ফয়সাল মিয়া, কুবি।।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শহিদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিপরীতমুখী অবস্থান তৈরি হয়েছে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত রীতি ভেঙ্গে প্রশাসন একাই শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে কর্মসূচি শেষ করায় এ দ্বান্দ্বিক অবস্থা তৈরি হয়েছে।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, যেকোনো জাতীয় দিবসে প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজনদের নিয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। সাধারণত প্রশাসন, হল ও বিভাগগুলোর পরে একে একে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ফুল প্রদান করে। এক্ষেত্রে দিবস উদযাপন কমিটি মাইকে একে একে সকলের নাম ঘোষণা করে।
তবে এবছর সেই নিয়ম ভঙ্গ করে শুধুমাত্র প্রশাসন, হল ও বিভাগের পক্ষ থেকে ফুল দিয়েই কর্মসূচি শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। শহিদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে সংগঠগুলো। এসময় সংগঠনগুলো বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এসে সকল দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে সকল সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আমজাদ হোসেন সরকারের নিকট বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তা আমলে না নিয়ে প্রশাসনের উপর দায় চাপান। তবে বিশ্ববিদ্যালয় নিবন্ধিত সংগঠনগুলো কেন ফুল দিতে পারবে না চাইলে রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার শিক্ষার্থীদের কোন উত্তর না দিয়ে চলে যান। এসময় রেজিস্ট্রারকে অযোগ্য দাবি করে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে বলেন।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্তদাতা সংগঠন ‘বন্ধু’র সভাপতি ওসমান গণী বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়।ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়া প্রশাসনের, বিশ্ববিদ্যালয়ের অরাজনৈতিক ও অন্যতম স্টেইকহোল্ডারদের রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে তুলনা করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ না মনে করা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তবে বিষয়টি নিজেদের ভুল ছিল বলে স্বীকার করেছেন বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক ড. আমজাদ হোসেন সরকার। তিনি বলেন, বিজয় দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারভুক্ত সংগঠন গুলো ফুল দেওয়ার জন্য এনাউন্সমেন্ট না করা আমাদের ভুল ছিল।
এদিকে প্রশাসনের সঙ্গে সংগঠনগুলোর বাগবিতণ্ডার সময় শহিদ মিনারে ফুল দেয় শাখা ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি এবং রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতেই সংগঠনগুলোর ফুল দেওয়ার সময় রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে শাখা ছাত্রদলকে ফুল দিতে দেখা যায়। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ করে বলেন যেখানে সংগঠনগুলো ফুল দিতে পারেন সেখানে ছাত্রদল কিভাবে ফুল দিতে পারে? এটা প্রশাসনের জন্য লজ্জার।
রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে দলীয় কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, আমরা আহ্বায়ক কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি থেকে অনুমতি নিয়ে ছাত্রদলের কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। তারা আমাদের বলেছেন, আমরা যেন ক্যাম্পাসে কোনো স্লোগান না দিই। আমরা তাই করেছি।
শিক্ষর্থীরা আইন অমান্য করে রাজনৈতিক কার্যক্রম সক্রিয় করার জন্য প্রক্টর ড. আবদুল হাকিমকে পদত্যাগ করতে বললে তিনি বলেন, আজকে চাইলে যে কেউ ফুল দিতে পারবে। তখন পাল্টা শিক্ষর্থীরা ছাত্রলীগ ফুল দিতে পারবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, হ্যঁ তাঁরাও পারবে।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page