মারুফ আহমেদ, কুমিল্লা।।
অসহনীয় যানযটে নাকাল কুমিল্লা নগরীর বাসিন্দারা। সল্প দুরুত্বের পথ পাঁড়ি দিতে সময় লাগছে কয়েকগুণ বেশি। অপরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থার পাশাপাশি নগরী জুড়ে চলাচল করা অসংখ্য সিএনজি ও ব্যাটারী চালিত অটো রিকশাও যানজটের অন্যতম কারণ। কুমিল্লা শহরে বৈধ-অবৈধ মিলে কয়েক হাজার সিএনজি অটো রিকশা চলাচল করে।
এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে সড়ক দখল করে যাত্রী উঠানো সহ যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানো-নামানোর অভিযোগ রয়েছে। তবে সিএনজি অটোরিকশার এমন অব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের ভ’মিকা নির্বিকার। অভিযোগ রয়েছে, নগরী জুড়ে চলা অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা হতে মাসিক ভিত্তিতে টোকেন বাণিজ্য হয় পুলিশের নামে। আর এই টোকেনের কারণেই নির্বিঘেœ সড়কে চলছে এসব যানবাহন।
অনুসন্ধানেও মিলে টোকেন বাণিজ্যের এমন অভিযোগের সত্যতা। নগরীতে সিএনজি অটোরিকশা চালানো বেশ কয়েকজন চালকের সাথে কথা বলে জানা যায় নগরীর যেকোনো সড়কে যেকোনো ধরনের অটোরিকশা চালাতে হলে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের বিনিময়ে মাসিক টোকেন কিনতে হয়। এলাকা-স্ট্যান্ড ভিত্তিক আলাদা আলাদা সিন্ডিকেট প্রশাসন-পুলিশের নামে এসব টোকেন চালকদের কিনতে বাধ্য করে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকার স্ট্যান্ডগুলো ঘুরে চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সিএনজি চালিত অটোরিকশার ক্ষেত্রে মাসিক ভিত্তিতে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মূল্যে এসব টোকেন কিনতে হয়। নগরীর ঈদগাহ এলাকার সিএনজি চালক আলীম মিয়া (ছদ্মনাম) বলেন, মাসের পাঁচ তারিখের মধ্যে ৫০০- ৬০০ টাকার বিনিময়ে টোকেন কিনতে হয়। মোগলটুলী এলাকার শাহ আলম নামের একজন হতে এই টোকেন নিতে হয়। টোকেন থাকলে পুলিশ-সার্জেন্ট ধরে না, টোকেন না থাকলে পুলিশ-সার্জেন্ট জ¦ালা-যন্ত্রণা করে। টোকেন না কিনলে পুলিশ গাড়ি পুলিশ লাইনে নিয়ে যায়, সেখান থেকে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা যার থেকে যা নিতে পারে তা দিয়ে গাড়ি ছুটিয়ে আনতে হয়।
ব্যাটারিচালিত রিকশা চালক কালাম হোসেন (ছদ্মনাম) জানান, টোকেন না নিলেই গাড়ি ধরে পুলিশ। ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে দালালদের কাছ হতে টোকেন নিতে হয়। তারা পুলিশের নাম বলে এসব টোকেন কিনতে আমাদের বাধ্য করে। সরেজমিনে দেখা যায়, নগরী বিভিন্ন এলাকায় ব্যাটারী চালিত রিকশার পিছনে বিভিন্ন পরিবহনের নাম সম্বলিত একধরনের স্টিকার সাঁটানো, সেখানে আবার সিরিয়াল নাম্বারও আছে। চালকরা জানান, এই স্টিকারই মূলত টোকেন। এই টোকেন না থাকলে পুলিশ গাড়ি ধরে। সিএনজি অটোরিকশায় দেখা যায়, চালকের আসনের সামনে গøাসের উপরে বিভিন্ন সিএনজি ব্যবসায় জড়িত প্রতিষ্ঠানের নাম সম্বলিত স্টিকার সাঁটানো। সেখানে মাস অনুযায়ী তারিখ, সিএনজি চালকের নাম এবং একটি সিরিয়াল নাম্বার রয়েছে। সিএনজি চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়,প্রতি মাসের জন্য আলাদা আলাদা টোকেন কিনতে হয়, সেখানে মাস উল্লেখ করা থাকে।
এদিকে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়, টমছমব্রিজ সহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কের মধ্যেই সিএনজি, ব্যাটারী চালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। সড়কের মধ্যেই গড়ে উঠা এসব স্ট্যান্ডও যানজট বৃদ্ধি করছে। পাশাপাশি এসব স্ট্যান্ডেও চলে জিবির নামে চাঁদাবাজি। চালকরা জানায়, স্ট্যান্ড বেধে ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত প্রতিদিন দিতে হয়। তবে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুল ইসলাম বলেন, নগরীতে কোনো সিএনজি স্ট্যান্ডই বৈধ নয়। নগরে শুধু মাত্র দুইটি বাস স্ট্যান্ড আমরা ইজারা দেই। এর বাহিরে কোথাও কোনো টাকা নেওয়ার এখতিয়ার কারো নেই। যা হচ্ছে সব চাঁদাবাজি হচ্ছে।
তবে পুলিশের নামে টোকেন বাণিজ্যের অভিযোগ অসত্য দাবি করে কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রাসেল ভুইয়া বলেন, এসব অভিযোগ অসত্য, পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যদি এসব করে তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিবো। আমরা কোনো গাড়ি ধরি না।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page