ফয়সাল মিয়া, কুবি।।
গ্রীষ্মের তপ্তদিনে মায়াবী জারুল আকৃষ্ট করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। প্রচন্ড গরমে পাতাভরা জারুল গাছের নিচে যেন অন্যরকম এক প্রশান্তি, সাথে হালকা ঝির ঝির বাতাস যে কোনো মানুষের হ্নদয়কে মোহিত করতে পারে ।
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে এখন চলছে গ্রীষ্মকাল। এটি বাংলা বছরের উষ্ণতম কাল হিসেবে খ্যাত। অর্জুন, ইপিল, কনকচূড়া, করঞ্জা, কামিনী, গাব, দেবদারু, নাগেশ্বর, নিম, মেহগনি, রক্তন, সোনালুসহ রং বেরঙের ফুলের সমারোহ । গ্রীষ্মের প্রকৃতি ও ঋতুর সাথে তাল মিলিয়ে প্রত্যাহ নতুনত্ব নিয়ে ক্যাম্পাসে হাজির হয়। কখনো কাঁশফুলের শুভ্রতা, কখনো কৃষ্ণচূড়ার রঙে রঙ্গিন, কখনো রক্তিম শিমুল ফুল, আবার কখনো কখনো সোনালুর সোনালি আভায় সাজিয়ে তোলে এই বিদ্যাঙ্গনকে।
জারুলের বেগুনি আভায় সেজেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ থেকে শুরু হয়ে বৈশাখী চত্ত্বর, পি এ চত্ত্বর, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া এবং কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন গাছগুলোতে থোকায় থোকায় জারুলফুল ফুটেছে। যা দেখতে নামে দর্শনার্থীদের ভিড়।
শীতের পাতাহীন নগ্ন জারুল গাছ গ্রীষ্মের শুরুতে নব যৌবন ফিরে পায়। এই ফুলের ইংরেজি নাম Giant crape-myrtle এবং বৈজ্ঞানিক নাম Lagerstroemia Speciosa। জারুল ফুলগুলো থাকে শাখার ডগায়, পাতার ওপরের স্তরে। ছয়টি মুক্ত পাপড়ি বিশিষ্ট জারুল সবুজ ও বাকল হালকা ময়লা বাদামি বর্ণের। বলা হয় জারুল ফুলের ছয়টি মুক্ত পাপড়ি দিয়ে মুক্ত বুদ্ধিচর্চাকে বুঝায়। বিশ্ববিদ্যায় একটি মুক্ত বুদ্ধি চর্চার কেন্দ্র যা জারুল ফুল আমাদের জানিয়ে দেয়।
জারুল গাছে ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন মাসে। ফল পরিপক্ব হয় অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে। ফল ডিম্বাকার, শক্ত ও বিদারি। বীজ ১ সেন্টিমিটার চওড়া, পাতলা বাদামি রঙ্গের। বীজে থেকেই এর বংশবৃদ্ধি হয়। শুধু সৌন্দর্যেই নয় ঔষুধী গুণেও অনন্য এই ফুল। জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতায় জারুল উপকারী। জারুলের এতসব গুণে মুগ্ধ হয়ে তাই হয়তো কবি জীবনানন্দ দাশ তার কবিতায় লিখেছেন –
এই পৃথিবীর এক স্থান আছে – সবচেয়ে সুন্দর করুণ
সেখানে সবুজ ডাঙ্গা ভরে আছে মধুকুপী ঘাসে অবিরল,
সেখানে গাছের নাম: কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল।
ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যের অনুভূতি প্রকাশ করতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৫তম আবর্তনে শিক্ষার্থী মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, “প্রকৃতি ঘেরা কুবির আরেকটা সংযোজন হলো গ্রীষ্মের জারুল ফুল। তীব্র তাপদাহে পরিবেশ যখন প্রতিকূলে তখন প্রশান্তি ছোঁয়া নিয়ে এলো জারুল। এ যেন প্রকৃতিকে নতুন রূপে সাজিয়ে দেওয়ার নামান্তর। যখন ধমকা হাওয়ায় জারুল ঢেউ খেলে, তখন প্রকৃতি প্রেমিকদের মনে ব্যাকুল আনন্দ নিয়ে আসে।”
লোক প্রশাসন বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী নুরানী শেখ তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন,
” লাল মাটি শোভিত ২৫০ একরে রয়েছে প্রকৃতির অনন্য ছোঁয়া। গ্রীষ্মের রোদ্দুরে যখন প্রকৃতির রূপ লাবণ্যের জৌলুসে কমতি আসে তখনই বর্ষার গর্জনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ মুখরিত হয় নতুন সাজে। ঠিক এই সময়ে গাছে তৈরি হয় নতুন সজীবতা। জারুলের সারিতে সারিতে ফুটে উঠেছে বিচিত্র রং, সেই রং যেন প্রকৃতিতে এনেছে বৈচিত্র্যতা। গ্রীষ্মের ফুলে ফলে বর্ষার কিঞ্চিৎ আগমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ সেজে উঠেছে আজ আপন রূপে।”