গর্ব কুমিল্লা নামটিকে ঘিরে, ক্রিকেট নিয়ে নয়। আনন্দ আর বাধ ভাঙা এই উল্লাস শুধু ক্রিকেট জয়ে নয়, সাথে যে কুমিল্লা নামটি যুক্ত রয়েছে।
বিপিএলে একমাত্র জেলা হয়ে বিভাগ গুলোর সাথে লড়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে,যদিও কুমিল্লা বিভাগ হবে হবে করছে। ‘মেঘনা না কুমিল্লা’ এই নিয়ে যখন যুক্তি তর্ক তখন বিভাগ হওয়া যেন আটকেই আছে। গত ২১ অক্টোবর ২০২১ এ যখন ভার্চুয়ালভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লা মহানগর আওয়ামিলীগ অফিস উদ্বোধন কালে কুমিল্লা ০৬ আসনের মাননীয় সাংসদ আপা আপা বলে প্রাণের দাবির কথা তুলে ধরছিলেন যে এই কুমিল্লা, কুমিল্লা নামেই বিভাগ হোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তখন বলেছিলেন ,পার্শবর্তী জেলাগুলো থেকে কুমিল্লা বিভাগ মানছেনা, ওদের থেকে কাগজে সই করিয়ে আনুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বললে কার সাধ্য – রুখে দিবে কুমিল্লা নাম। বাংলাদেশের পূর্বাংশের বৃত্তের মাঝ আমাদের এই কুমিল্লা । ১৯৬০ সালে ০১ অক্টোবরে ত্রিপুরা জেলা নামে অভিহিত হয়ে আসা এই জনপদটি কুমিল্লা জেলা হিসাবে প্রশাসনিকভাবে নামকরণ হওয়া এই কুমিল্লা যেন গোমতির পাড়ে নিরবে পাখা মেলে দাড়িয়ে আছে । দীঘি, খনিজ সম্পদ, বন, লাল-পাহাড, মৃৎশিল্প, খদ্দর, দুগ্ধজাত খাবার, বৌদ্ধবিহার, প্রত্নতত্ব নিদর্শন, দ্বিতীয বিশ্বযুদ্ধস্মারক এবং সুপুরাতন শাসন-রাজরার ইতিহাসে সমৃদ্ধ কুমিল্লা ।
গতকাল রাতে ফরচুন বরিশালকে হারিয়ে যখন কুমিল্লা চ্যাম্পিয়ন হয় তথন এই কুমিল্লা নামটি শুধু এই বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ থকেনি। এই কুমিল্লার নাম পৌছে গেছে বিশ্বের বহু দেশে। সুনিল নারিন তো নিজেই স্বীকার করলেন তিনি আবারো সুযোগ পেলে এই কুমিল্লায় খেলেতে চান যিনি টি টুয়েন্টি ফেরী করে বেড়ান বিভিন্ন দেশে। ক্রিস গেইলও নিশ্চয়ই এই কুমিল্লাকে ভুলতে পারবেননা ফাইনাল হারা কষ্ট থেকে,যদিও তারা পেশাদার ক্রিকেটার। বিশ্বের দরবারে কুমিল্লা এগিয়ে যাওয়া তো এখান থেকে শুরু নয়। কুমিল্লা বহু আগেই বিশ্বের কাছে ব্র্যান্ড হয়ে আছে যার এখন শুধু রং বদল হয়।
ভাষাসৈনিক ও সাবেক গণপরিষদ সদস্য শহীদ ধীরেন্দ্রণাথ দত্ত থেকে শুরু করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রতিষ্ঠাতা রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায়, বিখ্যাত গীতিকার ও সুরকার শচীন দেব বর্মণ, পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর প্রতিষ্টাতা আখতার হামিদ খাঁন, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রথম রূপকার শিব নারায়ন দাস, আইসিসি আম্পায়ায় এনামুল হক মণি, কবি ও নারী নেত্রী সুফিয়া কামাল, লেখিকা, সমাজ কর্মী ও জমিদার নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী, একাধারে কবি,ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, গল্পকার ও নাট্যকার বুদ্ধদেব বসু, বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলাম, রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের ৮ম প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ এদের গল্প সবার ই জানা । এরা ছাড়াও আরো বহু বিজ্ঞ মানুষজন রয়েছেন যারা কুমিল্লাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নিজ নিজ জায়গা থেকে।
আমাদের শুধু এখন একটাই অপ্রাপ্তি ও চাওয়ার জায়গা। কুমিল্লাকে ‘কুমিল্লা’ নামে বিভাগ। নদীমাতৃক এই দেশে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা বুক চিতিয়ে টিকে থাকবে যুগের পর যুগ। আর তারপররেই গোমতীর পাশে বাংলাদেশকে অলংকৃত করে রাখুক আমাদের কুমিল্লা । আজকে বিপিএলে কুমিল্লার জয়ে কুমিল্লার এই বাধবাঙ্গা উল্লাস আবারো হবে, যখন কুমিল্লা নামের পাশে বিভাগ কথাটি জুড়ে থাকবে বুক চিতিয়ে ।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page