নেকবর হোসেন।।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের পরমতলা গ্রামের পুলিশি হয়রানির ভয়ে ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন শত শত মানুষ। গ্রামের বেশির ভাগ ঘরে পুরুষ সদস্যরা নেই। কোথাও কোথাও নারীরাও বাড়িঘরে নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ ধাপে গত ৩১ জানুয়ারি মুরাদনগর উপজেলার ধামঘরসহ মোট ২১টি ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। ভোটের দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে ওই ধামঘর ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদকে পুলিশ আটক করে। একই সঙ্গে হাতকড়া পরায়। একপর্যায়ে পুলিশ মারধর করে তাঁর পুরো শরীর থেঁতলে দেয়। এরপর তাঁকে নিয়ে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসিমসহ পুলিশের সদস্যরা পরমতলা গ্রামের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর বাড়ির লোকজন সড়কে ব্যারিকেড দেন ও বিক্ষোভ করেন। তখন পুলিশ আবুল কালাম আজাদকে নিয়ে ভিন্ন পথে পার্শ্ববর্তী দারোরা ইউনিয়ন ও জাহাপুর ইউনিয়নে নিয়ে যায়। এক ঘণ্টা বিভিন্ন ইউনিয়নে আটকে রাখার পর দুপুর সাড়ে ১২টায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে এলাকাবাসী অবরোধ তুলে নেন।
নির্বাচনে আবুল কালাম আজাদ ৭০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তবে তাঁর সমর্থকদের বাধার ঘটনায় ৩১ জানুয়ারি রাত ১২টা ১০ মিনিটে মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আহাদ বাদী হয়ে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা এক হাজার থেকে দেড় হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ পরমতলা গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী ফুল মিয়াকে (৫৫) গ্রেপ্তার করে। তাঁর নাম মামলার এজাহারে নেই। তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এই মামলার পর পরমতলা গ্রামের বাসিন্দারা পালিয়ে থাকছেন। কোনো বাড়িতে নারী আছে, পুরুষ নেই। কোনো বাড়িতে পুরুষ-নারী কেউই নেই।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পরমতলা গ্রামে দেখা গেছে, বাচ্চু মিয়া, মিজানুর রহমান ও গোলাম মোস্তফার বাড়িতে বসতঘরে তালা দেওয়া। নির্বাচনের দিন বিকেল থেকে পলাতক তাঁরা। ঘরে তালা ঝুলছে। বাজারেও নীরবতা। অন্তত তিনজন গ্রামবাসীর ভাষ্য, আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীকে নির্বাচনে জেতাতে ওসি এই কাজ করেন।
নির্বাচনে আবুল কালাম আজাদ ৭০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তবে তাঁর সমর্থকদের বাধার ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা এক হাজার থেকে দেড় হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া ফুল মিয়ার স্ত্রী জমিলা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী পরমতলা বাজারের শুঁটকি ব্যবসায়ী। তিনি রোগী মানুষ। কারাগারে মরে যাবে। আমার স্বামীর মুক্তি চাই।
পরমতলা গ্রামের মারিয়া আক্তার বলেন,২ ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটায় পুলিশ আমার ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। আমার দুই মাসের বাচ্চা নিয়ে ঘরে ছিলাম। আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। পরে চিত্কার করলে আর নিতে পারেনি।
নির্বাচনের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ পুলিশের নির্যাতনের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন।
পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন,পুরো শরীরে নির্যাতনের ক্ষত। ২০১১ সালে চেয়ারম্যান হয়েছি। ২০১৬ সালে আমাকে হারানো হয়। এবারও ৭০ ভোটে ফেল দেখানো হয়। ভোটের দিন আমাকে মারধর হেনস্তা করা হয়। আমাকে আটক করে তিনটি ইউনিয়নে নিয়ে ঘোরেন মুরাদনগরের ওসি। এখন ওসির ভয়ে এলাকার মানুষ থাকতে পারে না ঘরে।’
জানতে চাইলে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসিম বলেন, ভিডিও ফুটেজ ও সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখে ফুল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। চেয়ারম্যানকে ভোটের দিন আটকের পর ছেড়ে দেওয়া হয়। কী কারণে আটক করলেন প্রশ্ন করলে কোনো জবাব দেননি ওসি। তিনি বলেন, মামলার আসামি গ্রেপ্তার করতে পুলিশ গ্রামে যাচ্ছে।
এ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের সাংসদ ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের ব্যক্তিগত কর্মী মো. আবদুল কাদির। তবে সাংসদের নিজ কেন্দ্র ভুবনঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে তিনি জয় পাননি।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page