মনোয়ার হোসেন।।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে স্বামীর বাড়ী থেকে তানিয়া আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সংবাদ পেয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি (তদন্ত) রাজীব চক্রবর্তী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নিহত তানিয়া উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বসন্তপুর মোক্তার বাড়ীর অটোচালক আজাদ হোসেনের স্ত্রী ও একই ইউনিয়নের বৈলপুর গ্রামের শফিকুর রহমানের মেয়ে। তার ১ ছেলে ও ২ কন্যা সন্তান রয়েছে। নিহতের পরিবারের দাবি যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামী আজাদ হোসেনই পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। ঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী আজাদ হোসেন ও তার পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইউসুফ নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহতের স্বামী আজাদ হোসেন ঈদুল আযহার সময় বিদেশ যাওয়ার কথা বলে তানিয়াকে তার বাবার বাড়ি থেকে ২ লাখ টাকা যৌতুক আনতে বলে। বাবার বাড়ী থেকে টাকা এনে না দেয়ায় বিভিন্ন সময় আজাদ তার স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। গত দুইদিন আগে টাকা আনার জন্য আবারো চাপ প্রয়োগ করে। এর জেরে বুধবার রাতের কোনো এক সময় বিদ্যুতের তার দিয়ে পেঁছিয়ে তাকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়ছে বলে জানিয়েছে নিহতের পরিবারের লোকজন। নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে।
নিহত গৃহবধূ তানিয়ার মা মায়া বেগম বলেন, ‘আমার মেয়েকে তার স্বামী আজাদ হোসেন যৌতুকের টাকার জন্য প্রায়ই মারধর করতো। কোরবানীর ঈদের আগে বিদেশ যাওয়ার কথা বলে আজাদ ২ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে আমরা টাকা দিতেও রাজি হই, কিন্তু টাকা জোগাড় করতে দেরি হওয়ায় আজাদ গত দুইদিন আগে আমাকে মোবাইলে হুমকি দিয়ে বলে, “আগামী দু’দিনের মধ্যে টাকা না দিলে পরে তার রেজাল্ট পাবেন”। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তানিয়ার স্বামীর বাড়ির পাশের আমার নিকটাত্মীয় পেয়ারা বেগমের মাধ্যমে তানিয়ার মৃত্যু সংবাদ শুনে আমি সহ পরিবারের লোকজন ছুটে আসি। এসে দেখি, তানিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ। যৌতুকের টাকা দিতে দেরি হওয়ায় আজাদ আমার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। আমি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে হত্যাকারীর বিচার চাই’।
তানিয়ার বড় বোন শেফালী বেগম বলেন, ‘কোরবানীর আগেও স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তানিয়া বাবার বাড়ি চলে আসে। পরে তার শ^শুর-শ^াশুড়ি আমাদের বাড়িতে গিয়ে তাকে বুঝিয়ে আবার নিয়ে আসে। এর আগেও একবার আজাদ আমার বোনকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। আমার বোনের হত্যার বিচার চাই।’
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুরতহাল শেষে গৃহবধূ তানিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের হাত-পা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page