এ আর আহমেদ হোসাইন, দেবীদ্বার(কুমিল্লা) প্রতিনিধি।।
কুমিল্লা দেবীদ্বারের এক যুবককে তার খালাতো ভাই ফয়েজ আহমেদ ও বন্ধু আরিফ কর্তৃক চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ফোনে ডেকে নিয়ে যায়। অতপর বেড়ানোর কথা বলে ফয়েজের শ্বশুরবাড়ি বান্দরবন জেলার লামা উপজেলার ৬নং রুপসীপাড়া ইউনিয়নের শিংঝিরি গ্রামের মোহাম্মদ হাকিম উল্লাহর বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই বাড়ির ইউপি মেম্বার মোহাম্মদ হাকিম উল্লাহ(৫০) ফয়েজ উল্লাহর শ্বশুর। ওখানে স্বাধীনকে জিম্মি রেখে গত ২২ মার্চ দুপুরে সেল ফোনে তার পরিবারের নিকট (স্বাধীনের বড় ভাই মনিরের সেল ফোনে) এক লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করে। কিন্তু মুক্তিপনের টাকা কিভাবে কোথায় দেবে জানতে চাইলে সঠিক উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেয়। পরিবারের পক্ষ থেকে সরাসরি টাকা দিয়ে স্বাধীনকে নিয়ে আসার প্রস্তাব করলেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
নিহত যুবক হাফেজ অলিউল্লাহ স্বাধীন (১৮) দেবীদ্বার উপজেলার ৬নং ফতেহাবাদ ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামের মোবারক হোসেন’র চতুর্থ পুত্র। সে ২০১৭ সালে বষ্ণপুর তাওহিল আল রহমান হাফেজিয়া এতিমখানা কমপ্লেক্স থেকে কোরআনে হাফেজ সম্পন্ন করার পর পাগড়ি পড়েছিল।
ঘাতক নিহতের মামাতো ভাই ফয়েজ আহমেদ(৪০) বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের খাড়াতাইয়া গ্রামের মৃত: মালেক’র পুত্র এবং অপর ঘাতক বন্ধু আরিফ (১৯) দেবীদ্বার উপজেলার ৬নং ফতেহাবাদ ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামের মৃত মদন খানের পুত্র।
ঘাতকরা গত ২৫ মার্চ দুপুরে বান্দরবন জেলার লামা উপজেলার ৬নং রুপসীপাড়া ইউনিয়নের শিংঝিরি গ্রামের ১নং ওয়ার্ড ও ৫নং ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী স্থানের গভীর জঙ্গলে স্বাধীনকে শ^াসরোধে হত্যা পূর্বক মাটি চাপা দিয়ে রাখে। ওই ঘটনার এক মাস পর তার মরদহে উদ্ধার করেছে লামা থানা পুলিশ। একই সাথে ঘাতক ফয়েজ আহমেদ ও আরিফকে আটক করেছে পুলিশ। আটক কৃতরা পুলিশের নিকট হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলেও পুলিশ জানিয়েছেন।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে যেয়ে নিহতের বাবা মোবারক হোসেন, মাতা লুৎফা বেগম, বড় ভাই মনির হোসেন’র সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ২২ মার্চ বিষ্ণপুর গ্রামের মদন খানের পুত্র আরিফ(১৯) ও বুড়িচং উপজেলার খাড়াতাইয়া গ্রামের মৃত: মালেক’র পুত্র ফয়েজ আহমেদ(৪০) চাকুরির কথা বলে তার নিজ বাড়ি থেকে সেল ফোনে ডেকে নিয়ে যায়। এর পর আর বাড়ি ফিরে আসেনি স্বাধীন।
নিহতের ভাই ও মামলার বাদী মোঃ জিলানী বাবু সেল ফোনে জানান, আমাদের পরিবারের কাছ থেকে মোঃ ফয়েজ ও মোঃ আরিফ ইমুতে পরিবারকে অপহরণের বিভিন্ন ছবি দিয়ে ১লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিপণের টাকা না পাওয়ায় গত ২৫শে মার্চ হাফেজ মোঃ অলিউল্লাহ কে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে লামা রুপসীপাড়া ইউনিয়নের শিংঝিরি নামক স্থানের গভীর জঙ্গলে মাটির নিচে পুঁতে রাখে এবং পুলিশের নিকট আটক ফয়েজ ও আরিফ এ হত্যাকান্ডের সত্যতা স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছে। মোঃ জিলানী বাবু আরো জানান, তাদের বাড়ি দেবীদ্বার হলেও বুড়িচং বাজারে তাদের মুদী দোকানের ব্যবসা রয়েছে। সে কারনে বুড়িচং থানায় তার ভাই নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সাধারন ডায়েরী করেছিলেন।
বান্দরবন লামা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক(এস,আই) ত্রীজিত বড়–য়া জানান, হাফেজ মোঃ অলিউল্লাহকে অনেক অনুসন্ধানের পর না পেয়ে তার বড় ভাই মোঃ জিলানী বাবু গত ২৮মার্চ বুড়িচং থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন। (জিডি নং-১১৩৬, তারিখ- ২৮/০৩/২০২১ইং)। মুক্তিপন দাবী করা মোবাইল ফোন ট্র্যাক’র মাধ্যমে নিহতের ভাই মোঃ জিলানী বাবু লামা থানায় আরো একটি অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে লামা থানা পুলিশ তদন্তে নামে।
লামা থানার উপ-পরিদর্শক(এস,আই) ত্রীজিত বড়–য়া আরো জানান, তার নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোঃ ফয়েজ ও মোঃ আরিফকে গ্রেফতার করেন এবং তাদের স্বীকারোক্তিতে গতকাল মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) লামার গভীর জঙ্গলে শ^াসরোধে হত্যাপূর্বক মাটির নিচে পুঁতে রাখা হাফেজ মোঃ অলিউল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করেন। আসামী ও লাশ উদ্ধার অভিযানের সময় বুড়িচং থানার উপ-পরিদর্শক (এস,আই) বিনোদবাবু সহ কয়েকজন পুলিশও সহযোগীতা করেন।
এ ব্যপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ আরিফুর রহমান জানান, এ বিষয়ে সাংবাদিক ছাড়া কেউ জানায়নি বা অভিযোগ করেনি। তবে আমাদের তথ্যানুযায়ী নিহত ছেলেটির বাড়ি দেবীদ্বার উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের ওই ঘটনায় বুড়িচং থানায় জিডি হয়েছে। বান্দরবন’র লামা থানা পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
আজ ২১ এপ্রিল ২ঘটিকায় স্বাধীনের মরদেহ ময়না তদন্ত শেষে তারপরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্ত করেন। আজ রাতেই স্বাধীনের মরদেহ তার বাড়িতে পৌঁছার পর জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।
You cannot copy content of this page