ফয়সাল মিয়া, কুবি।।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সন্ধ্যা বা রাতের বেলায় দাঁড়ালে চুম্বকের মতো আকর্ষণ অনুভূত হয়। কাজ না থাকলেও একাডেমিক ভবনের চারপাশ ঘুরে আসতে ইচ্ছে হয়। সারাটা দিন ক্যাম্পাসে থাকলেও এ ইচ্ছার কারণ রয়েছে। সেটি হচ্ছে, ক্যাম্পাস ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ভিন্ন সময়ে ভিন্ন রকম সুন্দর দেখায়। প্রতিটি গাছ নতুন মায়ার সৃষ্টি করে। দিন শেষে সন্ধ্যা নেমে এলেও কোন কোন দিন দেখাই মেলে না শীতকালের বহু আকাঙ্ক্ষিত সূর্য্য মামার।
সেই সময়ই চলে এসেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঋতুচক্রে ক্যালেন্ডারের পাতায় এখনও হেমন্তের ছোঁয়া। এক পশলা বৃষ্টির পানি কুবিতে এনে দিয়েছে ঘন কুয়াশার শীত। ঝরে পড়ছে হলদে সবুজ পাতা, কাক ডেকে যায় হাক ছেড়ে। পাখির কিচির শব্দে ভরে উঠে চারপাশ। এপাশ থেকে ওপাশে ছুটে চলে বুড়ো শালিকের দল। কৃষ্ণচূড়ার ডালে ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে হুতুম প্যাঁচা।
এমন অমলিন সৌন্দর্যের সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে রংহীন ক্যাম্পাসে একটু রঙের ছোঁয়া লাগাতে। ঝরা পাতা সরিয়ে তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় হলুদ গাঁদা, ডালিয়া আর শিউলি ফুলে ভরে উঠে ক্যাম্পাস। তবে যত শীতই হোক না কেন বেলা বাড়তেই শিক্ষার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা উৎসবমুখর পদচারণায় ক্যাম্পাস যেন আবারও প্রাণ ফিরে পায়। গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে যখন ওরা আড্ডায় মেতে উঠে, তখন মনে হয় যেন শীতের বুড়িকে ওরা উপহাস করছে।
কুয়াশার চাদর ভেদ করে সূর্য মামা যখন পৃথিবীতে উকি দেয়, তখন যেন ঝলমল করে উঠে পুরো ক্যাম্পাস। শিশিরভেজা দূর্বাঘাসে নরম রোদের ছোঁয়া লাগতেই নতুন করে জেগে উঠে শিক্ষার্থীদের প্রাণ। অনেকে নিজের শরীরকে আরেকটু ঝালিয়ে নিতে বের হন ব্যায়াম করতে। অনেকে আবার মেতে উঠেন খেলাধুলায়।
ঋতুচক্রে অন্য পাঁচটি ঋতু হতে ক্যাম্পাসে শীতকাল ধরা দেয় আলাদাভাবে। রুক্ষতা, তিক্ততা ও বিষাদের প্রতিমূর্তি হয়ে আসে শীত। প্রকৃতি হয় বিবর্ণ, বিরাজ করে রুক্ষতা। অধিকাংশ গাছের পাতা ঝরে পড়তে থাকে। কুয়াশাচ্ছন্ন সমগ্র প্রকৃতি, শিশিরসিক্ত রাস্তাঘাট কিংবা হিমেল বাতাস নিয়ে আসে ভিন্ন রূপ। কর্মমুখর প্রকৃতি যেনো থমকে দাঁড়ায়।
শীতের সকালের কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় সবকিছু জড়সড় হয়ে আসে। সামনের কোন কিছুই দেখতে পাওয়া যায় না। সবকিছু যেনো অস্পষ্ট মনে হয়। কখনো কখনো কুয়াশার স্তর এত ঘন থাকে যে, দেখলে মনে হয় সামনে কুয়াশার পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় হাজারো পাখির আগমন ঘটে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে। শীতের আগে থেকেই তারা আসতে শুরু করে। তাদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় পুরো বিশ্ববিদ্যালয়।
এক সকালে ঘুরতে ক্যাম্পাসে কথা হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শিহাব আহম্মদ জানান, ” কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতের সকাল যেন এক অন্য রকমের আবেগময় উৎসব। চারপাশে ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো সকাল, গা ছুঁয়ে যাওয়া ঠাণ্ডা বাতাসে। কুয়াশায় মোড়ানো প্রকৃতি, উষ্ণ চা, আর শীতের পিঠাপুলির সঙ্গে বন্ধুদের আড্ডা ক্যাম্পাসে এনে দেয় এক অপূর্ব প্রাণের স্পন্দন। হলগুলোর শিক্ষার্থীদের জীবনযাপনেও শীতের প্রভাব স্পষ্ট। সকালের কুয়াশা ভেদ করে ক্লাসে যাওয়ার জন্য তারা গরম পোশাকে আবৃত থাকে। রাতে হলে গল্পের আসর কিংবা গরম চায়ের কাপে জমে ওঠে আড্ডা। শীতের এই আমেজ শিক্ষার্থীদের মন ও মননে ছড়িয়ে দেয় এক অনন্য সুখানুভূতি।”
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page