স্টাফ রিপোর্টার।।
কুমিল্লায় সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী মওদুদ আব্দুল্লাহ শুভ্র দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী ও সাইবার অপরাধী চক্রের হুমকি, হামলা, চাঁদাবাজি ও সামাজিক সম্মানহানির শিকার হচ্ছেন। তার দায়ের করা একাধিক মামলার জেরে চক্রটি মামলা প্রত্যাহার, মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকিসহ নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মওদুদ।
তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকে তার ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এরমধ্যে রয়েছে ২০১৭ সালের ৩ মে ও ২০১৮ সালের ২৮ জুন দায়ের করা দুটি গুরুত্বপূর্ণ জিডি।
মওদুদ অভিযোগ করেন, বরুড়া থানাধীন নিমসার এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হওয়ার পর তিনি আদালতে মামলা দায়ের করলে তদন্ত চলাকালে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য তাকে চাপ দেওয়া হয়। এরপর ২০২০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা শহরের ইসলামপুরে তার বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো হয়।
পরে ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা (মামলা নম্বর: ৪১, জি.আর. নম্বর: ৮৫০/২৪) দায়ের করেন মওদুদ। এই মামলায় ৮ জন এজহারভুক্ত এবং আরও ৫-৬ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। পুলিশ ও যৌথবাহিনী একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও বাকি আসামিরা পলাতক রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময়ে পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকে মামলা প্রত্যাহার ও ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছে বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি ২০২৫ সালের ৯ জুলাই অপরাধীরা নতুন একটি মোবাইল নম্বর (০১৩৪২-৭১৩৮১২) থেকে ফোন ও মেসেজের মাধ্যমে মওদুদকে প্রাণনাশ, অশ্লীল ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি এবং তার বাসার পানির ট্যাংকিতে বিষ মিশিয়ে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানায়।
এছাড়া, গত বছরের ৪ আগস্ট টিক্কাচর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করা হয়। এ ঘটনায় কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দ্রুত বিচার আইনে মামলা (দ্রুত সিআর ৩৬/২৪) দায়ের হলে তদন্তে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অপরাধের প্রমাণ মেলে। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।
এদিকে, আসামিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেক আইডি খুলে মওদুদকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে এবং তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনায় গত ২৯ মে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় আবারও অনলাইনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জিডি (নং: ২২৪২) করেন মওদুদ।
এই জিডির পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের অনুমতি নিয়ে ৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে একটি নন-এফআইআর মামলা (নন-জিআর নং: ২০/২৫) রুজু করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি হলেও তারা তা গ্রহণ না করে আদালত অবমাননা করছে। ইতোমধ্যে আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রস্তুতি নিয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মুহিনুল ইসলাম বলেন, “সাংবাদিক মওদুদের দায়ের করা একাধিক মামলা ও জিডির বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। ইতোমধ্যে একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে এবং অপরাধীদের চক্রটি আইনের আওতায় আনতে পুলিশ হার্ডলাইনে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে অতীতেও একাধিক মামলা রয়েছে এবং এসব মামলার তদন্তে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে।
সাংবাদিক মওদুদ আব্দুল্লাহ শুভ্র সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে দ্রুত বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।