নিউজ ডেস্ক।।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান অনির কথা অমান্য করে ক্লাসে যাওয়ায় তিন ছাত্রকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কলেজ মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার জাবেদ হোসেন, আব্দুর রশিদ লাবিব ও ফায়সাল মাহমুদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৭ সেপ্টেম্বর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান অনি তার কয়েকজন অনুসারীদের নিয়ে ক্লাস চলাকালে মেয়েদের কমন রুমে গিয়ে উচ্চস্বরে গান করেন। প্রভাষক হাসান আহমেদ মজুমদার তাৎক্ষণিক গিয়ে গান বন্ধ করতে বলেন। পাশাপাশি বিষয়টি অধ্যক্ষকে জানান।
একইভাবে রোববারও মেয়েদের কমন রুমে গিয়ে গান গাইতে থাকেন মেহেদী হাসান অনি। পরে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. মজিবল হায়দর চৌধুরী গান গাইতে নিষেধ করেন। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান অনি ক্ষিপ্ত হয়ে দলবল নিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি ছেলেদের কমন রুম দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি তোলেন। দুদিনের মধ্যে দাবি না মানলে ছাত্ররা ক্লাস বর্জনেরও হুঁশিয়ারি দেন।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) একাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান ক্লাস চলাকালে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন করে বাইরে আসাতে বলেন মেহেদী হাসান অনি। শিক্ষার্থীরা তার এ নির্দেশনা অমান্য করে ক্লাসে যায়। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে কলেজ ছুটির পর বাড়ি যাওয়ার পথে ১৫-২০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী নিয়ে একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার জাবেদ হোসেন, আব্দুর রশিদ লাবিব ও ফায়সাল মাহমুদকে পিটিয়ে জখম করেন।
কলেজ শিক্ষকরা তাদের উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহত ফয়সাল মাহমুদ বলেন, শুনেছি অনি ভাই অধ্যক্ষ স্যারের রুমে গিয়ে ছেলেদের জন্য কমন রুমসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। এ দাবি না মানলে ক্লাস বর্জনের হুঁশিয়ারি দেন। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার তিনি আমাদের ক্লাস থেকে বাইরে যেতে বলেন। আমরা তার এ কথা অমান্য করায় কলজে ছুটির আমাদের কয়েকজনকে বেড়ধক পিটিয়ে জখম করে। এ সময় আমাদের চিৎকার শুনে শিক্ষকরা এসে উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান অনি বলেন, আজকের ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ঘটনার সময় আমি কলেজে ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র ষড়যন্ত্র করছে। আপনারা তদন্ত করে সত্য ঘটনাটি তুলে ধরুন।
এ বিষয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর মাহমুদ অন্তর বলেন, যদি কোনো শিক্ষার্থী অন্যায় করে ছাত্রলীগ তার দায় নেবে না। ঘটনাটি শুনেছি, তদন্তের মাধ্যমে জেলা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কলেজের প্রভাষক হাসান আহমেদ মজুমদার বলেন, ছাত্রলীগ নেতা অনি মেয়েদের কমন রুমে গিয়ে গান গাইছিল। এতে আমরা বাধা দেই। বিষয়টি অধ্যক্ষকে জানাই। হঠাৎ একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাস চলাকালে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ রেখে বাইরে আসতে বলেন মেহেদী। শিক্ষার্থীরা তার এ কথা না শোনায় কলেজ ছুটি পর কয়েকজনকে পিটিয়ে জখম করেন। তাৎক্ষণিক আমরা গিয়ে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাই।
কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. মজিবল হায়দর চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার ও রোববার ক্লাস চলাকালে অনি মেয়েদের কমন রুমে গিয়ে উচ্চস্বরে গান গাইছিলেন। বিষয়টি আমার নজরে এলে তাকে বারণ করি। পরে তিনি আমার কাছে ছেলেদের কমন রুমসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। তার এ দাবি না মানলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন আন্দোলন করবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
অধ্যক্ষ আরও বলেন, আমি এখানে এসেছি মাত্র তিন মাস হয়েছে। এরই মধ্যে তার দাবিগুলো তাড়াতাড়ি কীভাবে মেনে নেবো। একটু সময় লাগবে। মেহেদী তিন শিক্ষার্থীকে বেড়ধক পিটিয়েছে। এ বিষয়ে কলেজের পক্ষ থেকে আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করবো।
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, মারামারির সংবাদ পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ বিষয়ে কলেজের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page