অনলাইন ডেস্ক।।
কুমিল্লায় সরকারি আদেশের তোয়াক্কা না করেই একটি সড়কের ওপর পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীকাল থেকে সেখানে বিভিন্ন রকমের পশু বেচাকেনার কথা রয়েছে। কুমিল্লা সিটি এলাকার সবচেয়ে বড় গরুর হাট নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নেউরায় ওই পশুর হাট বসানো হয়েছে। এ সড়কটি নগরীর টমসম ব্রিজ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হোটেল নূরজাহানে গিয়ে ঠেকেছে।
সদর দক্ষিণ উপজেলার পূর্বাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের কুমিল্লা শহরে যাতায়াতের একমাত্র প্রধান সড়ক এটি। অথচ সরকারি নিষেধের তোয়াক্কা না করেই এ সড়কে বসানো হয়েছে পশুর হাট। চার দিন ধরে চলা এ হাটের কারণে যানজটসহ নানা রকম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীসাধারণকে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, নেউরা পশুর হাট কুমিল্লা শহরতলির সবচেয়ে বড় হাট। প্রতিবছর চার দিন বেচাকেনা চলে এই হাটে। ঈদের চার দিন আগে থেকে শুরু করে ঈদের দিন ভোর পর্যন্ত বিরতিহীন পশু বেচাকেনা হয়। রাতের বেলা হাটের কার্যক্রম ঠিক রাখতে ব্যবস্থা করা হয়েছে আলোকসজ্জার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লা নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঢুলিপাড়া পার হয়ে নেউরায় প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের ওপর পশুর হাট বসানোর সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কুমিল্লা টমসম ব্রিজ থেকে ঢুলিপাড়া হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হোটেল নূরজাহান অবধি বিস্তৃত সড়কের অংশে শত শত যানবাহন আর মানুষের চলাচল। এই সড়কেরই পিচঢালাই ঘেঁষে প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে দুপাশে বাঁশ পোঁতা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ৩টি হাসিল ঘর।
বড় জাতের পশুর জন্য আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ক্যাম্প, যা সড়কের পাশ ঘেঁষা। আবার নেউরা বাজার তিন রাস্তার মোড়ে মিলিত হয়েছে কুমিল্লা বিমানবন্দর সড়ক। হাট উপলক্ষে সেই সংযোগ সড়কটি বন্ধ করে দিয়ে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধের একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। শাখা সড়কটি পুরো দখল করে ওপরে শামিয়ানা দিয়ে গাড়ানো হয়েছে বাঁশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ সড়কে চলাচলকারী স্থানীয় এক যাত্রী জানান, হাটের ইজারাদার অনেক প্রভাবশালী। তার দুই ভাই কাউন্সিলর। সাবেক কাউন্সিলর শিপন তার ছোট ভাই, বর্তমান কাউন্সিলর রাজীবও তার ছোট ভাই। এ সড়ক চার দিন ধরে ব্লক থাকে। ফলে মুমূর্ষু রোগীদের জরুরি হাসপাতালে নেওয়াসহ এ সড়কে জরুরি কাজে চলাচল ব্যাহত হয়। আমরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করি।
বাজারের ইজারাদার শহিদুল্লাহ রতন ঢাকা বলেন, জায়গাটা সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত। সেনাবাহিনীর কাছ থেকেই ইজারা আনা হয়েছে। তা ছাড়া শহর এলাকায় পশুর হাট বসানোর মতো এত বড় কোনো জায়গা নেই। এ সড়কটি একটি পরিত্যক্ত সড়ক, এ সড়কে দুয়েকটা সিএনজি-অটো চলে, তেমন কোনো বড় গাড়ি চলে না। সুতরাং মানুষের ক্ষতি হয় বলে আমি মনে করি না। তাছাড়া কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে, জেনে-বুঝেই ইজারা দিয়েছেন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাহাদাত হোসেন বলেন, মহাসড়ক, সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি জায়গায় পশুর হাট বসানোতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। হাটের ইজারা নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় সরকার বিভাগ। আপনারা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পশুর হাটের ইজারাদানকারী স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডিএলজি) শওকত ওসমান বলেন, এই হাট নিয়ে আমরা বিগত দিনে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সড়কটি যেহেতু সিটি এলাকায়, তাই সিটি করপোরেশনকে এর ব্যাখ্যা জানতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সিটি করপোরেশন আমাদের এখনো সে বিষয়ে কিছু জানায়নি।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই হাট এলাকাটি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত। সড়কের ওপর পশুর হাটের একটি লিখিত অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। জনদুর্ভোগের কথা ভেবে আমরা জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া সে চিঠি এবং অভিযোগপত্র দুটোই সেনাবাহিনীর কাছে ফরোয়ার্ড করেছি।
সূত্র- ঢাকা পোস্ট।।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page