অনলাইন ডেস্ক।।
‘আমার পুতেরা নাই, টেকা দিয়া কী হবে? তোরা আমার পুতেরে আইনা দে না। আমার মানিক ধনগুলারে আইনা দে।’ এভাবেই বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের নিহত সৌদি প্রবাসী ফারুক খান ও পারভেজের মা ফাতেমা বেগম।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) বিকালে এই দুই ভাই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। শুক্রবার তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির অদূর থেকে ভেসে আসছে আহাজারির শব্দ। পুরো বাড়িতে ঝলম ইউনিয়নসহ আশপাশের ইউনিয়নের মানুষের ভিড়। স্বজনদের আহাজারির মধ্যে একজন নারী বুক চাপড়ে চাপড়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। জানা গেছে, তিনি নিহত দুই ভাইয়ের মা। তিন ছেলের মধ্যে একসঙ্গে দুজনকে হারিয়ে তিনি পাগলপ্রায়। দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকে বেঁচে থাকা একমাত্র ছেলে ফরহাদকে চোখের সামনে থেকে যেতে দিচ্ছেন না। এই একদিনে বন্ধ করেননি চোখের পাতা মুখে তোলেননি খাবার। স্বজনরা হাজার চেষ্টা করেও তার কান্নার রোল থামাতে পারছেন না।
নিহত ফারুকের বন্ধু মো. আকাশ বলেন, ‘বন্ধুর বিয়ে করার কথা ছিল। তাই তিন মাস পর সে দেশে ফেরার কথা। পাশের এলাকার একটা মেয়ের সঙ্গে তার সাড়ে তিন বছরের সম্পর্ক। প্রথম দিক থেকেই আমি জানতাম। এবারের ঈদে তার বাবা দেশে এসেছিল। ওই মেয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি কথা বলে রেখেছেন। তিনি সৌদি গিয়ে ফারুককে পাঠাবেন। তারপর তাদের ধুমধাম বিয়ে হবে। ফারুকের বাবা সব ঠিকঠাক করে পাঁচ দিন আগে সৌদি গেছেন। গতকাল এই ঘটনা। জানি না ওনারা কীভাবে থাকবেন?’
চাচাতো ভাই ফরিদ চৌধুরী বলেন, ‘তারা তিন ভাই ছিল। প্রথমে ফারুক প্রবাসে যায়। তখন পরিবারের অবস্থা অতটা ভালো ছিল না। তাদের বাবা আবুল কাশেমের সেখানে একটি অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবসা আছে। তারা দুই ভাইসহ সেখানে কাজ করতেন। মাস ছয়েক আগে পারভেজের পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই পরিবারকে আরও সচ্ছল করতে তাকেও বিদেশ নিয়ে যায়। সেখান থেকে সেও মাসে মাসে ভালো অর্থ পাঠাতো। বর্তমানে তারা আমাদের এলাকার মোটামুটি বিত্তশালী পরিবার। কিন্তু এভাবে তারা প্রাণ হারাবে কেউ কল্পনাও করেনি। তাদের পরিবার এলাকার অনেক মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। যারাই এই বাড়িতে আসছে দেখতে সবার চোখেই পানি। কেননা সবাইই তাদের পছন্দ করতো।’
ছোট ভাই ফরহাদ (১৫) বলেন, ‘ফারুক ভাইয়া দেশে এসে বিয়ে করার কথা ছিল। আমরা ভাইয়ার জন্য মেয়েও দেখতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু কী হলো আমার ভাইদের। আমাকে একা করে চলে গেলো।’
চাচাতো ভাই ফরিদ চৌধুরী বলেন, ‘ফারুক ও পারভেজ বাবার সঙ্গেই থাকতো। তাছাড়া সাদ্দামের (একই দুর্ঘটনায় নিহত আরেকজন) ছোট ভাই আহসান হাবিব হৃদয় সেখানে আছে। ওনারা দুজনেই সেখানকার কাগজপত্র রেডি করছে। আমরা তাদের লাশ দেশে আনতে প্রধানমন্ত্রীর সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় তাদের লাশ দ্রুত আমরা পাবো। নিহত সাদ্দাম সম্পর্কে ফারুক ও পারভেজের মামাতো ভাই। ফারুকের বাবা আবুল কাশেম তার ছেলেদের সঙ্গে সাদ্দামের লাশ আনায়ও সহযোগিতা করছে।’
মনোহরগঞ্জ থানার ওসি মাহাবুল কবির বলেন, ‘একই এলাকার তিন যুবকের নিহতের ঘটনা শুনেছি। খুবই দুঃখজনক। যদি থানা থেকে কোনও সাহায্য প্রয়োজন হয় আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের আল কাসিম শহরে সড়ক দুর্ঘটনায় কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার তিন যুবক নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে আল কাসিম শহরে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, ঝলম দক্ষিণ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মো. ফারুক খান (২৩) ও মো. পারভেজ (২১) এবং নরহরিপুর গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে মো. সাদ্দাম (২১)।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page