স্টাফ রিপোর্টার।।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন মিয়ার বার্ষিক পরীক্ষা বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে, তবে ১৫ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসতে পারেনি, কারণ, সে এখন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। নিষিদ্ধ সংগঠন ‘ছাত্রলীগ কর্মী’ সন্দেহে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
পরিবারের দাবি, পুলিশের অভিযোগ ভিত্তিহীন, ইমরান কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নয়। তবে পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইমরান হোসেন উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের চিওড়া গ্রামের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ইসহাক মিয়ার ছেলে। ইসহাক মিয়া দাবি করেছেন, তিনি নিজেও কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। গত সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে নিজ বাড়ি থেকে ইমরানকে আটক করে নাঙ্গলকোট থানা-পুলিশ। পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায়। আটকের পর ছেলের পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিয়ে থানায় গিয়েছিলেন ইসহাক মিয়া, তাতে কোনো লাভ হয়নি।
ইসহাক মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলেটার জীবনটা শেষ করে দিল পুলিশ। আজ ওর ফাইনাল পরীক্ষা। কিন্তু নির্দোষ ছেলেটা এখন কারাগারে। এলাকার কেউ বলতে পারবে না আমার ছেলে বা আমি কোনো রাজনীতি করি। আমি ক্ষুদ্র ডেকোরেটর ব্যবসায়ী। আমার মনে হচ্ছে কেউ ষড়যন্ত্র করে পুলিশকে দিয়ে আমার ছেলেকে গ্রেপ্তার করিয়েছে।’
ইসহাক মিয়া আরও বলেন, ‘আমার ছেলে ছাত্রলীগের মিছিলে ছিল, এমন ন্যূনতম প্রমাণও নেই। সন্দেহের বশে ফাঁসানো হয়েছে। ছেলের মুক্তির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। পুলিশকে বারবার বলেছি এসব অভিযোগ মিথ্যা, ছেলেটার পরীক্ষা দিতে তাকে ছাড়েন। কিন্তু তাঁরা শোনেননি। নিজেদের কোটা পূরণ করতে ছেলেকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। আমি এই অন্যায়ের বিচার চাই।’
ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন মজুমদার বলেন, ‘ইমরান হোসেন আমাদের নিয়মিত শিক্ষার্থী। তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। কীভাবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেটাও জানি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সোমবার গভীর রাতে আটকের পরদিন গত মঙ্গলবার নাঙ্গলকোট থানায় ২৫ জনের নাম-পরিচয়সহ অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন উপপরিদর্শক আলমগীর। ওই মামলায় ইমরানকে ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে তাকে কুমিল্লার শিশু আদালত-১–এর মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এজাহারে ইমরানের পরিচয় ‘ছাত্রলীগ কর্মী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, নাঙ্গলকোটের ঢালুয়া ইউনিয়নের চিলপাড়া-উরকুটি রাস্তায় মনতলী ব্রিজের পাশে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার আসামিরা একত্র হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৫০ থেকে ৬০ জন সক্রিয় সদস্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রতিবাদে সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে ঝটিকা ও মশালমিছিল করেন। পুলিশ গিয়ে ১ নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর জিজ্ঞাসাবাদে অন্যদের নাম পাওয়া যায়।
স্কুলছাত্র ইমরান ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত, এমন কোনো প্রমাণ আছে কি না জানতে চাইলে নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে ফজলুল হক বলেন, ‘আমাদের কাছে ছেলেটির এমন কোনো ছবি বা ভিডিও নেই। তবে ওই দিন রাতে তাঁকে গ্রেপ্তারের আগে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের তথ্যে ইমরানের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। তাঁরা নিশ্চিত করেছে, ইমরান নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং ঝটিকা মিছিলে অংশ নিয়েছে। এ জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করে যথাযথ নিয়ম মেনে আদালতের মাধ্যমে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে।’
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে ওসি এ কে ফজলুল হক বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ওই ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিটা তদন্তে প্রমাণ হবে।’











