শান্তনু হাসান খান (বিশেষ প্রতিনিধি)
কুমিল্লার বি-পাড়া ও বুড়িচং উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধে ভারেল্লা (উঃ) ইউনিয়নের বর্তমান নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানজ রব চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। এই নিয়ে তার ৩ মেয়াদের জনপ্রতিনিধি। আগামী নির্বাচনে তিনি পুনরায় সরকারি দল থেকে প্রার্থিতা চাইবেন। তবে সাধারন মানুষদের মনোভাবটা একটু পরিবর্তন হয়েছে। বিগত দিনে দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখাতে পারেননি বলে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মন্তব্য করেন। আগামী নির্বাচনে দুজন জোরালো প্রার্থী রয়েছেন এখানে। সাবেক ছাত্র নেতা মাসুদুজ্জামান মাসুম ও প্রয়াত মন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু’র ভাগিনা এডভোকেট মোঃ ইস্কান্দর আলী ভূইয়া আমীর। দুজনই সমানভাবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
৪৪ বছরের মাসুদুজ্জামান মাসুম এই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ভোটার। বেড়ে উঠেছেন এ জনপদে। জনগণের সাথে সম্পৃক্ত দীর্ঘদিনের। তার বাবা মজিবুর রহমান বুড়িচং আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল অব্দি কংশনগর বাজারের দোকানে আওয়ামীলীগের অফিস চলতো। তারই সন্তান এই মাসুম। পড়াশুনা ভিক্টোরিয়া কলেজে। ইন্টার সেকশানে ১৯৯৩ সালে সমাজকল্যাণ সম্পাদকের পদ দিয়ে তার রাজনীতি শুরু। এরপর বুড়িচং থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি শেষে যুবলীগের রাজনীতি শুরু করেন। ২০১৫ থেকে ২০১৯ইং পর্যন্ত আওয়ামীলীগের এডহক কমিটিতে সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, আমার অতীতের পলিটিকেল ক্যারিয়ার ও এলাকার সাধারণ মানুষদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনা করে সিলেকশন কমিটি তথা আমার প্রিয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইনশাল্লাহ আমাকে দল থেকে নমিনেটেড করবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর সে বিশ্বাসের উপর ভর করে আমি নির্বাচনের মাঠকে গুছিয়ে রেখেছি। এখানে যে কোন প্রার্থীকে ডিঙ্গিয়ে আমি ইনশালাহ বিপুল ভোটে জয়লাভ করতে পারবো।
মাসুম আরো বলেন, নির্বাচিত হলে কংশনগর বাজারসহ প্রতিটি ওয়ার্ডকে উন্নয়নের কর্মসূচি গ্রহণ করবো সবাইকে সমন্বয় করে। তিনি বলেন, বিগত বছর গুলোতে আঞ্চলিকতার প্রভাবের কারণে এ অঞ্চলে জোরালো কোন জনপ্রতিনিধি ভালো কাজ দেখাতে পারেননি। কুসুমপুর, পারুয়ারা কিংবা রামচন্দ্রপুর গ্রামগুলোতে উন্নয়নের ছোয়া খুব একটা ভালো না। তারপরেও ছিটে ফোটা যত উন্নয়নের কথা বলবো তা স্থানীয় সরকারের রুটিন ওয়ার্ক। তিনি আরো বলেন, কংশনগর বাজার একটি উন্নতমানের রাজস্ব আয়ের কেন্দ্রবিন্দু। দীর্ঘদিন এ বাজারকে কেহ ভালো উদ্যোগ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে ভালো কিছু দেখাতে পারেনি।
অপর প্রার্থী মাত্র ৩৯ বছরের ইস্কান্দার আলী ভূইয়া আমীর এবারের নির্বাচনে দলীয়ভাবে নমিনেটেড হবেন বলে বিশ্বাস করেন। পড়াশোনা করেছেন জাফরগঞ্জ স্কুল এবং কলেজে। এরপর ঢাকায়। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। মাঝখানে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। পেশাজীবি হলেও তিনি এলাকার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত দীর্ঘদিন। আর এই সুযোগটা পেয়ে যান তার মামা প্রয়াত এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু’র পৃষ্ঠপোষকতায়। তার বাবা মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা বশারত আলী ভূইয়া ৭১’র রণাঙ্গনের সৈনিক। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে তিনি একজন ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। জাতীয় পার্টির আমলে সেবার তাকে ঠকানো হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। অনেকগুলো কারণে তিনি কখনো রাজনীতির পোটফলিওতে পদপদবীর জন্য লালায়িত ছিলেন। কিন্তু এবার সমস্যা নিরসনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে চান। সাধারণ মানুষদের চাহিদা পুরণের জন্য আগামীতে কাজ করতে চান।
অনেকগুলো পজেটিভ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে বুড়িচং’র ৯টি ইউনিয়নের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিরবে জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। তবে এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের জন্য দলের সিনিয়র নেতা ও নীতি নির্ধারকদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন নিরবে। তবে শেষ অব্দি কার ভাগ্যে নৌকার টিকেট জুটবে- সেটা সময়ের ব্যাপার। উল্লেখ্য যে, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ভারেলা উত্তর দক্ষিণ, ময়নামতি ও মোকাম এ ৪টি হাইওয়ের পাশে বাকীগুলো গোমতীর ওপাড়ে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন ভারেল্লা ইউনিয়ন ২টি। একটি উত্তর আর একটি দক্ষিণ। তবে এখানে উত্তরের জন্য রব চেয়ারম্যান ছাড়া ২জন প্রার্থী মাঠে থাকতে চাইছেন। মাসুম ও ইস্কান্দার। সময়ই বলে দিবে কেন হবেন নৌকার কান্ডারী।
বুড়িচং ও বি-পাড়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন বর্তমান। আর এখানকার সাংসদ ছিলেন প্রয়াত আব্দুল মতিন খসরু এমপি। সাংসদের দিক নির্দেশনা ও পৃষ্টপোষকতায় যথেষ্ঠ উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে তার এলাকায়। এখানকার রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো উন্নয়নে যথেষ্ট দৃশ্যমান আব্দুল মতিন খসরুর আমল থেকেই।
বর্তমান এমপি এডভোকেট আবুল হাশেম সে ধারাবাহিকতা রক্ষার চেষ্টা করছেন। এখানকার সবকটি চেয়ারম্যান সরকার দলীয়। এদিকে বর্তমান নব-নির্বাচিত সাংসদ এডভোকেট আবুল হাসেম ও উপজেলার চেয়ারম্যানের দিক নির্দেশনায় আগামী দিনগুলোতে জননেত্রী শেখ হাসিনার আমার গ্রাম-আমার শহর প্রতিপাদ্যকে বাস্তবায়ন করার লক্ষে কাজ করার অভিমত প্রকাশ করেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী দুজন।
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিন পূর্বে পরবর্তী পরিষদের গ্রহণযোগ্যতা থাকে। আর সেই আলোকে কুমিল্লা ১৭ টি উপজেলার ৩১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যেই কুমিল্লার মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা পাঠিয়েছেন সি.ই.সি। এর মধ্যে লাকসাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ, মনোহরগঞ্জের ১১ টি ইউনিয়ন, লালমাই উপজেলা ১১ টি, দেবিদ্বারে ১৫ টি, বি-পাড়া ও বুড়িচং এ ১৭টি ও মুরাদনগরের ২২ অন্যতম।
এদিকে সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি ইতি মধ্যেই নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করেছেন। মার্চ থেকে শুরু করে জুন মাসের শেষ নাগাদ ধারাবাহিক ভাবে গত বারের মত ৫ ধাপে নির্বাচন শেষ করতে চান স্থানীয় মাঠ প্রশাসন। দেশে বর্তমানে ৪ হাজার ৫৭১ টি ইউনিয়ন পরিষদ বিদ্যমান। এর মাঝে লক্ষীপুর, ভোলা, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের ২০৬টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং স্থাগিত ১০৭টি ইউনিয়ন পরিূষদের নির্বাচন ইতিমধ্যে শেষ করেছেন। আগামী ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এর মাঝে তিতাস, মেঘনা ও লাকসাম উপজেলা।
এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এবার যারা মনোনয়ন প্রত্যাশি সবাই আওয়ামী দলীয় নেতা কর্মী। দীর্ঘ দিন যাবৎ এ এলাকার রাজনীতিবীদ ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আ.হ.ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) সাবেক রেল মন্ত্রী এডভোকেট মজিবুল হক। তাদের দিক নির্দেশনায় এবারের নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হবেন। তবে এখানকার বর্তমান এমপি এডভোকেট আবুল হাশেম কাকে রেখে কাকে দলীয় টিকেট দেবেন- তা নিয়ে ঝল্পনা কল্পনার শেষ নেই। ১৭টি ইউনিয়নের সকল প্রার্থীরাই মনে করেন তারা এমপির পছন্দের মানুষ। এই পছন্দের প্রার্থীতা বাছাই করতে তৃণমূলের নেতা কর্মীদের কাউন্সিল অধিবেশন কিংবা বর্ধিত সভার মধ্য দিয়ে দলীয় ভাবে নমিনেটেড করলে কোন বিদ্রোহী প্রার্থীর আগমন ঘটবে না। আর তাই ৪৪ বছরের মাসুদুজ্জামান মাসুম অভিমত প্রকাশ করে বলেন, আমি তৃণমূল থেকে উঠে এসেছি। জনগণের জন্য রাজনীতি করি। সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করেছি। আমার প্রিয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তার সকল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার জন্য আমি আগামীতে নিরলসভাবে কাজ করে যাবো। যদি এবার দল থেকে নমিনেটেড হতে পারি তাহলে ভারেল্লা (উঃ) কে ইউনিয়নে অত্যাধুনিক মডেল ডিজিটালাইজড ইউনিয়ন হিসেবে জনগণকে উপহার দিবো। মাসুদুজ্জামান মাসুম আরো বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবার তেমন কোন সুযোগ নেই। আমি নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নের পাশাপশি জননেত্রী শেখ হাসিনার এবারের প্রতিপাদ্য- “আমার গ্রাম-আমার শহর” বাস্তবায়িত করতে আমি ব্যক্তিগতভাবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page