন আগে বারডেম হাসপাতালে স্যারকে যখন দেখতে গিয়েছিলাম আমার চােখে জল চলে এলো। বিদায় নেয়ার প্রাক্কালে ছলছল চোখে স্যারকে আমি পা ছুঁয়ে সালাম করে এলাম। কেন জানি, আমার কাছে তখনই মনে হল এ বড় ভাইকে বোধ হয় আর বেশিদিন হাতের নাগালে পাব না। তিনি দেবিদ্বার সরকারি কলেজ ও কুমিল্লা সরকারি কলেজে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক ছিলেন। সর্বশেষ প্রফেসর পদে পদোন্নতি পেয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের বিভাগীয় প্রধান হন।

সহজ-সরল, উন্নত মননশীলতার জন্য স্যার সহকর্মী থেকে শুরু করে সকল শ্রেণির মানুষের কাছে বরণীয় হয়ে উঠেছেন। সহকর্মীদের দোষ-ত্রুটি কখনো খুঁজতেন না। যার যেটা ভালো দিক আছে সেটি বের করে জনসম্মুখে প্রশংসা করতেন। এমন জ্ঞানী, নিরহংকার শিক্ষক আমি খুব কমই দেখেছি।

২০১৪ সালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সততা ও নিষ্ঠার সহিত নির্বাচনী দায়িত্ব (প্রিসাইডিং অফিসার) পালন করতে গিয়ে তিনি ছুরিকাহত হন। যতদূর জানি, একদল দুর্বৃত্ত কেন্দ্র দখল করে ব্যালটবাক্স ছিনতাই করতে গেলে তিনি চরমভাবে বাধা দেন। চরম সাহসিকতার সাথে এ অন্যায় কাজে প্রতিরোধ গড়ে তুললে দুর্বৃত্তরা না পেরে শেষে উপর্যুপরি ছুরি দিয়ে আঘাত করে তাঁকে রক্তাক্ত করেন। সেই যাত্রায় কোনোভাবে স্যারের জীবনরক্ষা পেলেও অসুস্থতা স্যারকে আর ছাড়েননি।

জাতীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্যারের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হলো এবং স্যার দীর্ঘবছর অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে শেষে মুত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। ” অনেকের মতে মো. জামাল উদ্দিন ছিলেন এদেশের একজন বীরসন্তান, বীরশিক্ষক ।