নেকবর হোসেন।।
কুমিল্লায় তীব্র শীতে ঠান্ডাবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতাল গুলোতে। বিশেষ করে গত কয়েকদিনে প্রচ- কুয়াশা ও হাড়কাঁপানোর শীতের কারণে হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীদের ভিড় বেড়েছে। হাসপাতালের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারেও বাড়তি রোগী দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, মাঘের শুরুতে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েকদিনে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তীব্র শীতের এই সময়টাতে মৌসুমি জ্বরসহ শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া, সাইনোসাইটিস, টনসিলাইটিস, অ্যাজমা, অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেকে সাধারণ সর্দি-কাঁশি, ঠান্ডা-জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এরকম পরিস্থিতিতে শিশু ও বৃদ্ধদের সুস্থ রাখতে ধুলোবালি ও ঠান্ডা পরিবেশ থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গেলো কয়েকদিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে দেখা গেছে রোগীদের প্রচ- ভিড়। কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি বাইরের জেলা, উপজেলা থেকে অনেক অসুস্থতা নিয়ে রোগীরা আসছেন।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে কুমিল্লা সদর জেনারেল হাসপাতালের সামনে কথা হয় শিশু কোলে দাঁড়িয়ে থাকা আমেনা বেগম নামে এক নারীর সঙ্গে। দুই বছরের শিশু মিরাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন তিনি। আমেনা বেগম বলেন, ‘গত কয়েকদিন যাবত শীতের কারণে সর্দি ও কাশিতে ভোগছে মিরা । গ্রামের ওষুধের দোকান থেকে এন্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ খাওয়াইছি কিন্তু সর্দি ভালো হচ্ছে না। তাই আমি বড় ডাক্তার দেখানোর জন্য চান্দিনা থেকে কুমিল্লা সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।’
বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর থেকে আসিফ নামে তিন বছর বয়সের নাতিকে নিয়ে সদর জেনারেল হাসপাতালে এসেছেন আবদুল আলীম। তিনি জানান, অসুস্থতার পর প্রথমে বুড়িচংয়ে প্রাইভেটে ডাক্তার দেখিয়েছি। অনেক পরিক্ষা- নিরিক্ষার মাধ্যমে ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে। কিছুদিন ভালছিল বর্তমানে নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।’
লাকসাম থেকে ১৯ মাস বয়সী হাবিবা জান্নাতকে নিয়ে নগরীর বেসরকারি নিউ ভিশন হাসপাতালে এসেছেন তার মা আয়েশা খাতুন। তিনি জানান, গত ‘সাত-আটদিন ধরে ঠা-া, কাশি। গ্রামে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়াইছি, কিছুতেই কমছে না। এজন্য শহরের হাসপাতালে নিয়া আসছি।’
ঠান্ডার সঙ্গে পাতলা পায়খানার মতো ভিন্ন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে অনেক শিশুর। তিনি বলেন, ‘গত চার দিন ধরে রিমির জ্বর। পাশাপাশি রবিবার থেকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে। ডাক্তার দেখিয়ে বাসায়ই ওষুধ খাওয়াচ্ছিলাম। জ্বর কমে, আবার বাড়ে। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে পাতলা পায়খানা। এজন্যই এখানে আসা।
কুমিল্লা সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃএম.এ. করিম খন্দকার বলেন, শীত ও বায়ুদূষণজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। তাদের অনেকে আসছে সর্দি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, হাঁচি-কাশি নিয়ে। একটা অংশের তীব্র জ্বর, গলাব্যথা, কাশির উপসর্গ রয়েছে বলে জানান তিনি।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডাক্তার নাসিমা আক্তার বলেন, প্রচন্ড শীতের কারণে হাসপাতালে এখন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ রোটা ভাইরাস নিয়ে রোগীরা বেশি আসছেন। বেশি ঠা-া কারণে এটা হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও বাচ্চারা বেশি আসছেন, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। অধিক মাত্রায় শীতের এ সময়ে যতটা সম্ভব ঘরের ভেতর থাকা এবং শরীরকে সব সময় গরম রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি।
কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র ফার্মাসিস্ট মো. আনোয়ারুল করিম বলেন দৈনিক ১২শত হইতে ১৫০০ রোগীকে, ৫৫/৬০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয় এবং সকল এন্টিবায়োটিক ওষুধ ফুল কোর্স এবং অন্যান্য ওষুধ ক্ষেত্র বিশেষে এক বা দুই মাসের সরবরাহ করা হচ্ছে।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page