এ আর আহমেদ হোসাইন, দেবীদ্বার প্রতিনিধি।।
গত ৭২ ঘন্টার মধ্যে বুধবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত দুই দফায় ১৮ ঘন্টা অক্সিজেন সরবরাহ হলেও বাকী ৫৪ ঘন্টা দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১০ বেডের করোনা ইউনিটের সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিষ্টেম বন্ধ ছিল।
সরকারী হাসপাতালের সাথে অক্সিজেন রিফিলের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে ‘স্পেক্টা’ কোম্পানীর সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকায় তাদের সময়মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের উপর রোগীদের জীবন-মরন ভাগ্য নির্ভর করছে। গত ৭২ ঘন্টার মধ্যে দু’দফায় ৩টি করে মাদার সাইজের ৫০ লিটারের ৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়েছে।
অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ থাকায় রোগী ও রোগীদের স্বজনদের মধ্যে চলছে হাহাকার। বিত্তবানরা তাদের রোগী বাঁচাতে আলাদা অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে এবং ভাড়ায় আনলেও সাধারন দরিদ্র রোগীদের স্বজনরা ভোর থেকেই একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার পেতে হন্য হয়ে ঘুরছেন দিকবিদ্বিক।
তার কারন হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগের অব্যবস্থাপনাকে এবং সঠিক নজরধারীর অভাবেই এমনটা হচ্ছে বলে দাবী রোগী ও রোগীর স্বজনদের। কেউ কেউ ব্যাক্তি ও বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিস থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করছেন।
অক্সিজেন সরবরাহের বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন স্পেক্টা কোম্পানী কর্তৃক রিফিল করা অক্সিজেন সিলন্ডার যথাসময়ে সরবরাহ করতে পারছেননা অপরদিকে স্পেক্টা কোম্পানী কুমিল্লা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক বলছেন ওনারা রিফিলকরা অক্সিজেন সিলিন্ডার সময় মতো নিচ্ছেননা। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহকৃত প্রতিষ্ঠান ‘স্পেক্টা’ কোম্পানীর কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে অব্যববস্থাপনারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আহাম্মেদ কবির বলেন, আমাদের সরকারী হাসপাতালের অক্সিজেন রিফিলের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে ‘স্পেক্টা’কোম্পানীর সাথে চুক্তিবদ্ধ। রিফিলকরা অক্সিজেন সিলিন্ডারগুরো সময়মতো না দিলে আমরা কি করতে পারি ? এছাড়া ষ্পেক্টা’র বাহিরে আমাদের রিফিল করারও কোন নিয়ম নেই। আজ (শনিবার) সকাল ৮টা থেকে আমাদের ষ্টোরকিপার স্পেক্টা কোম্পানী কুমিল্লা কার্যালয়ে উপস্থিত থেকে বেলা দেড়টায় ৬টি মাদার সাইজের এবং ৪টি মাঝারি সাইজের সিলিন্ডার সহ ১০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রিসিভ করেছেন। এগুলো নিয়ে দেবীদ্বার পৌঁছালে করোনা সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিষ্টেমে চালু করা হবে, তবে রোগীদের বিকেল ৪টার আগে অক্সিজেন সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
এঅবস্থায় আমাদের ৫০ লিটারের মাদার সাইজের ৩০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন, সেখানে ৫০ লিটারের মাদার সাইজের ৬টি আছে সরকারী আর ব্যাক্তি ও সংগঠনের পক্ষে দানকরা আরো ১৪টি সহ মোট ২০টি আছে। এছাড়া মাঝারি সিলিন্ডার ৪টি এবং ছোট সিলিন্ডার নন কোভিড রোগীদের জন্য আছে ৩০টি। বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার আরো প্রয়োজন ১০টি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আহাম্মেদ কবির শনিবার বিকেল ৩টায় সেল ফোনে এসব তথ্য জানিয়ে আরো বলেন, আজ বিভিন্ন পত্রিকায় দেবীদ্বার করোনা ইউনিটে অক্সিজেন সংকট নিয়ে একটি সংবাদ ছাপা হওয়ার কারনে এখন থেকে আশা করি নিয়মিতই রিফিলকরা অক্সিজেন সরবরাহ পাব।
অপরদিকে শনিবার সকাল ১১টায় ‘স্পেক্টা’ কোম্পানীর কুমিল্লা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক তাওহিদুর রহমান স্বজল’র সাথে সেল ফোন কথা বলার সময় রিফিলকরা অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের বিলম্বের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ব্যাস্থাপক জানান, কুমেক হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল সহ সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খালি অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করে রিফিল করার একদিন পরই কুমিল্লা কার্যালয় থেকে সরবরাহ করে থাকি। দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকজন রিফিল করা সিলিন্ডার সময়মতো নিতে না আসলে সে দায়ভার আমাদের নয়, তবে গত ঈদের আগে এবং পড়ে পরিবহন সংকটে সময়মতো সরবরাহ করতে পারেননি বলেও তিনি জানান। এরই মধ্যে ৩ ও ৫ আগষ্ট অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করেছেন বলেও জানান।
করোনা ইউনিটের ভর্তিকৃত রোগীর স্বজনরা জানান, গত ৭২ঘন্টার মধ্যে ৫৪ঘন্টাই ১০বেডের করোনা ইউনিটের সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিষ্টেম বন্ধ ছিল, এছাড়া আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ থাকার পর বিকেল ৪টায় করোনা ইউনিটের রোগীরা অক্সিজেন সরবরাহ পেয়েছেন।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page