মনির হোসাইন।।
কুমিল্লার মুরাদনগরে ঘরের পাশের একাধিক খনি থেকে গ্যাস উত্তেলন হলেও আবাসিক খাতে জ্বালানী গ্যাস বঞ্চিত অধিকাংশ পরিবার। প্রাকৃতিক গ্যাসের নগরী মুরাদনগরকে বলা হলেও এসব গ্যাস ক্ষেত্রের গ্যাসের সুবিধা পায়নি হাজার হাজার পরিবার।
সাধারন মানুষের দাবী মুরাদনগরের গ্যাস দিয়ে দেশের বৃহৎ শিল্প কারখানা ও আবাসিক খাতে হাজার হাজার পরিবার এর সুফল ভোগ করলে মুরাদনগরের মানুষ এর সুফল পাচ্ছে নামমাত্র। মুরাদনগরে আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করছেন ১২হাজার গ্রাহক। যা মুরাদগরের শতকরা হিসেবের ১০% পরিবার প্রকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করছেন।
মুরাদনগর উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন, ৩০৮ টি গ্রামের মধ্যে মুরাদনগর সদরে আবাসিক খাতে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারকারী চোখে পরার মত। তাছারা অন্য কয়েকটি ইউনিয়নে নামমাত্র কিছু পরিবার গ্যাস ব্যবহার করছেন।মুরাদনগর উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক পরিবারের একমাত্র ভরসা মাটির চুলা, লাকড়ি, খড়, কাঠ ও গাছের শুকনো পাতা দিয়ে পরিবারের রান্নার কাজ চলছে। তাছাড়া উচ্চবিত্ত কোন কোন পরিবার আবার বাড়তি টাকা দিয়ে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন।
গ্যাস না পাওয়ায় উপজেলা সদর সহ বিভিন্ন জায়গায় বহুতল ভবন মালিকরা রয়েছেণ বিপাকে। মুরাদনগরের গ্যাস দিয়ে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভাড়ায় চলছে লাখ লাখ বাসা বাড়ি ও কল-কারখানা। কিন্তু ঘরের পাশে গ্যাসের খনি থাকলেও এ ঘরেই নেই গ্যাস। এ যেন বাতির নীচে অন্ধকার।জানা যায়,বলা হয়ে থাকে মুরাদনগর উপজেলা প্রকৃতিক গ্যাস এর উপর ভাসমান। কুমিল্লা জেলায় একমাত্র উপজেলা মুরাদনগর হতে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তেলিত হয়।
মুরাদনগর উপজেলায় অবিস্থিত বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ড, বাঙ্গরা গ্যাস ফিল্ড, শ্রীকাইল-৩ (মুকলিশপুর) গ্যাস ফিল্ড থেকে প্রতিদিন উত্তেলন করা হচ্ছে বিপুল পরিমান প্রাকৃতিক গ্যাস। বাখরাবাদ ফিল্ডের গ্যাস বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোঃ লিঃ এর মাধ্যমে সরবরাহ হচ্ছে। শ্রীকাইল-৩ (মকলিশপুর) ও বাঙ্গরা গ্যাস ফিল্ডের গ্যাস বাপেক্স এবং বেসরকারী কোম্পানী তাল্লো যৌথভাবে উত্তোলন ও সরবরাহ করছে।
প্রথমে এ উপজেলায় ১৯৬৯ সালে তৎকালিন পাকিস্তান সরকার শেলওয়ে কোম্পানিকে বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রটি আবিষ্কার করে এখানে মোট মজুদ গ্যাসের পরিমাণ ১.০৪৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট,(টিসিএফ)। ১৯৮৪ সালে বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্র থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়।
বাখরাবাদের কনডেনসেট ও গ্যাসের অনুপাত ০.৭০ এবং পানি ও গ্যাসের অনুপাত ১৩.৮৮ বিবিএল/মিলিয়ন ঘনফুট। এখানকার কন্ডেনসেটকে প্রক্রিয়াজাত করে পেট্রোল, ডিজেল, তৈরি করা হয়। এ ফিল্ড থেকে প্রায় প্রতিদিন ৩০-৩৫মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হচ্ছে। তারপর শ্রীকাইল গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কার হয়ে ২০১৩ সালের ২৯ মার্চ থেকে শ্রীকাইল গ্যাস ফিল্ডের গ্যাস । এই ফিল্ডে জাতীয় গ্রিডে ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে। ২০১২ সালে বাঙ্গরা মকলিশপুর গ্রামে আবিষ্কৃত গ্যাস ফিল্ড থেকে ৭মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হচ্ছে।
স্থানীয় সুত্রে আরো জানা যায়, ২০১৪ সালে গ্যাস পাওয়ার দাবিতে ” আমাদের গ্যাস আমাদের অধিকার ” আন্দেলনের অংশ হিসাবে মুরাদনগর উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন থেকে প্রায় লক্ষাধিক লোকের গন স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়েছিল। এবং এই গন স্বাক্ষর তৎকালীন প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। আন্দোলনের প্রায় এক যুগ পার হতে চলছে তবুও এ উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরন হয়নি। তবে দিন যতই গড়াচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাসের মজুদ ততই কমছে। আর মুরাদনগর বাসীর গ্যাস পাওয়া অনিশ্চয়তা’র শংঙ্কা যেন দিন দিন বাড়ছে।
বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ড কো: লি: অবস্থিত এলাকা জাহাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ সওকত আহমেদ মীর বলেন, শুধু জাহাপুর ইউনিয়নের মানুষের নয়, মুরাদনগর উপজেলার সর্ব-সাধারন মানুষের প্রানের দাবী এ উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগের। এ উপজেলায় উত্তেলিত প্রাকৃতিক গ্যাস রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাবহৃত হচ্ছে। তারপরও মুরাদনগরবাসী আবাসিক খাতে গ্যাস থেকে বঞ্চিত। সরকারের নিকট আমাদের প্রানের দাবী আমাদের এলাকায় উৎপাদিত গ্যাস আমাদের ব্যবহার করার জন্য যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করেন।
বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির ডিজিএম মোঃ আব্দুর রহিম প্রমাণিক বলেন, আমরা এখান থেকে গ্যাস উৎপাদন করে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত করি। গ্যাস বিপণন বা সংযোগ দেওয়ার কাজ আমাদের নয়। যারা গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন করে তারা এ বিষয়ে আরো ভালো বলতে পারবেন।









