০২:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বুড়িচংয়ে যুবলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন আটক কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যু কুবিতে রোটার‍্যাক্ট ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত হতে যাচ্ছে ‘ক্যারিয়ার বিফোর ডিগ্রি’ কৃষি কর্মকর্তার ওপর হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লায় মানববন্ধন বুড়িচংয়ে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের দ্বিতীয় সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত কুমিল্লায় ব্যাংকে চেতনানাশক রুমালের ফাঁদ, ১ লাখ টাকাসহ রুমাল পার্টির সদস্য আটক ব্রাহ্মণপাড়ায় শিশু আরশির মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন, বড় বোন কারাগারে কুমিল্লায় মাহফিলে যাওয়ার ২ দিন পর মৎস্য ঘেরে মিলল যুবকের মরদেহ মুরাদনগরে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে হোম ভিজিটের নির্দেশ কুমিল্লায় ট্রাক-সিএনজি-অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ৫

মন ভালো নেই কুমিল্লার কামারপল্লী শ্রমিকদের

  • তারিখ : ০৮:৩৫:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ জুন ২০২৩
  • 35

রুবেল মজুমদার।
হাপরের টানে কয়লার চুলায় দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে আগুন। জ্বলে ওঠা আগুনের ফুলকিতে লোহাও হয়ে ওঠে সূর্যবর্ণ। দগদগে গরম লোহায় দিন-রাত হাতুড়ি পেটানোর ঠুকঠাক শব্দে মুখর হচ্ছে কুমিল্লার নগরীর চকবাজারের চারপাশ। দুই দিন পর কোরবানীর ঈদ। অথচ এই সময়ে শ্রমিকদের দম ফেলার সময় ছিল না,কিন্তু নানা কারনে আলস সময় পার করছেন এ কামারপল্লীর চল্লিশটি পরিবার ।

রবিবার (২৫ জুন) বিকালে কুমিল্লা জেলার বৃহত্তর এ পল্লীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,পুরো পল্লীজুড়ে যেন সুনশান নীরবতা চলছে। নতুন না বানিয়ে পুরাতন যন্ত্রপাতিতে সান দিয়ে কাজ করবেন অনেকেই। পুরো পল্লীতে দুই একজন করে ক্রেতা আসছে দা, ছুরি, চাকু তৈরি করতে।

তবে অধিকাংশ ক্রেতা চলে যাচ্ছে বিদেশি আধুনিক যন্ত্রপাতির দোকানে। কর্মকারদোর দোকানে কাজ না থাকায় এ পল্লী অনেক কর্মকার এখন মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়েই পুরাতন যন্ত্রপাতিতে সান দিয়ে আসেন। তাই চকবাজারের এ কামার পল্লীতে এখন আর আগের মত মানুষ আসেন না।

চকবাজারের দশ বছর ধরে কাজ করেন তপন কর্মকার, তিনি বলেন, দাদার সময় থেকেই এ কাজ করছি।দাদাও ছিলেন এ পেশায়। দাদা মারা গেলেও এ পেশাকে রোজগারের মাধ্যম হিসেবে ধরে রেখেছি। পাচ জনের সংসারটা পুরোই আমি চালায়।

কয়েক বছর ধরে এ পল্লীতে মানুষ আর আগের মতো আসে না। ভাবছি এবার ঈদে হয়তো বেচাকেনা ভালো হবে। ভগবান আমগো কপালে আর ভালো থাকা রাখলো না। শুনছি সরকার কত মানুষের উন্নয়ন করে, আমগো রে কি চোখে দেখে না ?।

এ পল্লীর সবচেয়ে প্রবীণ ব্যবসায়ী বলাই কর্মকার বলেন, ঈদ আসলে প্রতিবছর আমগো পল্লীতে কাম কাজ করে শেষ হয় না, খাওয়ার সময়টা পর্যন্ত পাই না,কোরবানির ঈদের দিন পর্যন্ত আমগো কাম চলতো। এবছর দৃশ্যপট বদলে গেছে।

কাজের চাপ নাই, দুই-একটা ক্রেতা মাঝে মাঝে আসে, তাই এখনো বসে আছি। সারা দিনে পুরাতনো যন্ত্রপাতির সান দিয়া ২৭০ টাক পাইছি। আপনারা বলেন সংসার কেমনে চালায়।

এ পল্লীতে আশেপাশে কয়েকজন স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লা শহর ও এর আশপাশের এলাকার মানুষজন ছুরি, বটি, দা, টাক্কল কিনতে ও শান দিতে এখানে ভিড় জমাতেন। তবে ঈদকে সামনে রেখে কামার পল্লীতে ক্রেতাদের ভিড় তেমন একটা চোখে পড়েনি পড়েনা কয়েক বছর ধরে। অল্প কয়েকজন ক্রেতা আসছেন, তাদের কেউ কেউ ছুরি-বটি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে এসেছেন পুরনো দা ছুরি শান দেওয়ার জন্য।

এদিকে কামার পাড়ায় ছুরি, বটি কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতা বলেন, আগের তুলনায় দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। এরচেয়ে অল্প দামে দুই কম দামে প্লাস্টিক বা চাইনিজ যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়। মানুষ কম দামে পশু জবাই যন্ত্রপাতি পাওয়ায়,লোহার যন্ত্রপাতির তেমনটা কিনতে চাই না।

এই পল্লী ব্যবসায়িক সুজন কর্মকার বলেন, আগে এক বস্তা কয়লার দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা থাকলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ টাকা। এ ছাড়াও লোহার দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। আগে মানুষ নিজেরাই নিজেদের কোরবানির পশু জবাই ও কাটার কাজ করতেন। এখন তা করে দিচ্ছে পেশাদার কসাইরা। তাই অনেকে দা-বটি কিনছেনই না।

এ বিষয়ে কুমিল্লা সমাজ কল্যান অধিদপ্তরের উপ পরিচালক জেড এম মিজানুর খান বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে কর্মকার দের আমরা আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি। প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে। আগামীতে যেকোনো সম্প্রদায়কে টিকি রাখার জন্য সরকারি যে কোন প্রকল্প আসলে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো।

error: Content is protected !!

মন ভালো নেই কুমিল্লার কামারপল্লী শ্রমিকদের

তারিখ : ০৮:৩৫:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ জুন ২০২৩

রুবেল মজুমদার।
হাপরের টানে কয়লার চুলায় দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে আগুন। জ্বলে ওঠা আগুনের ফুলকিতে লোহাও হয়ে ওঠে সূর্যবর্ণ। দগদগে গরম লোহায় দিন-রাত হাতুড়ি পেটানোর ঠুকঠাক শব্দে মুখর হচ্ছে কুমিল্লার নগরীর চকবাজারের চারপাশ। দুই দিন পর কোরবানীর ঈদ। অথচ এই সময়ে শ্রমিকদের দম ফেলার সময় ছিল না,কিন্তু নানা কারনে আলস সময় পার করছেন এ কামারপল্লীর চল্লিশটি পরিবার ।

রবিবার (২৫ জুন) বিকালে কুমিল্লা জেলার বৃহত্তর এ পল্লীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,পুরো পল্লীজুড়ে যেন সুনশান নীরবতা চলছে। নতুন না বানিয়ে পুরাতন যন্ত্রপাতিতে সান দিয়ে কাজ করবেন অনেকেই। পুরো পল্লীতে দুই একজন করে ক্রেতা আসছে দা, ছুরি, চাকু তৈরি করতে।

তবে অধিকাংশ ক্রেতা চলে যাচ্ছে বিদেশি আধুনিক যন্ত্রপাতির দোকানে। কর্মকারদোর দোকানে কাজ না থাকায় এ পল্লী অনেক কর্মকার এখন মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়েই পুরাতন যন্ত্রপাতিতে সান দিয়ে আসেন। তাই চকবাজারের এ কামার পল্লীতে এখন আর আগের মত মানুষ আসেন না।

চকবাজারের দশ বছর ধরে কাজ করেন তপন কর্মকার, তিনি বলেন, দাদার সময় থেকেই এ কাজ করছি।দাদাও ছিলেন এ পেশায়। দাদা মারা গেলেও এ পেশাকে রোজগারের মাধ্যম হিসেবে ধরে রেখেছি। পাচ জনের সংসারটা পুরোই আমি চালায়।

কয়েক বছর ধরে এ পল্লীতে মানুষ আর আগের মতো আসে না। ভাবছি এবার ঈদে হয়তো বেচাকেনা ভালো হবে। ভগবান আমগো কপালে আর ভালো থাকা রাখলো না। শুনছি সরকার কত মানুষের উন্নয়ন করে, আমগো রে কি চোখে দেখে না ?।

এ পল্লীর সবচেয়ে প্রবীণ ব্যবসায়ী বলাই কর্মকার বলেন, ঈদ আসলে প্রতিবছর আমগো পল্লীতে কাম কাজ করে শেষ হয় না, খাওয়ার সময়টা পর্যন্ত পাই না,কোরবানির ঈদের দিন পর্যন্ত আমগো কাম চলতো। এবছর দৃশ্যপট বদলে গেছে।

কাজের চাপ নাই, দুই-একটা ক্রেতা মাঝে মাঝে আসে, তাই এখনো বসে আছি। সারা দিনে পুরাতনো যন্ত্রপাতির সান দিয়া ২৭০ টাক পাইছি। আপনারা বলেন সংসার কেমনে চালায়।

এ পল্লীতে আশেপাশে কয়েকজন স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লা শহর ও এর আশপাশের এলাকার মানুষজন ছুরি, বটি, দা, টাক্কল কিনতে ও শান দিতে এখানে ভিড় জমাতেন। তবে ঈদকে সামনে রেখে কামার পল্লীতে ক্রেতাদের ভিড় তেমন একটা চোখে পড়েনি পড়েনা কয়েক বছর ধরে। অল্প কয়েকজন ক্রেতা আসছেন, তাদের কেউ কেউ ছুরি-বটি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে এসেছেন পুরনো দা ছুরি শান দেওয়ার জন্য।

এদিকে কামার পাড়ায় ছুরি, বটি কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতা বলেন, আগের তুলনায় দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। এরচেয়ে অল্প দামে দুই কম দামে প্লাস্টিক বা চাইনিজ যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়। মানুষ কম দামে পশু জবাই যন্ত্রপাতি পাওয়ায়,লোহার যন্ত্রপাতির তেমনটা কিনতে চাই না।

এই পল্লী ব্যবসায়িক সুজন কর্মকার বলেন, আগে এক বস্তা কয়লার দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা থাকলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ টাকা। এ ছাড়াও লোহার দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। আগে মানুষ নিজেরাই নিজেদের কোরবানির পশু জবাই ও কাটার কাজ করতেন। এখন তা করে দিচ্ছে পেশাদার কসাইরা। তাই অনেকে দা-বটি কিনছেনই না।

এ বিষয়ে কুমিল্লা সমাজ কল্যান অধিদপ্তরের উপ পরিচালক জেড এম মিজানুর খান বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে কর্মকার দের আমরা আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি। প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে। আগামীতে যেকোনো সম্প্রদায়কে টিকি রাখার জন্য সরকারি যে কোন প্রকল্প আসলে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো।