মোঃ মনোয়ার হোসেন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
দেশে করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এজন্য সারাদেশের ন্যায় চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। গতকাল রোববার সরেজমিন পরিদর্শন করে মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ছাতিয়ানী আদর্শ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী হওয়ায় গত বছরের ১৭ মাস থেকে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। ধাপে ধাপে কয়েকবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির মেয়াদ চলতি বছরের আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গত ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ড. দিপু মণি ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রায় দেড় বছরেরও বেশি দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর এবার খুলে দেওয়ার এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শতভাগ টিকার আওতায় আনা যায়নি। ফলে তাদের করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানানোসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে সরকারের প্রস্তুতি কতটা রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন জনস্বাস্থ্যবিদ, শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা। তবে বেশিরভাগ শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এখনও টিকার আওতায় আসেনি।
এ ব্যাপারে হাজারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেদ বিন গফুর মজুমদার বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে আমাদেরকে সব সময় তদারকি করছে। ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমাদেরকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে আমরাও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এছাড়াও পরবর্তীতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
ছাতিয়ানী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ মামুনুর রহমান বলেন, এতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অ্যাসাইনমেন্ট প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আমাদের সার্বিক প্রস্ততি রয়েছে। এরমধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কসহ স্বাস্থ্যবিধির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কামরুল আলম মোল্লা ও সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম পন্ডিতের উদ্যোগে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাকিনা বেগম বলেন, বিদ্যালয় খোলার জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে শ্রেণী কক্ষ পরিস্কারসহ শিশুদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় পরিচালনা কর্তৃপক্ষ শিশুদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এছাড়া ২-৩ দিনের মধ্যে সবগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে আরও সচেতনতা বাড়াতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোভিড-১৯ এর কারণে শিক্ষার্থীদের যে পরিমাণ পড়ালেখার ক্ষতি হয়েছে, সে ঘাটতি পূরণে করণীয় সম্পর্কে ক্লাস্টারে শিক্ষকদের নিয়ে কর্মশালা অব্যাহত আছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু তৈয়ব হোসেন বলেন, গত ৩১ আগস্ট সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে উপজেলায় একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্কার ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর শিব প্রসাদ দাস গুপ্ত বলেন, কলেজ খোলার বিষয়ে আমরা সরকারি কোন পরিপত্র পাইনি। তবে যে কোন সময় খোলার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া আছে এবং অ্যাসাইমেন্ট কাজ অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মঞ্জুরুল হক বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর মৌখিক নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলার সকল প্রতিষ্ঠান খোলার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারপরও পরিপত্র পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page