নিউজ ডেস্ক।।
কুমিল্লা-৬ (সদর-সিটি-সেনানিবাস) আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন সম্প্রতি দলীয় কয়েকটি অনুষ্ঠানে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক ওরফে সাক্কুকে নিয়ে বিষোদ্গার করেছেন। তিনি সাবেক মেয়রকে ‘ডাকাত’ আখ্যায়িত করে তাঁর সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং টাকা ছাড়া ভবনের নকশা পাস না করার অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে মতবিনিময় সভায় সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিনের অভিযোগের পাল্টা জবাব দেন মনিরুল হক। এ সময় তিনি সংসদ সদস্যকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে পাল্টা বিভিন্ন অভিযোগ করেন। সংসদ সদস্য ও সাবেক মেয়রের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে নগরজুড়ে চলছে নানা আলোচনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে ও ২০১৭ সালে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উভয় নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জয়ী হন বিএনপির মো. মনিরুল হক। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত আড়াই বছর বিলুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভার মেয়রও ছিলেন তিনি। একই সময়ে কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন। এ সময়ে বাহাউদ্দিন ও মনিরুল হকের মধ্যে বেশ সুসম্পর্ক ছিল।
বাহাউদ্দিনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে দলে সমালোচিত হন তিনি। ২০২২ সালে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে বাহাউদ্দিনের অনুসারী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক মেয়র নির্বাচিত হন। এর পর থেকে মনিরুল হকের বিরুদ্ধে নকশা অনুমোদনের নামে টাকা লুটপাট, শহরকে ঘিঞ্জি করার অভিযোগ করেন সংসদ সদস্য।
৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ মাঠে মহানগর আওয়ামী লীগের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সম্মেলন হয়। অনুষ্ঠানে সাবেক মেয়রের উদ্দেশে সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বলেন, ‘সাক্কু ছিল ডাকাত, কুমিল্লার মানুষের টাকা লুট করে সে কানাডায় ব্যবসা করে।’ এরপর ৭ সেপ্টেম্বর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মনিরুল হক তিন টার্ম কুমিল্লার মেয়র ছিলেন। কিন্তু কোনো উন্নয়ন হয়নি। সাক্কু মেয়র ছিলেন, আকবর হোসেন মন্ত্রী ছিলেন। তারপরও কোনো উন্নয়ন হয় নাই। কিন্তু আমি যখন এমপি হলাম, আমি টাকা এনে দিয়েছি, সাক্কু সাহেব লুটপাট করে নিয়ে গেছে। কুমিল্লার মানুষের রক্ত বেচার টাকা দিয়ে সে ৭৮টি ফ্ল্যাট করেছে। এই ৭৮টি ফ্ল্যাট কোথা থেকে আসল? সারা শহরে টাকা নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বিল্ডিংয়ের প্ল্যান পাস করেছে।’ সর্বশেষ ৮ সেপ্টেম্বর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সম্মেলনেও সংসদ সদস্য একই ধরনের অভিযোগ করেন।
জানতে চাইলে সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক শনিবার রাতে গনমাধ্যমকে বলেন, শহরে তাঁর বড় একটি জমি আছে। সেখানে বহুতল ভবন বানিয়েছে ডেভেলপার। তিনি শতাংশ হিসেবে ফ্ল্যাট পেয়েছেন। শহরে কীভাবে পরিকল্পনা পাস হয়েছে, তিনি জানেন। ১২ বছর তাঁর সঙ্গে মিলে তিনি সিটি করপোরেশন চালিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ধৈর্যের একটা সীমা আছে, যা ইচ্ছা তা বললেই হলো। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ওই নির্বাচনে আমি প্রার্থী হব। জেলাসি থেকে তিনি আমার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত বক্তব্য দিচ্ছেন। উনি বলাতে আমাকেও বলতে হলো। আমি অন্যায় করলে দেশে কোর্ট আছে, ইনকাম ট্যাক্স অফিস আছে। তারা তদন্ত করে আমার বিচার করবে।’
বাহাউদ্দিনের অভিযোগের বিষয়ে ৮ সেপ্টেম্বর রাতে নানুয়াদিঘির পাড়ে নিজ বাসভবনে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন মনিরুল হক। ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আয়োজিত ওই মতবিনিময় সভায় তিনি সংসদ সদস্যকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। মনিরুল হক বলেন, ‘ওনার (বাহাউদ্দিন) জিদ হলো, আমি কেন ইলেকশন করলাম। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি বিএনপির কাছে মনোনয়ন চাইব। দল মনোনয়ন না দিলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করব। আমি মানুষের ভালোবাসা চাই। জনগণ যদি খায় (চায়), ওনারে ভোট দেবে।’
সাবেক মেয়র বলেন, ‘১২ বছর আমি সাক্কু বালা (ভালো) ছিলাম। এহন খারাপ হইয়া গেছি। ১২ বছর—এক যুগ সংসার করেছি। কাজের স্বার্থে ওনার সঙ্গে আমার আন্তরিক সম্পর্ক। এখন আমি খারাপ। উনি এমপি, সরকার উনার। দেশে আইন আছে, প্রশাসন আছে। বিচার করবে সরকার, প্রশাসন। সিটি করপোরেশনে সব ফাইল আছে। হেরে কন না, আমার বিরুদ্ধে মামলা দিতে। উনি তিনবার হজ করেছেন। আমিও উনার লগে একবার হজ করেছি। কেন এসব প্রোপাগান্ডা করেন? আমারে মানুষের কাছে ছোড করেন ক্যা?’
মনিরুল হক বলেন, ‘আমি যদি চুরি কইরা থাকি, যাইয়া কেস দিয়ে দেন। হেরে কন আমার নামে একটা কেইস দিয়ে দিতে। আজ থেকে আমি চোর। উনি কিছু না। যদি বাঘের বাইচ্ছা হয়ে থাকেন এটা দেন। হেডা দিত না। ইনকাম ট্যাক্স অফিস আছে। তারা তদন্ত করবে। আমি ফেস করব। ব্যক্তিগতভাবে মানুষকে ডাইক্কা এনে কারও বিরুদ্ধে বলা ঠিক না। আজকা থেকে দেড় বছর আগে আমরা এক লগে ছিলাম। আমি যে চোর, কুমিল্লা শহরে কেউ তো কয় না। এসব বলে আমি তো ছোড হই না, ছোড হন আপনে (বাহাউদ্দিন)।’
তিনি বলেন, ‘আমি ইলেকশনের তফসিল ঘোষণা করলে সব বলব। এখন বলার সময় অইছে না। এক হাতে তালি বাজে না। ভাই, এক হাতে কখনো তালি বাজে না। আমি চোর, উনি কিছু না। আমি ডাকাত, উনি কিছু না।’
দুই নেতার পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার তিনজন শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী ও ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এমন বাহাস হবেই। দুজনই সংসদ নির্বাচন করবেন। সিটি নির্বাচনের আগেও দুজনের ঘনিষ্ঠতা ছিল। এটা নিয়ে এখনই মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।
সূত্র- প্রথম আলো।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page