০৩:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বুড়িচং উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আখলাক হায়দার গ্রেফতার চৌদ্দগ্রামে নির্যাতিত মটর শ্রমিক সংগঠনের কমিটি গঠন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত কুমিল্লায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা কুমিল্লায় ৮ সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা, প্রধান আসামি গ্রেফতার কুমিল্লায় জামায়াতের সেমিনার: জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি কুমিল্লার বুড়িচংয়ে রেললাইন থেকে অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে কুমিল্লার বুড়িচংয়ে বিক্ষোভ মিছিল বুড়িচংয়ে জাতীয় কবি নজরুল স্মরণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশ গড়ার কারিগর- জামায়াত নেতা ড. মোবারক হোসাইন বিদেশ পাঠানোর ফাঁদে কোটি টাকার প্রতারণা, কুমিল্লায় মানব পাচারকারী নুর আলম আটক

বর্ষাকালে রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকারডা. কাকলী হালদার

  • তারিখ : ১২:১৪:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫
  • 249

এবারের বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। দেশের অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বেড়ে গেছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। বর্ষাকালে রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ।

বর্ষায় রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার কারণ
পানিদূষণ: বন্যা বা বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে বিশুদ্ধ পানির উৎসে দূষিত পানি মিশে যায়। এর ফলে পানীয় জলের বিশুদ্ধতা নষ্ট হয়ে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ে।
বন্যা উপদ্রুত এলাকা: বন্যার সময় স্যানিটেশন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয় এবং মানুষ বাধ্য হয় দূষিত পানি ব্যবহার করতে। এতে ডায়রিয়া, কলেরাসহ নানা রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
খাবারে জীবাণু: অপরিষ্কার পানিতে ধোয়া ফল, সবজি বা অপর্যাপ্ত তাপে রান্না করা খাবার থেকেও জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে।
জীবাণুর বংশবৃদ্ধি: বর্ষায় আবহাওয়া আর্দ্র ও উষ্ণ থাকায় ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবীর বংশবৃদ্ধি দ্রুত হয়।

বর্ষাকালে যেসব পানিবাহিত রোগ বাড়ে
ডায়রিয়া ও আমাশয়: দূষিত পানি ও খাবার থেকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবীর মাধ্যমে হয়। পাতলা পায়খানা, বমি, পেটব্যথা, জ্বর ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। পায়খানায় রক্ত থাকলে আমাশয়, আর চালধোয়া পানির মতো সাদা পায়খানা হলে কলেরা বলে ধারণা করা হয়।
টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড: সালমোনেলা টাইফি ও প্যারাটাইফি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। উচ্চ জ্বর, বমি, পেটব্যথা, র‍্যাশ, মাথাব্যথা দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না হলে অন্ত্র ফেটে যাওয়া বা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
জন্ডিস: হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাস দ্বারা হয়। চোখ ও শরীর হলুদ হওয়া, প্রস্রাব গাঢ় রঙের হওয়া, খাবারে অনীহা, বমি, পেটব্যথা ও জ্বর সাধারণ উপসর্গ।
কলেরা: তীব্র ডায়রিয়া ও দ্রুত পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে। চিকিৎসা না নিলে মৃত্যুঝুঁকি থাকে।
লেপ্টোস্পাইরোসিস: সংক্রমিত প্রাণী, বিশেষত ইঁদুরের প্রস্রাব দ্বারা দূষিত পানি থেকে হয়। জ্বর, জন্ডিস, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, বমি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। সঠিক চিকিৎসা না হলে মাল্টি অর্গান ফেইলিওর হতে পারে।
এ ছাড়া ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল ডায়রিয়া, প্রটোজোয়াল ডায়রিয়াও বর্ষায় বৃদ্ধি পায়।

সতর্কতা ও করণীয়

  • পানি ফুটিয়ে, ফিল্টার করে বা বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করে পান করুন।
  • খাবারের আগে, টয়লেট ব্যবহারের পর এবং বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অভ্যাস করুন।
  • খোলা বা বাসি খাবার এড়িয়ে চলুন, ফল-সবজি পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে খান।
  • খাবার সবসময় ঢেকে রাখুন এবং সঠিক তাপে রান্না করুন।
  • দূষিত পুকুর বা নদীর পানিতে গোসল, মুখ ধোয়া বা থালা-বাসন পরিষ্কার থেকে বিরত থাকুন।
  • রাস্তার পাশের খোলা পানি, শরবত, জুস বা বরফজাতীয় খাবার খাবেন না।
  • হঠাৎ জ্বর, ডায়রিয়া বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

বর্ষা প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদ হলেও অসতর্কতার কারণে এটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই সচেতনতা, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা এবং বিশুদ্ধ খাবার-পানির ব্যবস্থাই হতে পারে রোগবালাই থেকে বাঁচার মূল চাবিকাঠি।

ডা. কাকলী হালদার
সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

error: Content is protected !!

বর্ষাকালে রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকারডা. কাকলী হালদার

তারিখ : ১২:১৪:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫

এবারের বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। দেশের অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বেড়ে গেছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। বর্ষাকালে রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ।

বর্ষায় রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার কারণ
পানিদূষণ: বন্যা বা বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে বিশুদ্ধ পানির উৎসে দূষিত পানি মিশে যায়। এর ফলে পানীয় জলের বিশুদ্ধতা নষ্ট হয়ে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ে।
বন্যা উপদ্রুত এলাকা: বন্যার সময় স্যানিটেশন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয় এবং মানুষ বাধ্য হয় দূষিত পানি ব্যবহার করতে। এতে ডায়রিয়া, কলেরাসহ নানা রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
খাবারে জীবাণু: অপরিষ্কার পানিতে ধোয়া ফল, সবজি বা অপর্যাপ্ত তাপে রান্না করা খাবার থেকেও জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে।
জীবাণুর বংশবৃদ্ধি: বর্ষায় আবহাওয়া আর্দ্র ও উষ্ণ থাকায় ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবীর বংশবৃদ্ধি দ্রুত হয়।

বর্ষাকালে যেসব পানিবাহিত রোগ বাড়ে
ডায়রিয়া ও আমাশয়: দূষিত পানি ও খাবার থেকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবীর মাধ্যমে হয়। পাতলা পায়খানা, বমি, পেটব্যথা, জ্বর ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। পায়খানায় রক্ত থাকলে আমাশয়, আর চালধোয়া পানির মতো সাদা পায়খানা হলে কলেরা বলে ধারণা করা হয়।
টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড: সালমোনেলা টাইফি ও প্যারাটাইফি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। উচ্চ জ্বর, বমি, পেটব্যথা, র‍্যাশ, মাথাব্যথা দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না হলে অন্ত্র ফেটে যাওয়া বা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
জন্ডিস: হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাস দ্বারা হয়। চোখ ও শরীর হলুদ হওয়া, প্রস্রাব গাঢ় রঙের হওয়া, খাবারে অনীহা, বমি, পেটব্যথা ও জ্বর সাধারণ উপসর্গ।
কলেরা: তীব্র ডায়রিয়া ও দ্রুত পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে। চিকিৎসা না নিলে মৃত্যুঝুঁকি থাকে।
লেপ্টোস্পাইরোসিস: সংক্রমিত প্রাণী, বিশেষত ইঁদুরের প্রস্রাব দ্বারা দূষিত পানি থেকে হয়। জ্বর, জন্ডিস, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, বমি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। সঠিক চিকিৎসা না হলে মাল্টি অর্গান ফেইলিওর হতে পারে।
এ ছাড়া ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল ডায়রিয়া, প্রটোজোয়াল ডায়রিয়াও বর্ষায় বৃদ্ধি পায়।

সতর্কতা ও করণীয়

  • পানি ফুটিয়ে, ফিল্টার করে বা বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করে পান করুন।
  • খাবারের আগে, টয়লেট ব্যবহারের পর এবং বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অভ্যাস করুন।
  • খোলা বা বাসি খাবার এড়িয়ে চলুন, ফল-সবজি পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে খান।
  • খাবার সবসময় ঢেকে রাখুন এবং সঠিক তাপে রান্না করুন।
  • দূষিত পুকুর বা নদীর পানিতে গোসল, মুখ ধোয়া বা থালা-বাসন পরিষ্কার থেকে বিরত থাকুন।
  • রাস্তার পাশের খোলা পানি, শরবত, জুস বা বরফজাতীয় খাবার খাবেন না।
  • হঠাৎ জ্বর, ডায়রিয়া বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

বর্ষা প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদ হলেও অসতর্কতার কারণে এটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই সচেতনতা, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা এবং বিশুদ্ধ খাবার-পানির ব্যবস্থাই হতে পারে রোগবালাই থেকে বাঁচার মূল চাবিকাঠি।

ডা. কাকলী হালদার
সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ