বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র আসরগুলোর একটি ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে চলতি মাসের ২৭ আগস্ট। ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা ১১ দিন ইতালির ঐতিহাসিক ভেনিস শহরে চলবে এই উৎসব। এবারের আসরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মনোনীত হয়েছে বৈচিত্র্যময় কাহিনির অসংখ্য চলচ্চিত্র। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, এবারের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের কোনো চলচ্চিত্র স্থান পায়নি। তবুও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এবারের ভেনিস উৎসবে দর্শকের সামনে হাজির হতে যাচ্ছে এক বিশেষ উপায়ে—জাপানি নির্মাতা আকিও ফুজিমোটোর নতুন ছবি ‘লস্ট ল্যান্ড’–এর মাধ্যমে।
জাপান, মালয়েশিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানির যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘লস্ট ল্যান্ড’ সিনেমার কাহিনি আবর্তিত হয়েছে বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরকে ঘিরে। বাস্তবতা ও মানবিক সংকটের পটভূমিতে তৈরি এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র ৯ বছরের সামিরা ও তার ছোট ভাই ৪ বছরের সাফি। মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা আশ্রয় নেয় বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির—কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। কিন্তু শিবিরের সঙ্কীর্ণ, অনিশ্চিত ও কষ্টকর জীবনে দীর্ঘদিন টিকে থাকা তাদের জন্য সহজ হয় না। হারিয়ে যাওয়া বাবা-মাকে খুঁজে পাওয়ার আশা ও একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের স্বপ্নে তারা সিদ্ধান্ত নেয় মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেওয়ার। শুরু হয় বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রা ও নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যে দিয়ে অজানার পথে তাদের এগিয়ে চলা।
দুই শিশু চরিত্রে অভিনয় করেছে মোহম্মাদ শফিক রিয়াস উদ্দীন ও সোমিরা রিয়াস উদ্দীন। যদিও পুরো কাহিনির প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের, শুটিং সম্পন্ন হয়েছে থাইল্যান্ডে, যেখানে ক্যাম্প ও পরিবেশের বাস্তবসম্মত পুনর্নির্মাণ করা হয়। সিনেমাটি প্রতিযোগিতার ‘অরিজোন্তে’ (Horizons) শাখায় প্রদর্শিত হবে, যা শিল্পমান ও গল্প বলার নতুন ধারা তুলে ধরার জন্য পরিচিত একটি বিভাগ।
এবারের ভেনিস উৎসবে এশিয়া থেকে আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র স্থান পেয়েছে—চীনের ‘দ্য সান রাইজেস অন আস অল’, দক্ষিণ কোরিয়ার ‘নো আদার চয়েস’, তাইওয়ানের ‘গার্ল’, ভারতের ‘সংস অব ফরগটেন ট্রিজ’ এবং থাইল্যান্ডের ‘হিউম্যান রিসোর্স’। এসব ছবিও মানবিক সংকট, সামাজিক টানাপোড়েন ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গল্প তুলে ধরবে।
৮২তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সোনালি সিংহ জয়ের জন্য প্রতিযোগিতা করবে মোট ২১টি ছবি। শিল্প, নন্দন ও সামাজিক বার্তার সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা এই উৎসব প্রতি বছরই বিশ্ব সিনেমার মানদণ্ডে নতুন মাত্রা যোগ করে, এবং এবারের আয়োজনও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে আশা করা হচ্ছে।