অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রত্যাশা করি -গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।।
আজ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশের অধিকাংশ জনগণ নির্বাচনী উৎসবে মেতে উঠেছে। গ্রাম-গঞ্জ, শহর- বন্দর সর্বত্র পোস্টার, ফেস্টুন আর ব্যানারে ছেয়ে গেছে। অনেকেই আবার হাতে হাতে লিফলেট বিতরণ করে যাচ্ছেন। প্রার্থী এবং নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণায় এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন যে তাঁদের এখন খাওয়া দাওয়া বা ঘুমানোরও সময় নেই। শুধু প্রার্থীই নন, পথসভা, জনসভা, উঠান বৈঠকসহ ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় ব্যস্ত নেতাকর্মীরা। ছোট-বড় বিভিন্ন দলের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে দিনরাত তাঁদের নির্বাচনী কাজকর্ম অব্যাহত রেখেছেন।

সব প্রার্থীর একই লক্ষ্য নির্বাচনে জয়লাভ করতে হবে। আমরা আশা করছিলাম, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসবে। দলটি জনগণের জন্য রাজনীতি করায় বিশ্বাসী হয়ে থাকলে অবশ্যই জনগণের সঙ্গে থাকবে, তাদের প্রতিনিধি হয়ে সংসদে তাদের সমস্যার কথা বলবে। কিন্তু সেটি না করে ভুল সিদ্ধান্তের কবলে পড়ে দলটি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পথকে বেছে নিল। দলটি দেশ এবং জনগণদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কর্মকান্ডে পূর্বের ন্যায় জড়িয়ে পড়ল। যার বড় উদাহরণ শুক্রবার রাজধানীতে ট্রেনে আগুন সন্ত্রাস করে একই পরিবারের ৪/৫ মানুষ হত্যা।দেশের মানুষের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে বিএনপি বিদেশি বন্ধুদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ল।

দুর্ভাগ্যবশত তা দলের নেতৃত্বের ভুল চিন্তাই প্রমাণ করে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রত্যাশা মূলত বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে মাঠে রয়েছে অনেক দিন থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে পাশে রয়েছে। নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে থাকা জামায়াত বিএনপির ওপর ভর করে অবৈধভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তারা নির্বাচন বানচাল করার জন্য নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করে যাচ্ছে। নির্বাচন প্রতিরোধের চেষ্টায় বাসে, ট্রেনে বা অন্যান্য যানবাহনে অগ্নিসন্ত্রাস চালাচ্ছে , হরতালের ডাক দিয়েছে।তাদের জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ডের শিকার হয়ে নারী, শিশুসহ অনেক মানুষকে জীবন হারাতে হয়েছে। অবাধ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। কোনো দল বা ব্যক্তি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়, তাতে যেমন অন্য কেউ বাধা প্রদান করতে পারে না; তেমনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না চাইলে জোর করে অংশগ্রহণ করানো যায় না। একইভাবে একজন ভোটার ভোট দেবেন কি না দেবেন, সেটি তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার।

এ ক্ষেত্রে তাঁকে জোর করে যেমন ভোটকেন্দে নিয়ে যাওয়া যাবে না, তেমনি ভোট দিতে বাধাও দেওয়া যাবে না। বিএনপি বা তাদের দোসর জামায়াত নির্বাচনকে কেন্দ করে যেভাবে সন্ত্রাসের মহড়া দিয়েছে এবং জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করেছে, তাতে কি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে না? জনগণের অধিকারকে খর্ব করাই কি পরিলক্ষিত হয়নি। তবে একটি কথা না বললেই নয় যে নির্বাচনকে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক করতে হলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো এবং জনসাধারণকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

সবার উদ্দেশ্য যখন একই দিকে, তাহলে কেন আমরা সবাই মিলে সেই লক্ষ্যে কাজ করছি না? এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা এবং দলগুলোর কর্মীদের মধ্যে যেমন পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখতে হবে, তেমনি সহনশীলতার সঙ্গে প্রত্যেকের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। উল্লেখ্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার মাধ্যমেই একটি উৎসব মুখর নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং বজায় রাখা সম্ভব। বলার অপেক্ষা রাখে না যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য এই দুটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিএনপি তার সঙ্গীদের নিয়ে যে একেবারেই বসে থাকবে, সেটিও ভাবা ঠিক হবে না। তারা নির্বাচনকে গোলযোগপূর্ণ করতে নানা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেবে। তাদের চলমান ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চলতেই থাকবে। তারা শুধু গণপরিবহনে অগ্নিসন্ত্রাস করাই নয়, বিভিন্ন স্থাপনায়, বিশেষ করে বিভিন্ন দলের নির্বাচনী প্রচারণা ক্যাম্পে, ভোট কেন্দ্রের স্থানীয় অফিসগুলোতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে এমন আতঙ্কের সৃষ্টি করতে পারে, যাতে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দে না আসে। তাহলে তাদের বিদেশি বন্ধুদের দেখাতে পারবে। বিএনপির সাফল্য সেখানেই। তবে সেটি করতে সক্ষম না হলে নির্বাচন বানচাল করার পক্ষের শক্তিগুলোর অস্তিত্বই সংকটে পড়তে পারে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই হয়তো তারা নামসর্বস্ব দলে পরিণত হতে পারে।

কিন্তু তার পরও একটি ভয় থেকে যায়। সেটি আসতে পারে নির্বাচনের পরপরই। । অর্থাৎ নতুন সরকার গঠনের পর বিএনপি ও তার সঙ্গীরা আবার নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। তখন তারা আরো হিংস্র ও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। তাদের কর্মকাণ্ড দেশের আইন-শৃঙ্খলার জন্য যেমন হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে, তেমনি দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। নতুন সরকার এসব চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবেলা করবে, তা ভবিষ্যতেই দেখা যাবে। তবে এসবের মধ্যে দেশের সাধারণ মানুষের ভোগান্তির যে শেষ থাকবে না, তা এ দেশের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কখনো বুঝবেন কি না, জানি না। তবে, অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হউক এ প্রত্যাশা রাখি।

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির,
সাংবাদিক ও কলামিস্ট, বুড়িচং, কুমিল্লা

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

You cannot copy content of this page