০২:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বুড়িচং এরশাদ ডিগ্রী কলেজের রুবি জয়ন্তী উপলক্ষে ৯৭ ব্যাচের আলোচনা ও রেজিস্ট্রেশন দেবিদ্বারে সাড়ে তিন বছরের শিশুকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত চৌদ্দগ্রামে কাশিনগর ইউনিয়ন দক্ষিণ ৬নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি ও কর্মী সভা বুড়িচংয়ে ৪৪টি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দুম্বার মাংস বিতরণ ব্রাহ্মণপাড়ায় মাদক সেবনে বাধা দেওয়া যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নারী উদ্যোক্তা কুমিল্লার লাভলী আক্তারকে সম্মাননা স্মারক প্রদান কক্সবাজারের আনন্দযাত্রা সড়কেই শেষ, কুমিল্লার একই পরিবারের ৫ জন নিহত ক্যান্সার আক্রান্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রভা বাঁচতে চায় মুরাদনগরে শিশু আদিবা হত্যার ঘটনায় চাচাতো ভাই গ্রেফতার কুবিতে রোটারেক্ট ক্লাবের উদ্যোগে ‘স্টাডি অ্যাবরোড’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

কুমিল্লায় দাফনের ৮ দিন পর বাড়ি ফিরলে তরুণী

  • তারিখ : ১০:০১:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪
  • 40

চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুনবতী ইউনিয়নের রাজবল্লভপুর গ্রামে মৃত তাজুল ইসলামের মেয়ে রোকসানা আক্তার (৩০) চট্টগ্রামে ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ১ জুন বেরিয়ে নিখোঁজ হন। গত ১৭ জুন স্বজনেরা খবর পান ফেনীতে এক নারীর লাশ পাওয়া গেছে। লাশটি রোকসানার বলে শনাক্তের পর পুলিশ হস্তান্তর করলে গত ১৮ জুন পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আট দিন পর রোকসানা বাড়িতে হাজির হন।

তাহলে দাফন করা নারীটি কে? ফিরে আসা তরুণীকে এক নজর দেখতে উৎসুক মানুষ তাঁর বাড়িতে ভিড় করছেন।

আজ শনিবার বিকেলে সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, মে মাসের শেষ দিকে রোকসানা আক্তার চৌদ্দগ্রামে নিজ বাড়ি থেকে ছোট ভাই সালাহ উদ্দিনের চট্টগ্রামের ষোলশহরের বাসায় বেড়াতে যান। ১ জুন ভোরে কাউকে না জানিয়ে রোকসানা বেরিয়ে যান। এরপর সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় থানায় কোনো নিখোঁজ ডায়েরিও করা হয়নি।

গত ১৭ জুন ঈদুল আজহার দিন বিকেলে ফেনী শহরে ভাড়া বাসায় অবস্থানরত খালাতো বোন হাজেরা আক্তার ও খালাতো ভাই শাহজাহান খবর পান, ফেনী শহরের জিয়া মহিলা কলেজের সামনে ড্রেনে নারীর লাশ পড়ে আছে। তাঁরা সেখানে গিয়ে রোকসানা আক্তারের চেহারার সঙ্গে মিল দেখে ভাই এবায়দুল হককে খবর পাঠান। এরই মধ্যে ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ি লাশটির সুরতহাল শেষে মর্গে পাঠায়।

রাতেই এবায়দুল হক জিয়া মহিলা কলেজের ড্রেন এলাকায় পৌঁছে আশপাশের মানুষকে বোনের ছবি দেখিয়ে লাশটি একই রকম কিনা জিজ্ঞেস করলে সবাই ছবির সঙ্গে মিল রয়েছে বলে জানান। পরে এবায়দুল হক আত্মীয় স্বজনসহ ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে লাশ উদ্ধারকারী উপপরিদর্শক প্রতুল দাসকে রোকসানার ছবি দেখান।

তাঁরা লাশটি রোকসানার বলে শনাক্ত করেন। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ এবায়দুল হকের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। ওই দিন বাদ আসর গুণবতী ইউনিয়নের রাজবল্লভপুর মধ্যমপাড়ায় সামিশকরা দীঘির দক্ষিণ পাড়ে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

লাশ দাফনের আট দিন পর গত ২৬ জুন (বুধবার) বিকেলে রোকসানা বাড়িতে হাজির হন।

তাৎক্ষণিক ঘটনাটি জানাজানি হলে বাড়ির উঠানে আশপাশের উৎসুক মানুষ তাঁকে একনজর দেখতে ভিড় জমায়। এ সময় নারী-পুরুষ তাঁকে জিজ্ঞেস করে, রোকসানা তোমাকে দাফন করলাম, তুমি কোথায় থেকে আসলে? তখন তিনি বলতে থাকেন, ‘কে বলছে আমি মারা গেছি? আমি ঢাকায় ঘুরতে গেছিলাম। শরীর খারাপ থাকায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।’ উল্টো রোকসানাই ভাই এবায়দুল হক ও সাধারণ মানুষকে প্রশ্ন করছেন, ‘আমাকে ভেবে তোমরা কোন মহিলাকে দাফন করেছ, কী তার পরিচয়?’

রোকসানা আক্তার বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম ভাইয়ের বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে ঢাকায় চলে যাই। সেখানে গিয়ে একটি চাকরি পেয়েছি। যেহেতু বাড়ি থেকে কোনো কাপড় নিয়ে যাইনি, তাই কাপড় নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়িতে ফিরে আসি। ২৬ জুন বাড়িতে এসে দরজা নক করলে আত্মীয়স্বজনেরা আমাকে দেখে হতবাক হয়েছেন। তখন আমি জানতে পারি, আমি নাকি মারা গেছি এবং আমার লাশও দাফন করা হয়ে গেছে। আমিতো জীবিত, ফিরে আসলাম।’

রোকসানার ভাই এবায়দুল হক বলেন, ‘খালাতো ভাই-বোনের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে ছবিতে কিছুটা মিল থাকার কারণে বোনের লাশ মনে করে পুলিশের কাছ থেকে লাশটি এনে দাফন করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে রোকসানা বাড়ি ফিরলে ফেনী মডেল থানায় জানানো হয়েছে।’

ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক প্রতুল দাস শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘উদ্ধার করা লাশটি বিকৃত ছিল। এবায়দুল হক ও তাঁর স্বজনেরা ছবি দেখে লাশটি রোকসানার বলে শনাক্ত করে আমার কাছ থেকে নিয়ে যায়। এখন যেহেতু তাদের বোন সশরীরে বাড়িতে উপস্থিত হয়েছে, তাই আমরা বিষয়টি নতুন করে তদন্ত করব।’

সূত্র- আজকের পত্রিকা।

error: Content is protected !!

কুমিল্লায় দাফনের ৮ দিন পর বাড়ি ফিরলে তরুণী

তারিখ : ১০:০১:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুনবতী ইউনিয়নের রাজবল্লভপুর গ্রামে মৃত তাজুল ইসলামের মেয়ে রোকসানা আক্তার (৩০) চট্টগ্রামে ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ১ জুন বেরিয়ে নিখোঁজ হন। গত ১৭ জুন স্বজনেরা খবর পান ফেনীতে এক নারীর লাশ পাওয়া গেছে। লাশটি রোকসানার বলে শনাক্তের পর পুলিশ হস্তান্তর করলে গত ১৮ জুন পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আট দিন পর রোকসানা বাড়িতে হাজির হন।

তাহলে দাফন করা নারীটি কে? ফিরে আসা তরুণীকে এক নজর দেখতে উৎসুক মানুষ তাঁর বাড়িতে ভিড় করছেন।

আজ শনিবার বিকেলে সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, মে মাসের শেষ দিকে রোকসানা আক্তার চৌদ্দগ্রামে নিজ বাড়ি থেকে ছোট ভাই সালাহ উদ্দিনের চট্টগ্রামের ষোলশহরের বাসায় বেড়াতে যান। ১ জুন ভোরে কাউকে না জানিয়ে রোকসানা বেরিয়ে যান। এরপর সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় থানায় কোনো নিখোঁজ ডায়েরিও করা হয়নি।

গত ১৭ জুন ঈদুল আজহার দিন বিকেলে ফেনী শহরে ভাড়া বাসায় অবস্থানরত খালাতো বোন হাজেরা আক্তার ও খালাতো ভাই শাহজাহান খবর পান, ফেনী শহরের জিয়া মহিলা কলেজের সামনে ড্রেনে নারীর লাশ পড়ে আছে। তাঁরা সেখানে গিয়ে রোকসানা আক্তারের চেহারার সঙ্গে মিল দেখে ভাই এবায়দুল হককে খবর পাঠান। এরই মধ্যে ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ি লাশটির সুরতহাল শেষে মর্গে পাঠায়।

রাতেই এবায়দুল হক জিয়া মহিলা কলেজের ড্রেন এলাকায় পৌঁছে আশপাশের মানুষকে বোনের ছবি দেখিয়ে লাশটি একই রকম কিনা জিজ্ঞেস করলে সবাই ছবির সঙ্গে মিল রয়েছে বলে জানান। পরে এবায়দুল হক আত্মীয় স্বজনসহ ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে লাশ উদ্ধারকারী উপপরিদর্শক প্রতুল দাসকে রোকসানার ছবি দেখান।

তাঁরা লাশটি রোকসানার বলে শনাক্ত করেন। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ এবায়দুল হকের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। ওই দিন বাদ আসর গুণবতী ইউনিয়নের রাজবল্লভপুর মধ্যমপাড়ায় সামিশকরা দীঘির দক্ষিণ পাড়ে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

লাশ দাফনের আট দিন পর গত ২৬ জুন (বুধবার) বিকেলে রোকসানা বাড়িতে হাজির হন।

তাৎক্ষণিক ঘটনাটি জানাজানি হলে বাড়ির উঠানে আশপাশের উৎসুক মানুষ তাঁকে একনজর দেখতে ভিড় জমায়। এ সময় নারী-পুরুষ তাঁকে জিজ্ঞেস করে, রোকসানা তোমাকে দাফন করলাম, তুমি কোথায় থেকে আসলে? তখন তিনি বলতে থাকেন, ‘কে বলছে আমি মারা গেছি? আমি ঢাকায় ঘুরতে গেছিলাম। শরীর খারাপ থাকায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।’ উল্টো রোকসানাই ভাই এবায়দুল হক ও সাধারণ মানুষকে প্রশ্ন করছেন, ‘আমাকে ভেবে তোমরা কোন মহিলাকে দাফন করেছ, কী তার পরিচয়?’

রোকসানা আক্তার বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম ভাইয়ের বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে ঢাকায় চলে যাই। সেখানে গিয়ে একটি চাকরি পেয়েছি। যেহেতু বাড়ি থেকে কোনো কাপড় নিয়ে যাইনি, তাই কাপড় নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়িতে ফিরে আসি। ২৬ জুন বাড়িতে এসে দরজা নক করলে আত্মীয়স্বজনেরা আমাকে দেখে হতবাক হয়েছেন। তখন আমি জানতে পারি, আমি নাকি মারা গেছি এবং আমার লাশও দাফন করা হয়ে গেছে। আমিতো জীবিত, ফিরে আসলাম।’

রোকসানার ভাই এবায়দুল হক বলেন, ‘খালাতো ভাই-বোনের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে ছবিতে কিছুটা মিল থাকার কারণে বোনের লাশ মনে করে পুলিশের কাছ থেকে লাশটি এনে দাফন করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে রোকসানা বাড়ি ফিরলে ফেনী মডেল থানায় জানানো হয়েছে।’

ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক প্রতুল দাস শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘উদ্ধার করা লাশটি বিকৃত ছিল। এবায়দুল হক ও তাঁর স্বজনেরা ছবি দেখে লাশটি রোকসানার বলে শনাক্ত করে আমার কাছ থেকে নিয়ে যায়। এখন যেহেতু তাদের বোন সশরীরে বাড়িতে উপস্থিত হয়েছে, তাই আমরা বিষয়টি নতুন করে তদন্ত করব।’

সূত্র- আজকের পত্রিকা।