০১:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কুমিল্লা নগরীর কাঁটাবিলে জোরপূর্বক প্রবাসীর জমি দখলের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন কুমিল্লার উন্নয়ন ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে সদর আসনের প্রার্থী রিয়াদের সংবাদ সম্মেলন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ডোবার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু কুমিল্লায় ভেজাল জুস ও যৌন উত্তেজক পণ্য কারখানায় অভিযান, দুইজনের কারাদণ্ড কুমিল্লা লাকসাম (মুদাফ্ফরগঞ্জ) ইসলামী ফ্রন্টের সাংগঠনিক উপজেলা কমিটি গঠিত কুমিল্লায় জুলাই মাসে ১১টি হত্যা, ধর্ষণের মামলার ৮টি কুমিল্লায় ৩৩ বছরের ইমামত শেষে রাজকীয় বিদায়; কাঁদলেন এলাকাবাসী সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মানববন্ধন সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে কুমিল্লার মুরাদনগরে মানববন্ধন কুমিল্লায় ওয়ার্কশপ মালিকে কুপিয়ে হত্যা; বিশ্রাম কক্ষ থেকে মরদেহ উদ্ধার

বর্ষাকালে রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকারডা. কাকলী হালদার

  • তারিখ : ১২:১৪:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫
  • 64

এবারের বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। দেশের অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বেড়ে গেছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। বর্ষাকালে রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ।

বর্ষায় রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার কারণ
পানিদূষণ: বন্যা বা বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে বিশুদ্ধ পানির উৎসে দূষিত পানি মিশে যায়। এর ফলে পানীয় জলের বিশুদ্ধতা নষ্ট হয়ে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ে।
বন্যা উপদ্রুত এলাকা: বন্যার সময় স্যানিটেশন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয় এবং মানুষ বাধ্য হয় দূষিত পানি ব্যবহার করতে। এতে ডায়রিয়া, কলেরাসহ নানা রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
খাবারে জীবাণু: অপরিষ্কার পানিতে ধোয়া ফল, সবজি বা অপর্যাপ্ত তাপে রান্না করা খাবার থেকেও জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে।
জীবাণুর বংশবৃদ্ধি: বর্ষায় আবহাওয়া আর্দ্র ও উষ্ণ থাকায় ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবীর বংশবৃদ্ধি দ্রুত হয়।

বর্ষাকালে যেসব পানিবাহিত রোগ বাড়ে
ডায়রিয়া ও আমাশয়: দূষিত পানি ও খাবার থেকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবীর মাধ্যমে হয়। পাতলা পায়খানা, বমি, পেটব্যথা, জ্বর ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। পায়খানায় রক্ত থাকলে আমাশয়, আর চালধোয়া পানির মতো সাদা পায়খানা হলে কলেরা বলে ধারণা করা হয়।
টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড: সালমোনেলা টাইফি ও প্যারাটাইফি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। উচ্চ জ্বর, বমি, পেটব্যথা, র‍্যাশ, মাথাব্যথা দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না হলে অন্ত্র ফেটে যাওয়া বা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
জন্ডিস: হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাস দ্বারা হয়। চোখ ও শরীর হলুদ হওয়া, প্রস্রাব গাঢ় রঙের হওয়া, খাবারে অনীহা, বমি, পেটব্যথা ও জ্বর সাধারণ উপসর্গ।
কলেরা: তীব্র ডায়রিয়া ও দ্রুত পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে। চিকিৎসা না নিলে মৃত্যুঝুঁকি থাকে।
লেপ্টোস্পাইরোসিস: সংক্রমিত প্রাণী, বিশেষত ইঁদুরের প্রস্রাব দ্বারা দূষিত পানি থেকে হয়। জ্বর, জন্ডিস, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, বমি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। সঠিক চিকিৎসা না হলে মাল্টি অর্গান ফেইলিওর হতে পারে।
এ ছাড়া ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল ডায়রিয়া, প্রটোজোয়াল ডায়রিয়াও বর্ষায় বৃদ্ধি পায়।

সতর্কতা ও করণীয়

  • পানি ফুটিয়ে, ফিল্টার করে বা বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করে পান করুন।
  • খাবারের আগে, টয়লেট ব্যবহারের পর এবং বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অভ্যাস করুন।
  • খোলা বা বাসি খাবার এড়িয়ে চলুন, ফল-সবজি পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে খান।
  • খাবার সবসময় ঢেকে রাখুন এবং সঠিক তাপে রান্না করুন।
  • দূষিত পুকুর বা নদীর পানিতে গোসল, মুখ ধোয়া বা থালা-বাসন পরিষ্কার থেকে বিরত থাকুন।
  • রাস্তার পাশের খোলা পানি, শরবত, জুস বা বরফজাতীয় খাবার খাবেন না।
  • হঠাৎ জ্বর, ডায়রিয়া বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

বর্ষা প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদ হলেও অসতর্কতার কারণে এটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই সচেতনতা, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা এবং বিশুদ্ধ খাবার-পানির ব্যবস্থাই হতে পারে রোগবালাই থেকে বাঁচার মূল চাবিকাঠি।

ডা. কাকলী হালদার
সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

বর্ষাকালে রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকারডা. কাকলী হালদার

তারিখ : ১২:১৪:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫

এবারের বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। দেশের অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বেড়ে গেছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। বর্ষাকালে রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ।

বর্ষায় রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার কারণ
পানিদূষণ: বন্যা বা বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে বিশুদ্ধ পানির উৎসে দূষিত পানি মিশে যায়। এর ফলে পানীয় জলের বিশুদ্ধতা নষ্ট হয়ে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ে।
বন্যা উপদ্রুত এলাকা: বন্যার সময় স্যানিটেশন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয় এবং মানুষ বাধ্য হয় দূষিত পানি ব্যবহার করতে। এতে ডায়রিয়া, কলেরাসহ নানা রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
খাবারে জীবাণু: অপরিষ্কার পানিতে ধোয়া ফল, সবজি বা অপর্যাপ্ত তাপে রান্না করা খাবার থেকেও জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে।
জীবাণুর বংশবৃদ্ধি: বর্ষায় আবহাওয়া আর্দ্র ও উষ্ণ থাকায় ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবীর বংশবৃদ্ধি দ্রুত হয়।

বর্ষাকালে যেসব পানিবাহিত রোগ বাড়ে
ডায়রিয়া ও আমাশয়: দূষিত পানি ও খাবার থেকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবীর মাধ্যমে হয়। পাতলা পায়খানা, বমি, পেটব্যথা, জ্বর ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। পায়খানায় রক্ত থাকলে আমাশয়, আর চালধোয়া পানির মতো সাদা পায়খানা হলে কলেরা বলে ধারণা করা হয়।
টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড: সালমোনেলা টাইফি ও প্যারাটাইফি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। উচ্চ জ্বর, বমি, পেটব্যথা, র‍্যাশ, মাথাব্যথা দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না হলে অন্ত্র ফেটে যাওয়া বা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
জন্ডিস: হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাস দ্বারা হয়। চোখ ও শরীর হলুদ হওয়া, প্রস্রাব গাঢ় রঙের হওয়া, খাবারে অনীহা, বমি, পেটব্যথা ও জ্বর সাধারণ উপসর্গ।
কলেরা: তীব্র ডায়রিয়া ও দ্রুত পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে। চিকিৎসা না নিলে মৃত্যুঝুঁকি থাকে।
লেপ্টোস্পাইরোসিস: সংক্রমিত প্রাণী, বিশেষত ইঁদুরের প্রস্রাব দ্বারা দূষিত পানি থেকে হয়। জ্বর, জন্ডিস, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, বমি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। সঠিক চিকিৎসা না হলে মাল্টি অর্গান ফেইলিওর হতে পারে।
এ ছাড়া ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল ডায়রিয়া, প্রটোজোয়াল ডায়রিয়াও বর্ষায় বৃদ্ধি পায়।

সতর্কতা ও করণীয়

  • পানি ফুটিয়ে, ফিল্টার করে বা বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করে পান করুন।
  • খাবারের আগে, টয়লেট ব্যবহারের পর এবং বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অভ্যাস করুন।
  • খোলা বা বাসি খাবার এড়িয়ে চলুন, ফল-সবজি পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে খান।
  • খাবার সবসময় ঢেকে রাখুন এবং সঠিক তাপে রান্না করুন।
  • দূষিত পুকুর বা নদীর পানিতে গোসল, মুখ ধোয়া বা থালা-বাসন পরিষ্কার থেকে বিরত থাকুন।
  • রাস্তার পাশের খোলা পানি, শরবত, জুস বা বরফজাতীয় খাবার খাবেন না।
  • হঠাৎ জ্বর, ডায়রিয়া বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

বর্ষা প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদ হলেও অসতর্কতার কারণে এটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই সচেতনতা, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা এবং বিশুদ্ধ খাবার-পানির ব্যবস্থাই হতে পারে রোগবালাই থেকে বাঁচার মূল চাবিকাঠি।

ডা. কাকলী হালদার
সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ