ফয়সাল মিয়া, কুবি।।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩০ জনের অধিক শিক্ষার্থী ভুয়া অনলাইন টিউশন মিডিয়ার প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে কুবি শিক্ষার্থীদের প্রায় ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটির । এ ঘটনায় একাধিকবার প্রক্টরিয়াল বডিকে মৌখিক ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানালেও সক্রিয়ভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ভুয়া চক্রটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুয়া চক্রটি ‘কুমিল্লা আরবান টিউশনি মিড়িয়া’ নামক ফেসবুক পেজের মাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়েছে যাচ্ছে। পরিচালক নিজেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। টিউশন দেওয়ার পূর্বেই ২০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ দাবি করতো চক্রটি। এসময় গার্ডিয়ান পরিচয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথাও বলিয়ে দেন তারা। পরে আশ্বস্ত হয়ে অর্থ পরিশোধ করলে যোগাযোগের সকল পথ বন্ধ করে দেয়া হয় । বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ এর অধিক শিক্ষার্থী এ প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়।
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রিফাত বলেন, “আমাকে টিউশন দিবে বলে তাকে ২০০০ টাকা অগ্রিম কমিশন দিয়েছিলাম। টাকা দেওয়ার পরে আমাকে একটা নাম্বার দিয়ে বলে এটা গার্ডিয়ানের নাম্বার। আমি ঐ নাম্বারে ফোন দিয়ে কথা বলি এবং আমাকে ২৫ এপ্রিল যেতে বলা হয়। ২৪ এপ্রিল রাতে আমি জানতে পারি ঐটা একটা ভুয়া পেইজ। পরবর্তী সময়ে আমি গার্ডিয়ানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলতে পারিনি। ”
বাংলা বিভাগের নাজমুল বলেন, “ঐখান থেকে টিউশন চাইলে আমার কাছে ২০০০ টাকা দাবি করে। তখন আমি গার্ডিয়ানের সাথে কথা বলে এবং কিছুদিন টিউশন করিয়ে টাকা দিব বললে তারা রাজি হননি। তবে সত্যতা না পাওয়ায় টাকা দিইনি। কিন্তু পরদিন দেখলাম একাউন্টিং বিভাগের এক মেয়েকে মেনশন করে বলা হয়েছে তাকে টিউশনি দেওয়া হয়েছে। পরে আমি সেই মেয়ের সাথে যোগাযোগ করলে তখন মেয়েটি জানায়, আমাকে কোনো টিউশনি দেওয়া হয়নি। বরং আমার থেকে ২০০০ টাকা কমিশন নিয়েছে। তখন আমি পেজে আবার কথা বললে আমাকে গালিগালাজ করে হুমকি দেওয়া হয়।”
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মিম বলেন, “আমার এক জুনিয়র একই টিউশন মিডিয়ার সাথে তিন হাজার টাকায় একটি টিউশনি দেওয়ার কথা ঠিক হয়। কমিশন হিসাবে ১০০০ টাকা দেওয়া হয়। তবে টাকা দেওয়ার পর তাঁরা যে গার্ডিয়ানের নম্বর দেয় সেই নম্বরে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। নম্বর বন্ধ দেখায়। ফলে তখন মিডিয়ার ব্যক্তির সাথে কথা বলা হয়। তখন তিনি বলেন, আমি তো আপার সাথে গার্ডিয়ানের যোগাযোগ করে দিয়েছি। এখন আপনি টিউশনি না পেলে এর দায়ভার আমি নিতে পারবো না।”
এদিকে টিউশনের আবদার করে প্রতারক ঐ চক্রের অ্যাডমিনের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। এসময় তিনি নিজেকে সাদমান ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দেন। তিনি অফিসে এসে কথা বলতে বলেন, তবে অফিসের কোনো ঠিকানা দিতে পারেন নি। পরে অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অস্বীকার করেন ও অকথ্য ভাষায় কথা বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ জানানোর পর আমি তাদেরকে পুলিশের কাছে পাঠিয়েছিলাম। এটা পুলিশের ব্যাপার। আমরা একা খুঁজে বের করতে পারবো না। পুলিশ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। এখনো হয়ত খুঁজে পায় নাই। পেজটি যদি সক্রিয় থাকে তবে আমি আবার পুলিশকে জানাবো।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এস আই) মোরশেদ আলম বলেন, “বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করছি কিন্তু এখনো তাদেরকে খুঁজে বের করা যায়নি। যে নগদ এজেন্ট নম্বরে যোগাযোগ টাকা লেনদেন হয়েছে সেখানে যোগাযোগ করা হয়েছে, তবে এখনো তথ্য দেয়নি তারা। আমাদের কাছে ব্যক্তি শনাক্তকরণ প্রযুক্তিও যথেষ্ট নাই। সিমগুলো লিগ্যাল আইডেন্টিটি নিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে না। যে সিমগুলো তারা ব্যবহার করছে সেগুলো রেজিস্ট্রেশন করা একজনের নামে ব্যবহার করছে অন্যজন। তারা ভুয়া নম্বর ও এনআইডি ব্যবহার করছে। ফলে কাজটা আমাদের জন্য আরো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এটা একটা বড় প্রতারণা চক্র। এমনও আছে তাঁরা দেশের বাইরে থেকে এই প্রতারণা করছে। আমরা কত সহজে প্রতারিত হচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমি আজকে আবার কথা বলে দেখবো। আর শিক্ষার্থীদের আরো সতর্ক হতে হবে।”
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page