মো. জাকির হোসেন।।
পেশায় ব্যবসায়ী। তবে যখন যেখানে মানুষের অসহায়ত্বের খবর পান,সেখানেই ছুটে যান নিজে,নিজ সংগঠন ‘মানবতার হাত’র সদস্যদের নিয়ে। এক্ষেত্রে অর্থেও বিষয় ভাববার সময় নাই। নিজের অর্থায়নে, পরিচিতজনদের কাছ থেকেও খুঁজে নিচ্ছেন অর্থ অসহায় দুর্গতদের জন্য।
এই মানুষটি বুড়িচংয়ের ভারেল্লা উত্তর ইউনিয়নের প্রসিদ্ধ কংশনগর বাজারের ব্যবসায়ী জহিরুল কাইয়ুম। কেউবা চিনে লায়ন জহিরুল কাইয়ুম হিসেবেও। তার নিজ হাতে গড়া সংগঠন ‘মানবতার হাত’।
সম্প্রতি অতিরিক্ত বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীটির দু’কুল প্লাবিত হয়ে নদী তীর ভাঙ্গার উপক্রম হলে লায়ন জহিরুল তার সংগঠনের ৩৩ জন সদস্যকে নিয়ে দুর্ভোগ মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। এসময় একেক সময় একেক স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধের বাঁধ সংস্কারে দিন-রাত পরিশ্রম করেন।
তখন নদী তীরের কংশনগর, হাসনাবাদ, হাসনাবাদ উত্তরপাড়া, রামচন্দ্রপুর, কুসুমপুর, এলাকায় বাঁধ রক্ষায় কাজ করেন সংগঠনের সদস্যসগ স্থানীয় গ্রামবাসীদের নিয়ে।
এসময় বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভাঙ্গার অসমর্থিত খবরে বারবার বিভ্রান্ত হওয়ায় ২২ আগষ্ট রাত প্রায় পৌনে ১২ টায় বুড়িচংয়ের ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া গ্রামে গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার খবওে নিজেই দ্রুত ঘটনাস্থলে যান মোটরসাইকেলে করে। তখন নিশ্চিত হয়ে ফিরে এসেই উদ্ধার তৎপরতাসহ দুর্গতদের সেবায় কাজ করার পরিকল্পনা কনে।
একই সময় হাসনাবাদ এলাকায় বাঁধ চুইয়ে পানি বের হতে থাকলে ট্রাক্টরে করে মাটি নিয়ে বস্তায় ভরে নদী ভাঙ্গন রোধ করেন স্বেচ্ছাসেবাীসহ গ্রামবাসীর সহায়তায়। পাশাপাশি মাটি ভর্তি বস্তা রেডি রাখেন। নদী তীরবর্তী কংশনগর, ছগুড়াসহ যেখানেই পানি চুয়ানো শুরু করে সেখাইনেই ভস্তা ফেলে মেরামত অব্যাহত রাখেন।
এদিকে দ্রুত পানি একে একে ষোলনল,পীরযাত্রাপুর,বুড়িচং সদর,বাকশীমুল ও রাজাপুর গ্রামের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেলে বিরামহীন দুর্গতদের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়েন লায়ন জহিরুল তার সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে। ২৩ আগষ্ট বন্যা কবলিত আরাগ আনন্দপুর,খাড়াতাইয়া,গাজিপুর এলাকায় দুর্গতদের সাহায্যের জন্য প্রথমে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও কলার একাধিক ভেলা নিয়ে তৎপরতা শুরু করেন।
২৪ আগষ্ট কংশনগর, সাদকপুর, বুড়িচং সদর, জগতপুর এলাকায় কংশনগর এলাকা থেকে প্রথমে ট্রাক্টও যোগে অপেক্ষকৃত শুস্কস্থানে গিয়ে সেখান থেকে নৌকা যোগে উল্লেখিত গ্রামগুলোতে দুর্গতদেও মাঝে খাবার, পানি, ঔষধ সরবরাহ করেন।
পরবর্তীতে ২৫ আগষ্ট থেকে ২টি স্পীডবোট,একটি ইঞ্জিন চালিত ও একটি সাধারন নৌকা যোগে ষোলনল,বাকশীমুল,বুড়িচং সদও ইউনিয়নের বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে বিরামহীন সেবাসহ শুকনো খাবার, খিচুড়ি, পানি, ঔষধ, কাপড় ইত্যাদি দুর্গত মানুষদের বিতরন করেছেন।
লায়ন জহিরুল বলেন, যতদিন দুর্গত মানুষের সেবার প্রয়োজন হবে,ততদিনই তিনি ও তার সংগঠনের সদস্যরা সেবার কাজ চালিয়ে যাবে। তিনি জানান, এরই মাঝে ‘মানবতার হাত’ সংগঠনের পক্ষ থেকে কমপক্ষে ১৫ হাজার পরিবারের মাঝে খাবার, ঔষধ, পানি, স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট বিতরণ করেছেন।
লায়ন জহিরুল তার এই বিশাল কর্মযজ্ঞকে এগিয়ে নিতে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরন করেন ফ্রেন্ডস্ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা বিল্লাল হোসেনকে। এছাড়াও সংগঠনটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক জাহাঙ্গীর আলম মেম্বার, আমিনুল ইসলাম বাহাদুর, আমীর খান, মোসলেম উদ্দিন, জুম্মন হোসাইন, নাজমুল হাসান, সাইফুল ইসলাম, রায়হান আহমেদ, রাতুল, মোস্তফা হোসাইন অয়ন, আলাউদ্দিন খান, তুহিন, সাইফুল, হাসিবুল, সহিদুল, মুন্না, সাজিবুল ইসলাম সাগর, রেজাউল করিম মেম্বার প্রমুখের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান লায়ন জহিরুল।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page