নিউজ ডেস্ক।।
সদ্য অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে গত দুইবারের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু। তার পরাজয়ের কারণ নিয়ে চলছে নানান বিশ্লেষণ। সাক্কু আট কারণে পরাজিত হয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
দলীয় সমর্থন না পাওয়া :
সাক্কু বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এবারের নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে সমর্থন করেননি তাকে। বরং সাক্কুকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ফলে দলের সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হয়েছেন তিনি। দলীয় সমর্থন না পাওয়ায় বিএনপির ভোট ব্যাংক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তিনি।
বিএনপির ভোট ভাগ :
সাক্কু একদিকে দলীয় সমর্থন পাননি, অন্যদিকে বিএনপির ভোটে ভাগ বসানো আরেক প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনকেও মোকাবিলা করতে হয়েছে তাকে। যদিও নিজাম উদ্দিনকেও বহিষ্কার করে বিএনপি। কিন্তু নিজাম উদ্দিন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ৩০ হাজার ভোট পেয়েছেন। নিজাম উদ্দিন প্রার্থী না হলে এই ৩০ হাজারের মধ্যে বেশির ভাগ ভোটই সাক্কু পেতেন; যা তার পরাজয়ের অন্যতক কারণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
নেতাদের মাঠে না নামা :
নিজের পক্ষের ঘনিষ্ঠ নেতাদের প্রকাশ্যে মাঠে নামাতে পারেননি সাক্কু। এর ফলে নেতাদের ঘনিষ্ঠ ভোট থেকে বঞ্চিত হয়েছে তিনি। নেতারা না নামায় তাকে ভোটের মাঠে একা এগোতে হয়েছে। দল থেকে মনিরুলকে আজীবন বহিষ্কার করায় তার পক্ষে কোনো ধরনের প্রচারণায় অংশ না নিতে দলের কড়া নির্দেশনা ছিল। ফলে দলীয় কোনো নেতার প্রকাশ্য সমর্থন তিনি পাননি।
অনিয়মের অভিযোগ:
দুইবার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মনিরুলের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কাজে অনিয়মের অভিযোগ আছে। ওইসব অনিয়মের অভিযোগগুলো নির্বাচনের মাঠে বিরোধীরা ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে। ফলে কিছুটা হলেও সাককুর ভোট কমে যায়।
জলাবদ্ধতা ও যানজট:
জলাবদ্ধতা ও যানজট কুমিল্লা সিটির নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাককু দুইবার মেয়র থাকলেও জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন হয়নি। ফলে ভুক্তভোগীরা এবার সাককুর পরিবর্তে অন্য কাউকে পছন্দ করেছে।
এমপির বিরোধিতা:
এবারের নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের আনুকূল্য না পাওয়া মনিরুলের পরাজয়ের কারণের তালিকায় আছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের নেতাকর্মী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভোট সাক্কু পেলে খুব সহজেই বিজয়ী হতে পারতেন।
কর্মীর অভাব:
সাক্কু মূলত বিএনপির নেতা। ফলে তার কর্মীরাও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করায় ওইসব কর্মীরা আর তার সঙ্গে থাকেনি। ফলে অনেকটা একা হয়ে পড়েন সাক্কু। পুরো নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে তাকে একা একাই লড়তে হয়েছে।
প্রচারণায় ঘাটতি :
নেতাকর্মী ও দলীয় সমর্থন হারিয়ে সাক্কু একা একা লড়েছেন। ফলে তার নির্বাচনি প্রচারণা ছিল দুর্বল। বিরোধীরা মাঠে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালালেও সাক্কুর পক্ষে প্রচারণা ছিল খুবই সামান্য। ফলে ভোটারদের সামনে বিরোধীদের প্রচারণার জবাব পৌঁছতে পারেননি সাককু।
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। এতে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে আ.লীগ দলীয় প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত নির্বাচিত হয়েছেন। ১০১টি কেন্দ্রে তিনি ৫০ হাজার ৩১০ ভোট পেয়েছেন। রিফাতের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট।
স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হয়।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page