নিউজ ডেস্ক।।
নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মাকে হারান কুমিল্লার তাজগীর হোসেন। এর পর শুরু হয় অর্থ সংকটে তার জীবন সংগ্রাম। শত বাঁধার মাঝেও মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে ছেয়ে দেননি পড়াশোনা। নানার বাড়িতে নিয়েছেন আশ্রয়। পড়াশোনার খরচ যোগান দিতে করেছেন নার্সারিতে কাজ। ভ্যানগাড়িতে করে বিক্রি করেছেন গাছের চারাও। অবশেষে স্বপ্ন এসে ধরা দিয়েছেন তার হাতে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু স্বপ্ন ধরা দিলেও এখন ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তাজগীর।
স্থানীয়রা জানান, কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের খুন্তা গ্রামের নানার বাড়িতে থেকেই তাজগীর হোসেন বড় হয়েছেন। মায়ের জীবদ্দশায় উপজেলার বরইগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও জ্যোতিপাল মহাথের বৌদ্ধ অনাথ আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় এ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হন। মায়ের মৃত্যুর পর একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৪.৯৪ এবং লাকসাম নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পান। তাজগীর নিজের ইচ্ছা শক্তি আর মায়ের স্বপ্ন পূরণে লেখাপড়ার হাল না ছাড়ায় স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষকরা তাকে সহায়তা করেছেন।
তাজগীর হোসেন বলেন, ২০১৭ সালে আমার মা তাসলিমা বেগম মারা যান। তখন আমি নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। মায়ের মৃত্যুর পর বাবাও আমাকে ছেড়ে যান। তখন দারুণ অর্থকষ্টে ভুগেছি। আশ্রয় নিলাম নানার বাড়িতে। মামাদেরও আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। তখন পড়ালেখা নিয়ে দুশ্চিন্তাই পড়ি। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর মায়ের প্রবল ইচ্ছা ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবে। সে স্বপ্ন মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছিল। তখন সংকল্প করলাম অর্থের কাছে মায়ের স্বপ্নকে হারতে দেবো না। শুরু হয় জীবন সংগ্রাম।
তিনি বলেন, তখন বাড়ির পাশে মায়ের দোয়া নার্সারিতে কাজ শুরু করি। চারা রোপণ, পরিচর্যা এবং ভ্যানে করে চারা বিক্রি সবই করেছি। এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনি করেছি। সে অর্থ নিয়ে চালিয়েছি নিজের পড়ালেখার খরচ। মা বলতেন, ভিক্ষা করে হলেও আমাকে ডাক্তার বানাবে। আজ সে স্বপ্ন আমার হাতে এসে ধরা দিয়েছে। মা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন।
তাজগীর আরও বলেন, এখন বড় দুশ্চিন্তা হলো, মেডিকেলে পড়তে অনেক টাকা লাগে। চিন্তায় আছি কীভাবে এত টাকার যোগান দেবো। তাই মেডিকেলে ভর্তি, বই কেনা ও অন্যান্য খরচ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।
এ বিষয়ে লাকসাম নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিতা সফিনাজ বলেন, তাজগীর মেধাবী ছাত্র ছিল। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এ সাফল্যে তাকে অভিনন্দন। অতীতেও তার পাশে আমরা ছিলাম। এখনো আমরা চেষ্টা করছি, তাকে সহায়তা করার।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল হাসান বলেন, লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম সাইফুল আলমের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর ভর্তির জন্য রোববার (৪ এপ্রিল) সকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার টাকার একটি চেক দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এ টাকা দিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হবে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর দরিদ্র তহবিলে দরখাস্ত করা হলে তাকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page