০৯:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কুমিল্লা সাবেক-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ; যান চলাচল বন্ধ কুমিল্লায় মসজিদে নামাজরত যুবককে ছুরিকাঘাত: অভিযুক্ত ২ জন গ্রেপ্তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাস খালে, একই পরিবারের ৭ জন নিহত যারা নিজেদের স্বার্থে জনগণকে বঞ্চিত করে, তাদের বিএনপিতে ঠাঁই নেই -ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক শাহরাস্তিতে গণঅভ্যুত্থান দিবসের র‍্যালিতে অংশ নিতে এসে যুবদল নেতার মৃত্যু চৌদ্দগ্রামে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে জামায়াতের গণমিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত বিএনপি এক-তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে জয় লাভ করবে: ড. খন্দকার মারুফ হোসেন বুড়িচংয়ে মসজিদে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় আসামী গ্রেপ্তারের দাবীতে মানববন্ধন দাউদকান্দিতে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জামায়েত ইসলামীর গণমিছিল দাউদকান্দিতে শহীদদের সমাধিতে প্রশাসনের পুষ্পস্তবক অর্পণ

চৌদ্দগ্রামে বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি কাজে বন্ধ হয়ে গেছে কবরস্থানের পথ

  • তারিখ : ০৩:৪৮:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১
  • 2

মনোয়ার হোসেন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কনকাপৈত ইউনিয়নের করপাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের অজুহাতে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরনো একটি পারিবারিক কবরস্থানের যাতায়াত পথ। এতে আগামীদিনে ওই পরিবার বা একই গ্রামের কেউ মৃত্যুবরণ করলে কবরস্থানটিতে লাশ দাফনের জন্য কিভাবে বা কোন পথে নিয়ে যাবে তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছে তারা।

জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় সরকারিভাবে বিদ্যালয়ের চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণ কাজ চলমান অবস্থায় কবরস্থানটিতে যাওয়ার আর কোনো বিকল্প রাস্তা না থাকায় কবরস্থানের জমিনদাতা ও স্থানীয়দের অনুরোধে উল্লেখিত কবরস্থানটিতে যাতায়াতের জন্য বিদ্যালয় আঙ্গিনার পশ্চিম অংশে অবস্থিত নতুন ভবনের (অফিস কক্ষ) উত্তর পাশে একটি পকেট গেইট রাখার সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নির্মাণ কাজের শেষের দিকে এসে হঠাৎ করে কার ইশারায় যেন আগের সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে আসে এবং পকেট গেইটটি বন্ধ করে দেয়াল নির্মাণ করে নেয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে। এজন্য সবাই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ ম্যানেজিং কমিটির সকলকে দুষছেন।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ১৯৭০ সালে স্থানীয় (করপাটি বেপারী বাড়ীর) আব্দুল আজীজ সওদাগর বিদ্যালয়ের জন্য ৩৪ শতক জায়গা দান করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কয়েক মেয়াদে তিনি বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। এছাড়া জমিনদাতা হিসেবে তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আজীবন দাতা সদস্য। বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের জমিনের মালিক তারই আপন চাচাতো ভাই মৃত জন্তুর আলীর ছেলে মরহুম রফিকুল ইসলাম। মরহুম রফিকুল ইসলাম স্থানীয় বীর মুক্তিদ্ধো মোবারক মিয়া, সাবেক মেম্বার মরহুম একরামুল হক গেদু ও মরহুম মাস্টার দেলোয়ার হোসেনের আপন চাচাতো ভাইয়ের ছেলে এবং প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা সৌদি প্রবাসী আবুল খায়ের বেপারীর চাচাতো ভাই। তারা সকলে উদ্যোগ নিয়ে পারিবারিক সিদ্ধানে ওই জমিনের কিছু অংশ কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার করছেন দীর্ঘবছর ধরে। স্থানীয়দের মধ্যে যাদের কবরস্থান নেই তাদের অনেককেই এখানে দাফন করা হয়েছে। এখনও কবরস্থানটি সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ চাইলেই এখানে তার পরিবারের লোকজনের দাফন কাজ সম্পন্ন করতে পারবে বিনা বাধায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকেই বলেন, দীর্ঘদিনের একটি পারিবারিক কবরস্থানে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ হীন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। যে পরিবারটি বিদ্যালয়ের জমিনদাতা তাদেরই পারিবারিক কবরস্থানের পথ বন্ধ করে দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ আসলে কি করতে চাইছে? এই প্রশ্নই এখন সবার মুখে মুখে। কবরস্থানের সঙ্গে ধর্মীয় এবং আবেগের বিষয় জড়িত। সেখানে কেন এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত? স্থানীয়রা এখন উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিকে চেয়ে আছেন। দায়িত্বশীলরা কি করেন তা দেখার অপেক্ষায় গ্রামবাসী।

এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ প্রকল্পে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানুয়ালে পকেট গেইট রাখার কোনো সুযোগ নাই। এছাড়া অফিসিয়ালভাবেও আমরা এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশ না পাওয়াতে পকেট গেইটটি রাখা সম্ভব হয়নি’।

এবিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো: আব্দুল মান্নান রতন বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী ও এলজিইডি’র ডিজাইন অনুযায়ী সীমানা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার সুযোগ নেই’।

এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো: মিজানুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা অফিসার এর নির্দেশনা অনুযায়ী এলজিইডি অনুমোদিত ডিজাইনের আলোকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। সাধারণত ডিজাইনগুলো বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনের নিরীখেই তৈরী করা হয়। এলজিইডি’র ডিজাইন করার পূর্বে গ্রামবাসী এ ব্যাপারে আবেদন করলে হয়তো ডিজাইনটা তখন সেভাবেই তৈরী করা হতো’।

চৌদ্দগ্রামে বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি কাজে বন্ধ হয়ে গেছে কবরস্থানের পথ

তারিখ : ০৩:৪৮:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১

মনোয়ার হোসেন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কনকাপৈত ইউনিয়নের করপাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের অজুহাতে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরনো একটি পারিবারিক কবরস্থানের যাতায়াত পথ। এতে আগামীদিনে ওই পরিবার বা একই গ্রামের কেউ মৃত্যুবরণ করলে কবরস্থানটিতে লাশ দাফনের জন্য কিভাবে বা কোন পথে নিয়ে যাবে তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছে তারা।

জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় সরকারিভাবে বিদ্যালয়ের চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণ কাজ চলমান অবস্থায় কবরস্থানটিতে যাওয়ার আর কোনো বিকল্প রাস্তা না থাকায় কবরস্থানের জমিনদাতা ও স্থানীয়দের অনুরোধে উল্লেখিত কবরস্থানটিতে যাতায়াতের জন্য বিদ্যালয় আঙ্গিনার পশ্চিম অংশে অবস্থিত নতুন ভবনের (অফিস কক্ষ) উত্তর পাশে একটি পকেট গেইট রাখার সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নির্মাণ কাজের শেষের দিকে এসে হঠাৎ করে কার ইশারায় যেন আগের সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে আসে এবং পকেট গেইটটি বন্ধ করে দেয়াল নির্মাণ করে নেয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে। এজন্য সবাই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ ম্যানেজিং কমিটির সকলকে দুষছেন।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ১৯৭০ সালে স্থানীয় (করপাটি বেপারী বাড়ীর) আব্দুল আজীজ সওদাগর বিদ্যালয়ের জন্য ৩৪ শতক জায়গা দান করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কয়েক মেয়াদে তিনি বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। এছাড়া জমিনদাতা হিসেবে তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আজীবন দাতা সদস্য। বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের জমিনের মালিক তারই আপন চাচাতো ভাই মৃত জন্তুর আলীর ছেলে মরহুম রফিকুল ইসলাম। মরহুম রফিকুল ইসলাম স্থানীয় বীর মুক্তিদ্ধো মোবারক মিয়া, সাবেক মেম্বার মরহুম একরামুল হক গেদু ও মরহুম মাস্টার দেলোয়ার হোসেনের আপন চাচাতো ভাইয়ের ছেলে এবং প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা সৌদি প্রবাসী আবুল খায়ের বেপারীর চাচাতো ভাই। তারা সকলে উদ্যোগ নিয়ে পারিবারিক সিদ্ধানে ওই জমিনের কিছু অংশ কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার করছেন দীর্ঘবছর ধরে। স্থানীয়দের মধ্যে যাদের কবরস্থান নেই তাদের অনেককেই এখানে দাফন করা হয়েছে। এখনও কবরস্থানটি সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ চাইলেই এখানে তার পরিবারের লোকজনের দাফন কাজ সম্পন্ন করতে পারবে বিনা বাধায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকেই বলেন, দীর্ঘদিনের একটি পারিবারিক কবরস্থানে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ হীন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। যে পরিবারটি বিদ্যালয়ের জমিনদাতা তাদেরই পারিবারিক কবরস্থানের পথ বন্ধ করে দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ আসলে কি করতে চাইছে? এই প্রশ্নই এখন সবার মুখে মুখে। কবরস্থানের সঙ্গে ধর্মীয় এবং আবেগের বিষয় জড়িত। সেখানে কেন এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত? স্থানীয়রা এখন উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিকে চেয়ে আছেন। দায়িত্বশীলরা কি করেন তা দেখার অপেক্ষায় গ্রামবাসী।

এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ প্রকল্পে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানুয়ালে পকেট গেইট রাখার কোনো সুযোগ নাই। এছাড়া অফিসিয়ালভাবেও আমরা এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশ না পাওয়াতে পকেট গেইটটি রাখা সম্ভব হয়নি’।

এবিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো: আব্দুল মান্নান রতন বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী ও এলজিইডি’র ডিজাইন অনুযায়ী সীমানা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার সুযোগ নেই’।

এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো: মিজানুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা অফিসার এর নির্দেশনা অনুযায়ী এলজিইডি অনুমোদিত ডিজাইনের আলোকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। সাধারণত ডিজাইনগুলো বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনের নিরীখেই তৈরী করা হয়। এলজিইডি’র ডিজাইন করার পূর্বে গ্রামবাসী এ ব্যাপারে আবেদন করলে হয়তো ডিজাইনটা তখন সেভাবেই তৈরী করা হতো’।