নেকবর হোসেন।।
কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাস উদ্দিপনা দেখা দিয়েছে। কুমিল্লাজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আগামী ২৬ নভেম্বর কুমিল্লার ঐতিহাসিক টাউনহল মাঠে বিভাগীয় গণসমাবেশ করবে বিএনপি। কুমিল্লা ছাড়াও চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি যুক্ত থাকছে এ গণসমাবেশে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। সরকার পতনের আন্দোলন তরান্বিত করতে এবং বহৎ আন্দোলনে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতেই এ সমাবেশের আয়োজন বলে জানান বিএনপি নেতাকর্মীরা।
গণসমাবেশকে সামনে রেখে বুধবার টাউনহলের মাঠের পশ্চিম-উত্তর কোণে মঞ্চ তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম রাখা হয়েছে এবং কাজ চলছে । এদিকে মাঠের পূর্ব পাশে ২৪ নভেস্বর পর্যন্ত বইমেলা চললেও মঞ্চ তৈরির কাজে কোন সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এছাড়া কুমিল্লার এ গণসমাবেশকে ঘিরে এখন পর্যন্ত কোনরকম বাধাবিপত্তির মুখে পড়তে হয়নি বিএনপিকে। মঞ্চ তৈরিসহ আনুসঙ্গিক কাজ তদারকি করছেন দুটি গ্রুপে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সদস্য ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। তাদের নেতৃত্বে ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলের দিকে খেয়াল রাখছেন। পাশাপাশি তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে নগরীতে ঘরোয়া বৈঠক, প্রচার মিছিল ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করছেন। ইতোমধ্যে নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও বিলবোর্ড সাঁটিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এদিকে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও অপর মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার দলের বহিস্কারাদেশ মাথায় নিয়েও সমাবেশ সফল করতে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নগরীতে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, টাউনহল মাঠের পশ্চিম-উত্তর কোণে মঞ্চ ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে। কান্দিরপাড় এলাকায় সমাবেশস্থলের পাশে বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও ব্যানারে সয়লাব। এ ছাড়া নগরী ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় সবকটি ওয়ার্ডেই পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন সাঁটানো আছে।দলের শীর্ষ নেতাদের স্বাগত জানিয়ে এসব ব্যানার-ফেস্টুন টানানো হয়েছে। গোটা কুমিল্লাজুড়ে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব।
এদিকে কুমিল্লার এ সমাবেশে টাউনহল মাঠ ছাড়াও আশপাশের রাস্তায় মানুষজনের ব্যাপক সমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। এ কারণেই কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও উপজেলাগুলোতে কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা নিয়মিত গণসংযোগ, পথসভা, লিফলেট বিতরণ, প্রচারমিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। সমাবেশে দলটি লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কুমিল্লা বিএনপির রাজনীতি দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াছিন। অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সদস্য ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু তাদের উদ্যোগে কুমিল্লার বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।অতিথি নেতাকর্মীদের জন্য মহানগরের কয়েকশ’ ফ্ল্যাট এবং বাড়ি খালি করা হয়েছে। এছাড়াও নির্মাণাধীন ভবনেও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন জানান, সব বাধা উপেক্ষা করে আমরা কুমিল্লায় গণসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে কাজ করছি, এরই মধ্যে আমরা প্রশাসনের পক্ষ হতে লিখিতভাবে মাঠের অনুমোদন পেয়েছি। এটা জনসভা হবে না এইটা জনসমুদ্রে রূপান্তর হবে। গণসমাবেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি ঠেকাতে পারবে না। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে সমাবেশ সফলে কাজ করছেন।
কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া জানান, সমাবেশ সফল করতে সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। নগরীর প্রতিটি পয়েন্টে মাইক থাকবে। এ ছাড়া অন্তত আটটি স্থানে বড় পর্দায় সরাসরি সমাবেশের কার্যক্রম দেখা ও বক্তব্য শোনার ব্যবস্থা রাখা হবে।আমাদের প্রত্যাশা, সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক উপস্থিতি ঘটবে। টাউনহল মাঠের সমাবেশ হবে স্মরণকালের বড় সমাবেশ। সরকার সমর্থক পরিবহন নেতারা দু’দিন আগেই হরতাল দিতে পারেন, এমন ধারণা নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে নেতাকর্মীকে সমাবেশস্থলে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক উৎবাতুল বারী আবু বলেন, আমরা সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমাদের বিশ্বাস,শান্তিপূর্ণভাবে একটি সফল গণসমাবেশ আমরা করতে পারবো।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, কুমিল্লা বিএনপির ঊর্বর ভূমি। এ সমাবেশের মাধ্যমে তারেক রহমানের নির্দেশে দলকে সুসংগঠিত করে এই সরকারের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি করা হবে। যে কোনো মূল্যে আমরা আমাদের সমাবেশ সফল করব। দূরদূরান্ত থেকে আমাদের এখানে যারা আসবেন তাদের জন্য আমরা থাকা-খাওয়া সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছি।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page