নেকবর হোসেন।।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন নামে পেজ খুলে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতারণার মাধ্যমে মোবাইল সেট ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে অনলাইন প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ কুমিল্লার তিন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৩০ মে) লাকসাম উপজেলার লাকসাম দক্ষিণ বাইপাস সংলগ্ন এলাকা থেকে এই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার (৩১ মে) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান।
গ্রেফতার ৩ প্রতারক হচ্ছে- চক্রের মূল হোতা কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ওয়াশিম মজুমদারের পুত্র সৌরভ আলী মজুমদার শুভ (২২), তার সহযোগী একই এলাকার ইব্রাহিমের পুত্র আনিসুল হক শাহীন(১৯) এবং লাঙ্গলকোট মক্রবপুর ইউনিয়নের সহিদুল ইসলামের পুত্র সাকিব (১৯)। এসময় তাদের কাছ থেকে আইফোন, স্যামসাংসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৮টি মোবাইলফোন জব্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন গ্রুপে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য মোবাইল ফোনের লোভনীয় বিজ্ঞাপন আপলোড করে। এসব পোস্টে সেট এক্সচেঞ্জ করারও অফার দেয়া হয়।
তখন ক্রেতাগণ পোস্টে কমেন্ট করে মোবাইল ফোন ক্রয় বা এক্সচেঞ্জ করতে চাইলে ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত সুকৌশলে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। ৪/৫ দিন পরে তাদের ভূয়া নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর হতে পুলিশের এসআই পরিচয়ে দিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের সরলতার সুযোগ নেয়। প্রতারক চক্রটি তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর দিয়ে পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার অফিসার-এর পরিচয়ে কল করে বিভিন্ন পেশার লোকজনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে হোয়াটসঅ্যাপ-ট্রুকলার অ্যাপস-এর মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছিল।
পুলিশ সুপার জানান, সম্প্রতি এমনই এক প্রতারণার শিকার হন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নজিম উদ্দিন আরশাদ নামে এক যুবক। প্রতারকরা তাকে লাকসাম থানার এসআই তারেক পরিচয়ে ফোন করে জানায়- তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি মার্ডার মামলার নিহত ব্যক্তির মোবাইল ফোন। চক্রটি তার কাছে থাকা ফোনটি আলামত হিসেবে দিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ১৫ হাজার টাকা দাবি করে। অন্যথায় তাকে মার্ডার মামলার আসামী করা হবে বলে জানায়। ভিকটিম ভয় পেয়ে প্রতারকদের দেওয়া বিকাশ নাম্বারে টাকা এবং সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস লাকসাম শাখায় স্যামসাং এ ৭১ সিরিজের মোবাইল ফোনটি প্রেরণ করে।
কিন্তু একই দিনে প্রতারক আবারো টাকা দাবি করলে ভিকটিমের সন্দেহ হয়। সে বিষয়টি লাকসাম থানা ওসির সরকারী নাম্বারে ফোন করে অবগত করে। ওসি লাকসাম বিষয়টি আমাকে জানালে আমি তাৎক্ষণিক তাদেরকে খুঁজে বের করার নির্দেশনা প্রদান করি। লাকসাম থানা পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে প্রতারক চক্রটির উপর নজরদারি অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। জব্দ করা হয় আটটি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন। এই মোবাইলগুলো তারা অনলাইন প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজাল হোসেন, লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) মাহফুজ আহমেদসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন প্রতারণার ফাঁদ পেতে থাকা চক্রের মূল হোতাকে খুঁজে বের করতে গ্রেফতার আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page