০৪:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কুমিল্লায় ৪ বছরের শিশু ধর্ষণ, প্রধান আসামি বাবু গ্রেফতার মুরাদনগরে ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন ইন বাংলাদেশের আওতায় পার্টনার কংগ্রেস অনুষ্ঠিত কুমিল্লা মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সভায় নতুন কমিটি গঠন গৌরসার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে রাজকীয় বিদায় দিলেন এলাকাবাসী কুমিল্লায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল ও গণজুতা নিক্ষেপ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি উন্মুক্তের দাবিতে ছাত্রদলের স্মারকলিপি কুমিল্লার বুড়িচংয়ে কলেজ ছাত্র তুহিন হত্যার এক আসামি গ্রেফতার প্রাকৃতিক গ্যাসের উপজেলা মুরাদনগর: ১০ ভাগ পরিবারেরই নেই গ্যাস সংযোগ আন্তর্জাতিক নির্যাতিত সাংবাদিক দিবসে কুমিল্লায় নির্যাতিত সাংবাদিকদের সম্মাননা কুমিল্লায় বিয়ের এক মাস না যেতেই লরির নিচে পিষ্ট হয়ে প্রবাসীর মৃত্যু

আবাসিক সংকট চরমে, বাধ্য হয়ে মেসে থাকছেন কুবি শিক্ষার্থীরা

  • তারিখ : ০৫:২৬:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
  • 423

বি এম ফয়সাল, কুবি।।
প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পরও শতভাগ আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত হয়নি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৬ হাজার ৪৬১ জন। তন্মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি আবাসিক হলে ১ হাজার ৪৭০ জন শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পেয়েছেন এবং ৪ হাজার ৯৯১ জন শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধার বাহিরে রয়েছেন। সে হিসেবে মাত্র এক তৃতীয়াংশের কম শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পাচ্ছেন। এদিকে বাকী শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের বিভিন্ন মেসে থাকতে হচ্ছে।

শুধু তাই নয় অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে কোটবাড়ির রামপুর,গন্ধমতি, খান বাড়ি, দক্ষিণ চাঙ্গিনী মোড়, পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় মেসে থাকছেন। পাশাপাশি অনেক শিক্ষার্থী কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন মেস ভাড়া করে থাকছেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপের সৃষ্টি হচ্ছে। মেস ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এর দরুন পরিবারের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে নতুন বছর এলে মেস মালিকরা ভাড়া বাড়াচ্ছেন। এছাড়াও ক্যাম্পাসের বাহিরে থাকায় নিরাপদ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে দ্বিগুণ চাপে পড়তে হচ্ছে আবাসিক সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদের ১৯টি বিভাগে মোট শিক্ষার্থী ৬ হাজার ৪৬১ জন। এর মধ্যে পাঁচটি হলে আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৪৭০ জন এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থী প্রায় ৫ হাজার। এদিকে বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কাজী নজরুল ইসলাম হলে সিট সংখ্যা ১৮০টি হলেও ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী হলে থাকছেন। বিজয়-২৪ হলের সিট সংখ্যা ৪৬০ এবং শিক্ষার্থী থাকছেন ৫২০ জন। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে সিট সংখ্যা ১৪৬ টি এবং শিক্ষার্থী থাকছে ১৭০ জন। সুনীতি-শান্তি হলে সিট সংখ্যা ৩৮৪ টি এবং নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলে সিট ৩০০ টি।

তীব্র আবাসিক সংকটের কারণে মেস মালিকদের কাছে জিম্মি হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে থাকতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেসে ও ভাড়া বাড়িতে। এ সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে গড়ে উঠেছে রমরমা মেস বাণিজ্য। বিকল্প না থাকায় মেস মালিকরা স্বেচ্ছাচারী আচরণ করেন। এতে বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেও মেসের চড়া দামের খাবার বিল দিয়ে অতি কষ্টে দিন পার করছেন আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে হলে হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী সিট পেলেও সেখানে নেই পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ।

আবাসিক সুবিধা বঞ্চিত কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবাসন সংকটের কারণে প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। প্রতিমাসেই সিট ভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা সম্ভব হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সচরাচর সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।

নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী জানায়, এক রুমে চারজনের পরিবর্তে ৮ জন থাকতে হচ্ছে তাদের ।এতে করে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। পরিবারের কাছ থেকে তেমন আর্থিক সুবিধা না পাওয়ায় কষ্ট হলেও গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে তাদের।

নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নওশিন আফরোজ(ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ”এক রুমে আটজন থাকা, ছোট এক বেডে দু’জন গাদাগাদি করে থাকা লাগে। এতে করে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে কষ্ট হচ্ছে। এই বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুতই উদ্যোগ নেওয়া দরকার।”

অনাবাসিক শিক্ষার্থী তানভির ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আবাসিক হলে সিট না পাওয়া সত্যি অনেকটা আক্ষেপ ও খারাপ লাগার। আবাসন সংকটের মূল কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় হল সংখ্যা অপ্রতুল। একই সঙ্গে হলে বৈধ পন্থায় সিট বণ্টনে রয়েছে প্রশাসনের উদাসীনতা ও যথাযথ উদ্যোগের অভাব।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় না। তাই আবাসিকতার সমস্যাটি হচ্ছে। তবে নতুন ক্যাম্পাসের হল চালু হলে আমরা প্রথম কয়েক বছর পূর্ণাঙ্গ আবাসিকতা দিতে পারবো।’

error: Content is protected !!

আবাসিক সংকট চরমে, বাধ্য হয়ে মেসে থাকছেন কুবি শিক্ষার্থীরা

তারিখ : ০৫:২৬:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

বি এম ফয়সাল, কুবি।।
প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পরও শতভাগ আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত হয়নি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৬ হাজার ৪৬১ জন। তন্মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি আবাসিক হলে ১ হাজার ৪৭০ জন শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পেয়েছেন এবং ৪ হাজার ৯৯১ জন শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধার বাহিরে রয়েছেন। সে হিসেবে মাত্র এক তৃতীয়াংশের কম শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পাচ্ছেন। এদিকে বাকী শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের বিভিন্ন মেসে থাকতে হচ্ছে।

শুধু তাই নয় অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে কোটবাড়ির রামপুর,গন্ধমতি, খান বাড়ি, দক্ষিণ চাঙ্গিনী মোড়, পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় মেসে থাকছেন। পাশাপাশি অনেক শিক্ষার্থী কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন মেস ভাড়া করে থাকছেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপের সৃষ্টি হচ্ছে। মেস ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এর দরুন পরিবারের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে নতুন বছর এলে মেস মালিকরা ভাড়া বাড়াচ্ছেন। এছাড়াও ক্যাম্পাসের বাহিরে থাকায় নিরাপদ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে দ্বিগুণ চাপে পড়তে হচ্ছে আবাসিক সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদের ১৯টি বিভাগে মোট শিক্ষার্থী ৬ হাজার ৪৬১ জন। এর মধ্যে পাঁচটি হলে আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৪৭০ জন এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থী প্রায় ৫ হাজার। এদিকে বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কাজী নজরুল ইসলাম হলে সিট সংখ্যা ১৮০টি হলেও ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী হলে থাকছেন। বিজয়-২৪ হলের সিট সংখ্যা ৪৬০ এবং শিক্ষার্থী থাকছেন ৫২০ জন। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে সিট সংখ্যা ১৪৬ টি এবং শিক্ষার্থী থাকছে ১৭০ জন। সুনীতি-শান্তি হলে সিট সংখ্যা ৩৮৪ টি এবং নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলে সিট ৩০০ টি।

তীব্র আবাসিক সংকটের কারণে মেস মালিকদের কাছে জিম্মি হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে থাকতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেসে ও ভাড়া বাড়িতে। এ সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে গড়ে উঠেছে রমরমা মেস বাণিজ্য। বিকল্প না থাকায় মেস মালিকরা স্বেচ্ছাচারী আচরণ করেন। এতে বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেও মেসের চড়া দামের খাবার বিল দিয়ে অতি কষ্টে দিন পার করছেন আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে হলে হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী সিট পেলেও সেখানে নেই পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ।

আবাসিক সুবিধা বঞ্চিত কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবাসন সংকটের কারণে প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। প্রতিমাসেই সিট ভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা সম্ভব হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সচরাচর সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।

নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী জানায়, এক রুমে চারজনের পরিবর্তে ৮ জন থাকতে হচ্ছে তাদের ।এতে করে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। পরিবারের কাছ থেকে তেমন আর্থিক সুবিধা না পাওয়ায় কষ্ট হলেও গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে তাদের।

নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নওশিন আফরোজ(ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ”এক রুমে আটজন থাকা, ছোট এক বেডে দু’জন গাদাগাদি করে থাকা লাগে। এতে করে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে কষ্ট হচ্ছে। এই বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুতই উদ্যোগ নেওয়া দরকার।”

অনাবাসিক শিক্ষার্থী তানভির ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আবাসিক হলে সিট না পাওয়া সত্যি অনেকটা আক্ষেপ ও খারাপ লাগার। আবাসন সংকটের মূল কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় হল সংখ্যা অপ্রতুল। একই সঙ্গে হলে বৈধ পন্থায় সিট বণ্টনে রয়েছে প্রশাসনের উদাসীনতা ও যথাযথ উদ্যোগের অভাব।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় না। তাই আবাসিকতার সমস্যাটি হচ্ছে। তবে নতুন ক্যাম্পাসের হল চালু হলে আমরা প্রথম কয়েক বছর পূর্ণাঙ্গ আবাসিকতা দিতে পারবো।’